ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অগ্রন্থিত গল্প

সুরমা

আলাউদ্দিন আল আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১৭:১০, ২৮ আগস্ট ২০২০
সুরমা

অলঙ্করণ: মামুন হোসাইন

আকাশে মেঘেদের হুড়োহুড়ির যেন আর অন্ত নেই। বুনো হাতীর পালের মতো দক্ষিণ ক্ষেতে দলে দলে উঠে এসে খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে; চাপা আক্রোশে গরজায় মাটি কাঁপিয়ে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ-চমকানিতে অসাধু ইচ্ছার আচমকা দন্তবিকাশ। এরপর একটা সংঘবদ্ধ সংকল্পে ফেটে চৌচির হয়ে পড়ে; নদীনালা, গাছপালা, ঘড়বাড়ী, সবকিছু যেন উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায় পৃথিবীর অন্ধ আকর্ষণ থেকে।

একটু কষ্ট করলে এও সহ্যের সীমায়; কিন্তু এই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা কন্‌কনে হাওয়া তাতে না যায় বাইরে বেরুনো, না আসে হাতে কোন কাজ। খেয়ালী প্রকৃতি কারো আপত্তিতে কান দেবার নয়; হি হি বাতাস বয়েই চলে তুষারস্পর্শ শৈত্য নিয়ে। আমবন দুলিয়ে, ঘরের চাল নড়িয়ে সশব্দ দাপটে।

আবু নয়ীমের কাণ্ডটা এই হাওয়ার মতোই বয়ে গেল সমস্ত গ্রামের ওপর দিয়ে। কেউ কাঁপল। আড়মোড়া ভেঙে বসল কেউ।
শুভাকাঙ্ক্ষীরা তিরস্কার করল, আচ্ছা বলি, তুই মানুষ না গরু। অমন সোনার মতন বৌরে তুই তালাক দিলি। ছি! ছি!
তবু এক তালাক, দুই তালাক অইলেও জোড়াতালি দেওন যাইত। এক্কেবারে বাইন তালাক! গলায় দড়ি দা মরগা যা!
যদি শান্তি পাওয়া যেত, বন্ধুদের অযাচিত উপদেশ নতমস্তকে পালন করতেও তার কোন আপত্তি থাকত না। কিন্তু মরেও যে তার নিস্তার নেই; অশ্রুভারাক্রান্ত স্থির একজোড়া নয়ন তার আত্মাকে তাড়া করে ফিরবে চিরকাল। বনে বনে বসন্তের ফুল যখন ফুটবে, একটুকু  স্নিগ্ধ-সুরভি হাওয়ায় ভর করে এসে ব্যাকুল করবে না তার কবরের দুর্বাকে, মাটির নিচে বিশীর্ণ কঙ্কালটা শুনতে পাবে এক অন্তহীন করুণ কান্না যেখানে সকল বাসনার অবসান, সকল দাবীর মৃত্যু।
পাপ-পুণ্য সে বোঝে না। বুঝতে চায় না। কেবল একটি নিরাপরাধ প্রাণকে এই যে পায়ের নীচে দুম্‌ড়ে পিষে ফেলা- এ জিনিষটাই তাকে বারবার পীড়া দিতে থাকে। একমুহূর্তের উত্তেজনায় এ কি হয়ে গেল!
মুখ তুলে ঠোঁট খুলতে গিয়েও কিছু বলতে পারে না সে; মনের অব্যক্ত ভাষা জ্যান্ত অজগরের মতো কণ্ঠ অবধি ঠেলে উঠে শতপাকে ছড়িয়ে যায় ধমনী-তন্ত্রীতে। অতি কষ্টে সে ঢোক গেলে। তারপর মাথাটা বারকয়েক পিঁড়িতে ঠুকে মেঝের কাদাজলে পড়ে থাকে কুঁকড়ে।
বাইরে আমবনের শাখাগুলি একেকবার আছড়ে পড়ে সরসর শব্দে, গাছের নীচে ঝরাপাতার আর্তনাদ। বুকফাটা চিৎকারে আশমান ভেঙে খান খান হয়ে যায়, মেঘের শিখরে শিখরে বিক্ষুব্ধ সংঘর্ষের আওয়াজ। দুর্ণিবার হাওয়ার চাপে ককিয়ে ওঠে বেড়াগুলি, বিবর্ণ মুখ তুলে চায় আবু নয়ীম। ঘরের খুঁটিগুলি কি এতই শক্ত? একসঙ্গে ভেঙে পড়তে পারে না মাথার ওপর? তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গুড়িয়ে দিতে পারে না?

