নজরুলের ছেলেবেলা
তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম
তাপস রায়
সেই শৈশবেই অনেকগুলো নাম ছিল তার-দুখু, নুরু, ব্যাঙাচি আরো কত কী! অথচ ভালো নাম কাজী নজরুল ইসলাম। এত সুন্দর নাম থাকতে ‘দুখু’ কেন? ঘটনা হলো, এর আগে দুখুর আরও চার ভাই জন্মেছিল। কিন্তু কেউ বাঁচেনি। এ নিয়ে বাবা-মার মনে অনেক দুঃখ। তারা ভাবলেন, এই ছেলের আর ভালো নামের দরকার নেই। কে জানে, খারাপ নামের জন্যই হয়ত ছেলেটি বেঁচে যাবে। হয়েছেও কিন্তু তাই। দুখু মরে নি।
ছেলেবেলায় দুখুর দুঃখের শেষ ছিল না। একে গরিবের ঘরে জন্ম, তারওপর দুম করে বাবা মরে গেল। ফলে সেই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে মাজারের খাদেমগিরি শুরু করলেন। সেই থেকে শুরু। এরপর কখনও লেটো দলের গায়েন, কখনও রুটির দোকানের কর্মচারি এভাবেই চলছিল। পাশাপাশি থেমে থেমে চলছিল পড়াশোনা। সিক্স পর্যন্ত পড়তেই তাকে দুইবার স্কুল ছাড়তে হয়েছে। না, দুরন্তপনার জন্য নয়, দারিদ্র্যের কারণেই এমন ঘটেছে। হ্যাঁ, তিনি দুরন্ত ছিলেন বটে। পড়াশোনার চেয়ে বন্ধুরা মিলে কার বাগানে কোন লিচুতে রঙ ধরেছে, কোন গাছের পেয়ারা ডাঁসা হয়েছে এসব দিকেই মনোযোগ ছিল বেশি। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষার ফল তার এতটাই ভালো হলো যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ডবল প্রমোশন দিলেন। অর্থাৎ ক্লাস সেভেন থেকে এক লাফে ক্লাস নাইন। সঙ্গে রাজবাড়ি থেকে মাসে সাত টাকা বৃত্তি।
সুতরাং মানতেই হবে, দুখুর মেধা ছিল। তবে সব ভালোর মধ্যে মন্দ ছিল ওই একটাই- দুখু বেজায় দুরন্ত। একবার হলো কী, পাড়ায় নতুন জামাই এসেছে। দুখু বন্ধুদের নিয়ে ফন্দি এঁটে জামাইকে গিয়ে বললেন, নতুন জামাইদের দরমা পীরের দরগায় যেতে হয়। চলুন। নইলে অকল্যাণ হবে। অথচ ‘দরমা’ মানে কিন্তু হাসমুরগির ঘর।
দুখুর বুদ্ধিতে একটা পোড়ো বাড়ির মধ্যে ‘দরমা ঘর’ আগে থেকেই লাল কাপড়ে ঢেকে রাখা হলো। জামাই সেখানে গিয়ে সালাম করে নগদ সালামী দিলেন। এবার বন্ধুরা মিছিল করে জামাইয়ের শ্বশুড়বাড়ি এসে উপস্থিত হলো। গেটে দাড়িয়ে দুখু ছড়া কাটতে শুরু করলেন :
মাসি গো মাসি
তোমার জামাইয়ের দেখ হাসি
দরমা পীরে সালাম দেওয়ালাম
খাওয়াও মোদের খাসি।
দুখুর দুরন্তপনার এমন অনেক গল্প আছে। আবার এর বিপরীতে আছে সরল, পরোপকারী, প্রাণখোলা, আত্মভোলা মনের গল্প। নিজে দুঃখ সইবেন কিন্তু বন্ধুদের দুঃখ সইতে পারতেন না। একবার বন্ধু শৈ
রাইজিংবিডি.কম