ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভূত বশ

খোকন দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভূত বশ

আলোকচিত্র : সংগৃহীত

খোকন দাস

সপ্তর্ষী আর্ট স্কুলে ছবি আঁকা শিখছে। তাকে দেখে সুপ্রীতিও বায়না ধরেছে ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি হওয়ার। প্রতিদিনই সে সপ্তর্ষী যখন আর্ট স্কুলে যায়া তখন কান্না করে। কয়েকদিন তো সে সপ্তর্ষীর সঙ্গে পুরো সময় ক্লাসে খাতা-পেন্সিল নিয়ে বসেও ছিল। তাকে ভর্তি করিয়ে নিতে বললে আর্ট স্কুলের ম্যাডাম বললেন, বয়স কম, ভর্তি করানো যাবে না। কিন্তু সুপ্রীতি দমার পাত্র নয়। সে বাসায় পেন্সিল দিয়ে প্রতিদিন কাগজে কী সব আঁকিবুকি করতে লাগল। কিছু একটা দাগ দিয়েই দৌড়ে এসে বলে, দেখো তো ভূতের ছবিটা কেমন হয়েছে? তখন খুব আগ্রহ নিয়ে বলতে হয়, খুবই ভালো হয়েছে।


এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন সে যে কাগজটা দেখাল, সেটি দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। সুপ্রীতি আমাকে বলল, দেখো তো সূর্যটা কেমন হচ্ছে? এটুকু বলেই সে সাদা কাগজের মাঝখানে সুন্দর একটা বৃত্ত আঁকল। বৃত্তের চারদিকে ছোট ছোট দাগ দিল আলোকচ্ছটা বোঝানোর জন্য। এতে আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। প্রতিদিন আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকলাম সে কী আঁকছে।


একদিন দেখলাম বৃত্তের মধ্যে সে চোখ আঁকছে, বাইরে কান ও চুল আঁকছে। পরদিন যোগ হলো চিকন লম্বা লম্বা হাত-পা। এ ভাবে তার ছবি ক্রমেই মানুষের ছবির আকৃতি পেতে লাগল। প্রতিদিন সে এঁকে চলল একের পর এক। একই সঙ্গে চলল নামকরণ। যে ভূতটার একটা চোখ নেই সেটার নাম ‘কানি ভূত’, যেটির হাত-পা চিকন সেটির নাম ‘চিকনা ভূত’। যেটির পেট মোটা সেটির নাম ‘পটকা ভূত’ এভাবে ন্যাড়া ভূত, ল্যাংড়া ভূত, খাটাশ ভূত ইত্যাদি ইত্যাদি।


কিন্তু কিছুদিন পর হঠাৎ করে সে ভূত আঁকা একেবারেই বন্ধ করে দিল। তুমি ভূত আঁকা বন্ধ করে দিলে কেন- আমি বললাম। এ প্রশ্নের উত্তরে ও আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আমি আর ভূত আঁকব না। যে ভূতগুলো আমি এঁকেছি সেগুলো আমাকে কেবল ভয় দেখায়। আমার চুলের মুঠি ধরে, বিরক্ত করে।
তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, ওগুলো তো ছবি! ছবি তোমাকে ভয় দেখাবে কীভাবে?
তুমি বুঝবে না, ওই ভূতগুলো ভারি দুষ্টু, শয়তান-আমাকে শুধু ভয় দেখায়। আমি আর ভূতের ছবি আঁকব না। কোনো ছবিই আঁকব না।


কোনোভাবেই যখন তাকে বুঝানো গেল না তখন সে ছবি আঁকা ছেড়ে দিল। কয়েকদিন পর তার নানা এলেন বেড়াতে। দুদিন থেকে নানা চলে যাওয়ার পর দেখি সুপ্রীতি আবার আগ্রহ নিয়ে লাল, নীল, হলুদ ও কমলা রং দিয়ে ছবি আঁকছে- ভূতের ছবি। আর বিড়বিড় করে কী সব বলছে। আমাকে বলল, দেখো একটা দারুণ ভূতের ছবি আঁকছি।
আমি বললাম, এ ভূত তোমাকে ভয় দেখাবে না?
না। আমি তো এখন ভূত বশের মন্ত্র জানি- নানা শিখিয়েছেন।
মন্ত্রটা কী?
ভূত আমার পুত, পেতনি আমার ঝি। নানা-নানি সঙ্গে আছেন, ভূতে করবে কী?


পর দিন দুপুরে দেখি সদ্য আঁকা ওই ভূতের ছবি বুকে জড়িয়ে সুপ্রীতি ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যেই মিটিমিটি হাসছে আর অস্পষ্ট কী যেন বলছে। মনে হলো ঘুমের মধ্যেও সে বুঝি ভূতেদের বশ করার মন্ত্র বলছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জানুয়ারি ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়