অবশেষে ঝড়বৃষ্টি থামে তিনদিনের অভিযান শেষ করে। গোবরে-শালিকেরা আমবনে আবার পাখা ঝাপটায়, চড়ুয়েরা লেগে যায় বাসা মেরামতের কাজে।
সকাল হলেই একটা বিশিষ্ট লোকের আবির্ভাব যে বাড়িতে হবে তা আবুর অজানা ছিল না। আর অনুমানে টের-বেটের নেই। কাঁচা-পাকা খসখসে চুলে কিস্তি টুপিটা সাটিয়ে দুপুরের আগেই এলেন হাজী আলি আকন্দ। জায়নামাজে মাথা ঠুকে ঠুকে কালশিটে দাগ পড়েছে কপালে। তার পিটপিটে লালচে চোখে দুঃখীজনের প্রতি দরাজদীলের ঔৎসুক্য।
গত তিনদিন একবারও চোখ খোলেনি গুলনাহার। রান্নাঘরে চাটাইর ওপর সেই যে দুমড়ে পড়েছিল, তা থেকে ওঠবার সামান্য চেষ্টাও সে করেনি। সেদ্ধ ভাতের পাতিলটা উনুনের ওপরই রয়েছে।
বাড়িতে ঢুকেই হাজি উঁকিঝুকি মেরে দেখলেন ঘরের আনাচে কানাচে। আবু উঠে বসেছিল। অর্থহীন ফ্যাকাশে দৃষ্টি দিয়ে সে চেয়ে দেখল লোকটাকে, তার নিস্পন্দ ঠোঁটে এতটুকু কম্পন জাগল না।
রান্নাঘরে গিয়ে তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটিকে পেলেন হাজি আলি আকন্দ। পিঠে মৃদু হাত রেখে বেদনা-ধরা গলায় বললেন, আর পইড়া থাইকা কি অইব বল। সবই তকদির। সবই কপালের লেখা।
গুলনাহার ক্ষণেকের জন্যে চোখ মেলে চেয়ে আবার পড়ে রইল। তার দেহ একটুকুও নড়ল না।
তোমরা যখন পয়লা আইলে এই গায়ে- গলা খাকানি দিয়ে হাজি বলতে লাগলেন, আমি চোক বাইন্ধা রাখতে পারি নাই। গরীবরে দেখাশোনা করা মমিনের ফরজ। তখন তোমরার থাকার জাগা নাই, পেডে ভাত নাই! আমি জাগা দিলাম, তোমার কাম দিলাম। অহনে কি আমি চোখ বাইন্ধা রাখতে পারি?
ওর কাঁধে নাড়া দিয়ে সচেতন করে হাজি ভেজা গলায় বললেন, ওঠ, চল! আর পইড়া থাইকা কি অইব!
হাজি আলি আকন্দের দরদ কেন উপচে পড়ছে গুলনাহার তা’ ভাল রকম বোঝে। তিনমাস ধরে সে তার বাড়িতে রাঁধা-বাড়ার কাজ করছে; কারণে অকারণে হেঁসেলে ঢুকে ফুচকি দিয়ে ওঠা তার নিত্যকার অভ্যাস। মাঝে মাঝে তো বলেনই- ওর হাতে নাকি মধু মেশানো- যেমন রান্নায় তেমনি তামাক সাজায়। কলকেয় ফুঁ দিতে দিতে যেদিন যে তার কাছে যায় না, সারাবাড়ীতে হৈ চৈ পড়ে সেদিন; ঝি-চাকরদের চৌদ্দ-গোষ্ঠির মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢালা হয়।
সাতদিন আগেকার একটা সন্ধ্যার কথা মনে পড়ে। জোর ক্ষেত নিড়ানি চল্ছে; রোজ পনেরোজন কামলার জন্যে ভাত-তরকারী ফুটিয়েও এতটুকু হাঁফ ছাড়ার ফুরসুৎ নেই। তবু রান্নাঘরে তলব পড়ে তামাকের। গুলনাহারের গা-টা রী রী করতে থাকে, বুড়োটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলে কেমন হয়? ফুলুর মা’কে ডালের লবণ চাখতে দিয়ে সে যায় হুকো জ্বালিয়ে দিতে।
মগরেবের নামাজ শেষ করে বসে বসে তসবিহ্ জপছেন হাজি আলি আকন্দ। কামরাটা মূল ঘরের ভেতরই এক পাশে। পাটশোলার বেড়া দিয়ে তাকে সকল রকম জাগতিক কোলাহল থেকে পবিত্র রাখা হয়েছে। কর্তা ছাড়া সেখানে মাথা গলাবার অধিকার কারো নেই; এমনকি প্রৌঢ় সহধর্মিণীরও নয়। কেবল সকাল-বিকেল দু’বেলা ঝাট দেওয়া চলতে পারে।
জায়নামাজের শিয়রে গব্‌গবে ধোঁয়ার ফুল্কি উড়িয়ে জ্বলছে কেরাসিনের কুপিটা। ভেতরে ঢুকে হুকোটা বাড়ায় দিল গুলনাহার!
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেবার ঝাঁঝটা তখনো তার ছিল। কি বল্‌বে তা মনে মনে বানিয়েও রেখেছিল; কিন্তু সামনা-সামনি হতেই সাহসে কুলাল না; উনি বিরূপ হলে মাথা গুজবার ঠাঁইটুকুও হারাতে হবে।
হুকোটা দিয়ে সে হাত ফিরিয়ে আনতে পারল না; বাতিটা ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে খপ করে ধরে ফেললেন হাজি আলি আখন্দ। এ-সময় বাড়ীর সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। এদিকে আসবে না কেউ। আসবার নিয়মও নেই।
এসব ঘটনা মনে করে আর ফায়দা হবে না কোনো। নেকড়ের মতো আঁচড়িয়ে খাম্‌চিয়ে কাপড়-চোপড় তচনচ করে ফেললেও সেদিন শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পেরেছিল নিজেকে। কিন্তু এখনকার অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা। ভেতরে যা-ই থাকুক যেতেই হবে তার বাড়ীতে। মনের আগুন বাদলা বাতাসে দপ্ করে যদি নিবেও থাকে, পেটের আগুন তো আর নিবেনি।

ধীরে চাটাইয়ে উঠে বসে অর্থহারা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে গুলনাহার। বৃষ্টির ছাটে আর ছিটকানো কাদায় চুলগুলি লেপটে একাকার। সুডৌল হাতটায় ঘরকন্নার কালির দাগ এখনো রয়েছে। নীলচে কাচের চুড়িগুলিতে সস্তা, দামের সেপটিপিন সাটানো। আবু নয়ীম এনে দিয়েছিল শেওলাকান্দির আরত থেকে। কানে ঝুম্‌কি-দেওয়া কেমিক্যালের। দুল দুটোর রঙ নিষ্প্রভ হয়নি; মাসখানেক আগে গায়েনীর কাছ থেকে নিয়েছিল ছ’আনায়।
দুয়ারের কাছে ফুলুর মা দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ। কর্ত্তার চোখ-ঠারানো ইংগিতে বিরাট বপুখানা দুলিয়ে কাছে এল।
তুই ধইরা নিয়া আ! দাড়িতে আঙুল ঘসে বললেন হাজি আলি আকন্দ, তিনদিন না-খাওয়া! এক্কেবারে আধখান অইয়া গেছে। বাড়ীত নিয়া ভালমত খাওয়াইবি, বুঝলি? অহন তার কাম করার দরকার নাই। তুই নিয়া আ, আমি যাই, একটা জরুরি কাজ আছে।
হাজি বেরিয়ে গেল। ফুলুর মা বোকা বনে যায় একদম, কী কথা বলে যে ওকে সান্ত্বনা দেবে তার কুলকিনারা করতে পারে না; যদি বলত না-হয় ঘণ্টাখানেক বিনিয়ে বিনিয়ে কেঁদে দিত পারত ওর জন্যে। কোন দিশবিশ না পেয়ে নিজের কাপড়ের আঁচলে ওর মুখটা সযত্নে মুছে দিল, বলল, ওঠ, চল।
রান্নাঘরের ওপরে ডালপালাসমেত নতুন পাতা-দোলানো কামরাঙা গাছটায় ছন্নছাড়া কাকেরা কা-কা জুড়ে দিয়েছে। তিনদিনের বাদলায় তারা উপোস; তার ওপর আজ সকাল বেলাকার বরাদ্দ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। পান্তাভাতও দু’তিন মুঠো পেত অন্য দিন, নাস্তাটা শাহী হালেই চলে যেত হয়ত। তাদের মধ্যে অতি খাই-খাই কয়েকটা খিড়কি দিয়ে বারকয়েক উঁকি-ঝুকি দিয়ে গেছে। চিরাচরিত নিয়মে কোথায় হঠাৎ ছেদ পড়ল তা যেন ঠাহর করতে পারছে না কোনমতেই।
আমগাছের পাতার ফাঁকে রাঙা-রোদ ঝল্কে পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে উঠোনের কাদায়। পাতিহাঁসদুটো কোন লোভনীয় লিক্লিকে শিকার আয়ত্ত করার চেষ্টায় সেখানে প্রাণান্ত। আবু নয়ীম সেদিকে চেয়ে রইল একদৃষ্টে।
একটু পরেই সে দেখতে পেল, দুটো মেয়ে মানুষ ছোট ছোট পা ফেলে উঠোন পেরিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার শরীরটা বিদ্যুৎ-পিষ্টের মতো ঝাকানি খেয়ে উঠল, ডান হাতটা বাড়িয়ে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠতে চাইল সে।
কিন্তু পরক্ষণেই হাতটা শিথিল হয়ে গেল। শিরা-উপশিরার রক্তকণিকাগুলো নিমেষের জন্যে ফুসে উঠে যেন বরফের মতো জমে গেছে। তার ঠোঁটে অস্পষ্ট বিড়বিড়, যাক্! চাই না আমি, চাই না!
তবু কেন এ দুর্বলতা? তার বুকের ভেতরকার একটা নির্জন অংশ ফোয়ারার আকস্মিক উচ্ছলতার মতো একেবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে ওঠে। কোন যুক্তি, কোন কুয়াশার আবরণ মানে না; সেখানে বোঝাপড়ার স্থান নেই, শুধু এক নিবিড় অনুভূতির একটুখানি অকৃত্রিম ছল্ছলানি। সত্যি সে তাকে ভালবেসেছিল সমগ্র সত্তার বিনিময়ে; একটুকু ফাঁক, এতটুকু অস্পষ্টতার বুদবুদ ছিল না সেখানে। পাওয়া সেখানে একান্ত করে পাওয়া।
প্রথম পরিচয়ের বিস্ময় আর রোমাঞ্চ সেখানে ছিল না, ছিল দিনে দিনে একাত্মা হয়ে উঠার গভীরতা। ছোটবেলা থেকেই সে বছর হিসেবে কামলা খাটত তাদের বাড়ীতে; তারা ছিল সম্পন্ন গেরস্ত পরিবার। প্রতিদিন সকালে নাশতা নিয়ে খামারে যেত গুলনাহার। সারা মাঠের ওপর কুয়াশা ঝুলতো, সকাল-সূর্যের আলো ভেঙে ভেঙে পড়তো মৃদু হাওয়ায়। মাটি-মাখা অপরিচ্ছন্ন হাতটা ধুয়ে সে বসে যেত আলের দুবার ওপর। তার শ্রান্ত ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি।
কৈশোরের চাঞ্চল্য শান্ত-গম্ভীর রূপ নিল যৌবনের পুষ্প-বাহারে। গুলনাহার বন্দী হলো ঘরের ঝাপের আওতায়। এরপর থেকে সামনা-সামনি দেখা হলো না সত্য; তবু একজোড়া সুরমা-আঁকা সুন্দর চোখ আড়ালে-আবডালে, অদৃশ্য পরিচর্যায়, তার জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে চলল একটা অনিবার্য সত্যের মতো।
সেজন্যেই সে তার ধারণার ত্রিসীমায়ও আনতে পারে নি, দুনিয়ার এমন কোন শক্তি আছে যা’ তার উদগ্র কামনার ধনকে ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিতে পারে। অথচ তাই হতে চলল একদিন। তার চরম ফয়সালাও এক লহমার বেশী সময় নিল না। একদা অমাবস্যার রাত্রে সবাই যখন গভীর ঘুমে ঢুলে পড়ছে, ঘরের পেছন দুয়ার খুলে, পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে, অতি সন্তর্পণে জাগাল গুলনাহারকে। অন্ধকারে ফিসফিসিয়ে কথা পাকাপাকি করে নিল।
তার দৃঢ় বিশ্বাস, সারা গ্রামের অন্ততঃ একটি লোক তাদের মনকে বুঝবেন, পাশে এসে দাঁড়াবেন; আর তিনি হচ্ছেন মির্জা ইউসুফ।
তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হলো। আজীবন মৌলানা রুমীর ভক্ত প্রেমধর্মের মূর্ত্তপ্রতীক মির্জা ইউসুফ দু-তিনজন শিষ্যের অনাড়ম্বর জলসায় পরস্পর হাতে হাত মিলিয়ে দিলেন তাদের। তখন রাত দুপুর। পাড়া-পড়শী কেউ জেগে ছিল না।
আজ যদি তিনি কাছাকাছি থাকতেন! একটা ক্ষীণ আশার স্ফূলিঙ্গ  আচমকা ঝিলিক মেরে যায় তার জমে যাওয়া মনের কষ্টিপাথরে। তাকেই আকড়ে ধরে সম্ভাবনার জাল বুনে যায় তার কল্পনা। আজ যদি কাছে থাকতেন মির্জা ইউসুফ তা হলে কিতাব ঘেটে ঘেটে কোন সূত্র বার করতেনই, যা দিয়ে আবার পাওয়া যাবে গুলনাহারকে। আবার, আবার!

এতক্ষণে রোদ মাথার উপর উঠেছে, তিনদিন মুখ বুঁজে থাকার পর সকল ঝাঁঝ যেন উপুড় করে ঢেলে দিচ্ছে। বাঁশের খুঁটি-ভরে টল্তে টল্তে উঠে দাঁড়াল আবু নয়ীম। মুহূর্তের উত্তেজনায় যে তিনটি শব্দ সে উচ্চারণ করেছে তাই কি তিনটি অব্যর্থ গুলি হয়ে এতদিনকার সমস্ত সম্বন্ধকে নিহত করবে? হৃদয়ের চাইতে অনুশাসনটাইকি বড়ো? একমাত্র বিবেচ্য? দিনে দিনে, রাতে রাতে দারিদ্রের মাঝেও অসংখ্য উজ্জ্বল মুহূর্তের আলোবাতাস গ্রহণ করে যে বিশাল বৃক্ষ ফুলে-ফলে শাখা প্রশাখায়, মঞ্জুরিত হয়ে উঠেছে, ক্ষণিকের ঝড়ে তা শিকরশুদ্ধ উপড়ে যেতে পারে না।

দু’পায়ের ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়ায় আবু নয়ীম।
গলা খাক্রানি দিয়ে হাজি আলি আকন্দ দুয়ারের কাছে এসে দাঁড়ালেন; ব্যাপারটার ওপরে যে অনেক খোশগল্প করে এসেছেন ঘরে ঘরে তার স্পষ্ট স্বাক্ষর চোখেমুখে লেগে, রয়েছে। গলাটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, যা যা’ এ বাড়ি থে বার অইয়া যা’। তোর মতন আস্ত শয়তানরে আমি আর জায়গা দিতে পারি না। দর্জাল কোথাকার! এইক্ষণে বার অইয়া যা’ তুই।
একটা বন্য হিংস্রতা ঝলকে যায় আবু নয়ীমের চোখের তারায়। লোকটার ওপর লাফিয়ে পড়ে দাড়ি-মোচগুলি ছিড়ে দিতে ইচ্ছা হয়। ইচ্ছা হয়, মাথাটা ফাটা বেলের মতো ভেঙে দিতে কাঁঠালের গাছের গুঁড়িতে ঠুকে।
তবু সে কিছুই করতে পারে না। ভেতরে ভেতরে কেবলি গরজাতে থাকে। লোকটার কাছে নত না হয়ে উপায় নেই এখন।
সামনের দিকে এগিয়ে এসে হঠাৎ ভেঙে পড়ে উচ্ছ্বাসে। ভাঙা গলায় কঁকিয়ে উঠে, আমায় বাঁচান হাজিসাব, আমায় বাঁচান! ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারুম না। বাঁচতে পারুম না।
বটে!
আপনি বিশ্বাস করুন, আমি তাকে তালাক দিতে চাই নাই। ঘরে চাল ছিল না, বারবার পীড়াপিড়ি করতে ছিল, আমার মাথা চইড়া গেছিলো!
দু’হাতে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল আবু নয়ীম। কপালের বলিরেখায় বিরক্তি জাগিয়ে হাজি বললেন, অহন সময় নাই। তবে হ্যাঁ শাদী তুই আবার করতে পারিস, পাত্রী রাজী হইলে। তাও আবার শরামতে আগে অন্য একজনের কাছে বিয়া দিয়া দিতে অইব। অনেক হাঙ্গামা।
তাতেও আমি রাজি! আহত পশুর মতো কাতর দৃষ্টিতে চাইল আবু নয়ীম। তবু যদি একটু করুণার আভাস সে পায়!
মুখ ভেঙচিয়ে একটা দুর্বোধ্য বাক্য উচ্চারণের পর হাজি চলে গেলে সমস্ত বাড়িটার দিকে চেয়ে তার মন হুহু করে কেঁদে উঠে। সে দিনমজুর, রোজ আনে রোজ খায়; তবু এমনভাবে কোন দিন কারো কাছে তার মাথা নত হয়নি।
কাস্তেটা বেড়ায় গোঁজা রয়েছে। বাইরে বেরুলে কাজ মিলতেও পারতো, বৃষ্টির পর রোদে রোদে যে-সব ক্ষেতে একটু টান ধরেছে সেগুলি নিড়ানোর জন্যে গেরস্তরা কামলা না নিয়ে পারবে না। কিন্তু কাস্তে হাতে নিতে সে আজ অসমর্থ।

চোখমুখ ধুয়ে বিকেলের দিকে আবার মাথায় হাত দিয়ে বসেছিল বারান্দায়। উঠোন পেরিয়ে ফুলুর মা’কে আসতে দেখে মুখ তুলে চাইল।
তিনদিন ধইরা উপোস। নেও দুইডা দানা মুখে দেও। কাপড়ের আড়াল থেকে কলার পাতায় ঢাকা একটা সানকি বের করল ফুলুর  মা। তাতে ভাত ও কিছু তরকারি।
তুমি কইত্থা আনছ এগুলা।
যেখান থে-ই আনছি। তোমার তা দিয়া কোন কাম নাই। নেও খাও।
আবু বলল, না আমার ভুখ নাই।
এবার ফুলুর মা বিরক্ত না হয়ে পারল না। হাতটা নেড়ে বলল, নেও আর ন্যাকামি কইরো না। ভুখ যে নাই আমার তা ভালা কইরা জানা আছে।
আমি না খাইলে তোমার কি?
আমার আবার কি? একটু থেমে সে জবাব দিল, তোমরারে নিয়েই তো যত হয়রানি। ওদিকে একজন গোঁ ধইরা আছে! তুমি না খাইলে দানাপানি মুখে দিব না।
হঠাৎ আঁৎকে উঠল আবু নয়ীম। যন্ত্রচালিতের মতো মুখ ঘুরিয়ে বলল, কি কইলা?
কথা ঘুরিয়ে ফুলুর মা বল্ল, আমি আর কইবার কে? আমারে মানা কইরা দিছে বারে বারে!
না বললেও বুঝতে এতটুকু দেরী হয় না আবু নয়ীমের। তাহলে সে-ও ভাবছে তার কথা? এতবড় আঘাতের পরও তাকে ক্ষমা করতে পেরেছে? গালাগালি দেয়নি? তার বুকের উপর মাটি উঠুক, এ চায়নি?
নখ খুঁটতে খুঁটতে সে বলল, খুব কষ্ট পাইছে নারে?
পাইব না? ফুলুর মা ঝংকার দিয়ে উঠল, তুমি কি মানুষ? একটা আস্ত আজরাইল!
ঠিক কইছ, আমি মানুষ নয়!
সন্ধ্যার শালিকদের কিচিরমিচির কাকলীর সংগে তার অনুতাপ-ভেজা স্বীকারোক্তি জড়িয়ে মিলিয়ে গেল। আম বনের ঈষৎ ভেজা পত্রগুচ্ছে বিদায়ী সূর্যের রাঙা-রশ্মি অনেক্ষণ ধরে ঝিলমিল করতে লাগলো স্বপ্ন-ভাঙা কারুণ্যের মতো। ফুলুর মা’কে কাছে বসিয়ে করুণ স্বরে কি বলল আবু নয়ীম। ওর মাংসল মুখের থলথলে সমবেদনাকে আড়াল করে রাত্রি নেমে এল।
কিছুদিন পর আরো একটা থমথমে রাত্রি এসে পৃথিবীর মুখ ঢেকে দিল।
জলসা বসেছে হাজি আলি আকন্দের বৈঠকখানায়। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অপূর্ব সমাবেশ। আগরবাতির ভুরভুর সুবাসে আমোদিত বাতাস নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করে উজ্জীবিত করে তুলছে সবাইকে। ফরসি হুকোয় তামাক পুড়ছে সমানে। বাক্সে তুলে-রাখা পিতৃপুরুষের চোগা-চাপকান পরে, প্রথম বিয়ের তৈলজীর্ণ পাগড়ীটা মাথায় চেপে, জরির কাজ-করা মদীনার আলোয়ান গায়ে আবির্ভূত হলেন হাজি আলি আকন্দ।
সদুমুন্সি বলে উঠল, মাশাল্লা!

হাজির যেন বিরক্তির অন্ত নেই। কপাল কুঁচকে একজনকে ধরে, তিনি বললেন, বুড়ো বয়সে যতসব ফ্যাসাদ আর কি। শয়তান ছোঁড়ারা কতায় কতায় বৌরে তালাক দেয় আর ঝক্কি নিতে হয় আমাকে। হুঁ। আমি যদি না আগাইতাম, যাদু দেখত মজা, কেমন কইরা বৌরে আবার পায়!
আহা চুপ কর না! শিখ দাড়িওয়ালা জামাল প্রধান শাদিয়ে উঠল, বিয়ার দিন অত কতা কইতে নাই।
লজ্জিতভাবে মাথা নত করে চুপ হয়ে গেলেন হাজি আলি আকন্দ। ভুলেই গিয়েছিলেন একদিনের জন্যে হলেও তিনি এখন দুলহা বৈকি!
আজকে ভোররাতে খিড়কিড় বাতাসে যখন দাড়িগুলি নড়ছিল, তখন এক খোয়াব দেখেছিলেন হাজি আলি আকন্দ। দেখেছিলেন, তিনি যেন ফেরদৌসের এক ওলাবাগে বসে আছেন শ্বেত পাথরের ওপর। সোনালী পাখা নেড়ে বুলবুলিরা শিষ দিচ্ছে, পুচ্ছ নাড়ছে; নীচে কুলকুল শব্দ করে বয়ে চলেছে আবে কওছরের স্বচ্ছধারা; এমন সময় ঝলমলে শাড়ী পরিহিতা অনিন্দ্যসুন্দরী এক হুর চকিতচরণে এসে তার গলায় পরিয়ে দিল মোতির মালা। গদ্‌গদ্ আবেগে জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করতেই ভোজবাজির রূপ-কুমারীর মতো মিলিয়ে গেল।
খোয়াবের মধুর আমেজটুকু মনের তারে জড়িয়ে সকালে নাপিতের সামনে বসেছেন, দাড়িমোচ ঝকঝকে করিয়েছেন। এরপর কামরায় ঢুকে পারদ ওঠা পুরানো আয়নায় মুখখানা বারবার করে দেখেছেন। না, একটা যোয়ান মেয়েকে বশ করার শক্তিসামর্থও এখনো তার আছে।
আহ্ তোর একটুও আক্কেল নাই? ও হয়ত তৈরী অইয়া খাড়ইয়া আছে। শিগগির কইরা পইরা নে। সব ঠিকঠাক! প্রায় জোর করে ধরে শাড়ীটা পরাতে থাকে ফুলুর মা। তার হাতে পায়ে অসম্ভব ব্যস্ততা।
খোশ মেজাজে হুকোর নলটা ফিরিয়ে দিয়ে উকিল সাহেব উঠলেন, দু’জন সাক্ষীও অনুকরণ করল। কথাবলা বন্ধ করে, না-হয় ফিস্‌ফিসিয়ে নামিয়ে ঠিক্‌ঠাক হয়ে বসল জলসার সবাই। ঝাপসা চোখ যথাসম্ভব চক্‌চকে করে পাগড়ী মাথায় বসে এখনো এমনি একটা কল্পনা ঘোরপাক খাচ্ছিল মগজের সীমানায়। একটি মাত্র রাত্রি। এরপর যার জিনিষ তাকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। কাজেই নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা সময়ের উসুল নিতে হবে কড়ায় গণ্ডায়। গুলনাহারের আবরণ-মুক্ত সুপুষ্ট দেহটা ভেসে ওঠে মানস-নয়নে।

বরপক্ষের উকিল কথা কয়ে উঠল। বলল, আর দেরী কইরা ফায়দা নাই। কি বলেন জামাল প্রধান?
হ্যাঁ, ঠিকই! শুভ কাম শেষ করাই ভালা।
ব্যাপারটা মনেপ্রাণে সমর্থন না করলেও পাড়া-পড়শী অনেক মেয়েই এসেছে দেখতে। হৈ চৈ করছে রান্না-ঘরের ধার ঘেষে। সামান্য মিষ্টিমুখ করানোর ব্যবস্থা হয়েছে, অনেকেরই নাকে এসে লাগছে ফিরনীর গন্ধ।
ওদিকে ঘরের খিল এটে একটা শাড়ী নিয়ে ফুলুর মা প্রাণান্ত হাচ্ছিল। কিছুতেই পরতে চায়না গুলনাহার। একেকবার নাগিনীর মতন ফুঁসে ফুঁসে ওঠে।
আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন হাজী আলি আকন্দ।
রাত আটটার বেশী হয়নি।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ভেতর-বাড়িতে হৈ চৈ উঠল। গোলমালটা ক্রমশ; বাড়তে বাড়তে চাক-ভাঙা মৌমাছির মতো ছড়িয়ে পড়ল সারা বাড়িতে। বৈঠকখানা ঘরও তা থেকে বাদ যায় নি। কতক্ষণ একসংগে সবাই উৎকর্ণ। এরপর সমাগত মেহমানেরা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একসঙ্গে জিগির দিয়ে উঠল, কি অইছে? কি?
প্রশ্ন প্রশ্নই রইল। কেউ কোন হদিস দিতে পারল না। উত্তেজনায় লাল হয়ে উঠলেন হাজি আলি আকন্দ। দাঁত খিচিয়ে বললেন, আমার বাড়িতে একপাল শূয়রের আড্ডা। কাল এদের ঝাটাইয়া বার করুম। বুঝছে কি!
দু’জন সাক্ষী হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করল ঘরে। এরা যেন লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালিয়ে শিবিরে এসেছে সেনাপতির সঙ্গে দেখা করতে। ঘন ঘন হাঁপাচ্ছে ওরা। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবার আগেই একজন বলল, কনে নাই!
কনে নাই? কয় কিরে বাবা! হুকোর নলটা অজান্তেই ছেড়ে দেয় জামাল প্রধান।
খুন করুম! একটা একটা ধইরা খুন করুম আমি! সবাইকে হক্‌চকিয়ে দিয়ে হাজি আলি আকন্দ লাফিয়ে উঠলেন; পাগড়ীটা হাতে আকড়ে ডাংগুলির মতো ছিটকে গেলেন ভেতর বাড়ীতে। সবাই তালগোল পাকিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু করেছে। হাজি আবার চেঁচাতে লাগলেন, খুন করুম। সাড়ে বার টেহার শাড়ী। খুন করুম।
আরেক খিলি পান মুখে ঠেসে চুপচাপ বসে রয়েছে হাজি-গিন্নি। বাড়ীতে যে এতকিছু হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কান দেবার প্রয়োজনই যেন নেই তার।
তুই বল! জানের মায়া থাকলে বল্ তুই, কই গেছে! ফুলুর মার কাঁধে চাপ দিয়ে হাজি আলি আকন্দ ধম্কাতে লাগলেন, তুইও তো ছিলি ঐ ঘরে।
আমি রান্নাঘরের গেছলাম। ফিইরা দেহি নাই এর বেশী ফুলুর মা কিছুই বলল না।

ততক্ষণে আলো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে কয়েকগণ্ডা লোক সবাই ছুটোছুটি করছে। মুরগি টঙের ভেতর, দরজার আড়ালে, ধানের জাবারে, পায়খানায় বাতি উঁচিয়ে দেখল, মেয়ে মানুষের মাথার একটি চুলও পাওয়া গেল না। তোলপাড় করা হোল ঝোপঝাড়, বাড়ীর পেছনকার জল-জঙ্গল। কিন্তু সবই বৃথা।
মেয়েটা কই গেছে কেউ বলতে পারল না। কেবল খেয়াঘাটের মাঝির ভাগ্যে রাত্রির মতো আরেকটা কাজ জুটে গেল। নাওটা ওপারে ঠেকিয়ে সে দেখতে পেল, দু’আনার পয়সা গুনে দিয়ে একটা মেয়ে আরেকটা পুরুষ ত্রস্তপদে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

 

সংগ্রহ ও ভূমিকা : কাজী জাহিদুল হক
বহুমাত্রিক লেখক আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯) সাতাত্তর বছরের জীবনকালে সাহিত্য সাধনায় কাটিয়েছেন  ষাট বছর। কথাসাহিত্যের পাশাপাশি আমরা তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি, কবিতা, নাটক, কাব্যনাটক, প্রবন্ধ, গবেষণা, জীবনী, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য, ডায়েরি, রাজনৈতিক কলাম ইত্যাদি।  
আলাউদ্দিন আল আজাদ তাঁর  প্রথম প্রকাশিত গল্প সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘আমার প্রথম ছোটগল্প ‘জানোয়ার’। তেরো বছর বয়সে লেখা, যখন আমি নারায়ণপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে উঠেছি, কলকাতার মাসিক ‘সওগাত’-এ ছাপা হলে ছোটখাটো আলোড়ন জাগিয়েছিল। বেশ কিছু প্রশংসাপত্র পেয়েছিলাম।’’
সতেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘জেগে আছি’ (১৯৫০) প্রকাশিত হয়। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিরচণকারী এই কথাসাহিত্যিক অসংখ্য গ্রন্থ আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাঁর অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত রচনার পরিমাণও কম নয়। মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে এম আর মাহবুবের সম্পাদনায় অনিন্দ্য প্রকাশ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় আলাউদ্দিন আল আজাদের অগ্রন্থিত রচনাসমগ্র। কিন্তু এখনো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা অগ্রন্থিত রয়ে গেছে। ‘দিলরুবা’ পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় ‘সুরমা’ শিরোনামে আলাউদ্দিন আল আজাদের একটি ছোটগল্প মুদ্রিত হয়। যা এখনো গ্রন্থভুক্ত হয়নি।
ঈদ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় ১৩৫৮ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে। সংখ্যাটিতে সম্পাদক হিসেবে মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, দৌলতুন্নেছা খাতুন, এস. রহমান এবং এ. এইচ. এম. আবদুল কাদেরের নাম মুদ্রিত হয়েছে। উল্লিখিত ঈদ সংখ্যা থেকেই ‘সুরমা’ গল্পটি সংকলিত।

[গল্পটিতে ‘দিলরুবা’ পত্রিকায় মুদ্রিত বানান অনুসরণ করা হয়েছে- সম্পাদক]

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়