করোনা রোধে গ্রামের মানুষও এখন সচেতন
সন্ধ্যা ৭টা। সড়কে নিরবতা। মাঝে মধ্যে দু—একটি যানবাহনের শব্দ সেই নিরবতা ভাঙছে। দূর থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝি পোকা আর ডাহুকের শব্দ।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সিলেট জেলা লকডাউন। একই সাথে সরকারের নির্দেশনার কারণে সন্ধ্যা ৬টার আগেই সব প্রয়োজন সেরে ঘরে ফিরেছেন মানুষ। এ কারণে সন্ধ্যা নামার পর থেকেই নিস্তব্ধ সড়ক-মহাসড়ক। একই অবস্থা আঞ্চলিক বাজার আর গ্রামের রাস্তারও।
রোববার (১২ এপ্রিল)। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট। এখানে চতুল বাজারে নেমেছে অন্ধকার। স্ট্রিট লাইট ছাড়া আর কোনও লাইটও জ্বলছে না। কয়েকটি ফার্মেসি ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ। তবে ফার্মেসি খোলা থাকলেও ওষুধ নিতে আসা ক্রেতাদের দেখা নেই।
ফারিহা মেডিক্যাল হলের পরিচালক ফাহিম আহমদ যেমনটা বলছিলেন, ‘শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষের মাঝেও সচেতনা বেড়েছে। তার প্রমাণ জনশূন্য বাজার। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, অতীতে কারফিউ জারি করেও এই বাজার থেকে মানুষকে সরানো যায়নি। যেখানে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশনা জারির পর থেকে সন্ধ্যা নামার আগেই পুরো এলাকা জনশূন্য হয়ে যায়।’
মা মেডিক্যাল হলের পরিচালক সোহেল আহমদ বলছিলেন, ‘আমরা আপৎকালীন সেবা হিসেবে ফার্মেসি খোলা রেখেছি। কিন্তু কোনও ক্রেতার দেখা নেই। সবাই দিনের বেলায় ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গ্রাম এলাকার মানুষের মাঝেও করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেশ সচেতনতা বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চতুল বাজার স্টেশন হাবীবী জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ নেওয়াজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ওয়াক্তিয়া নামাজে মসজিদ পূর্ণ হয়ে দোতলার ছাদও ভর্তি থাকত। সেখানে এখন সরকারের নির্দেশনা মেনে ৫ জনের বেশি মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন না। অথচ ধর্মীয় রক্ষণশীল এলাকা হওয়ার কারণে এ নির্দেশনা নিয়ে শুরুর দিকে সমালোচনা হয়েছিল।’
সিলেটের সব উপজেলার গ্রামের অবস্থা একই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার প্রবণতা কম থাকলেও যতদিন যাচ্ছে লোকজনের মধ্যে সচেতন হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে সব বাজারেই সন্ধ্যার পর মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা নেমে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সিলেটের অপর সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের বারহাল বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল আহমদ সিরাজী যেমনটা বলছিলেন, ‘প্রথমদিকে সরকারের নির্দেশনা তেমন পাত্তা দিতেন না স্থানীয়রা। তবে এখন সকলেই আইন মানছেন। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যাপক প্রচারের কারণেই জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। এ কারণে আইন মানছেন তারা।’
গ্রামের মানুষের মাঝে সতর্কতার জন্য মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পড়ার প্রবণতাও বেড়েছে। ছোট-বড় সব বয়সীরাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে বয়স্কদের মাঝে এ সম্পর্কে বেশ সচেতনতা বেড়েছে।
এমনই একজন হাফিজ ইসলাম উদ্দিন। তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, শুরুর দিকে এ ভাইরাস নিয়ে তারা হাসি-ঠাট্টা করছিলেন। এখন বুঝতে পারছেন। এখন আর অবহেলা নয়। করোনা সংক্রমণ হয়। এজন্য তিনি মাস্ক পরিধান করেছেন। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আর পরিবারের কাউকে বের হতেও দিচ্ছেন না। সরকারের নির্দেশনা তারা মেনে চলছেন। কারণ সচেতন আর সতর্ক থাকলে করোনা ছড়ায় না।
কানাইঘাটের পাঁচ নম্বর বড়চতুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হোসাইন চতুলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জনসাধারণ এখন অনেক সচেতন। এ কারণে তারা আইন মেনে চলছেন। একই সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকেই বারবার মাইকিং করে সচেতনামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি হতদরিদ্র কর্মহীনদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে সিলেট জেলা লকডাউন করেছে জেলা প্রশাসন। শনিবার বিকেল থেকে এ লকডাউন কার্যকর হয়েছে। লকডাউন আইন লঙ্ঘনের অপরাধে ৮৫জনকে মামলায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেজবাহ উদ্দিন।
নোমান/সাইফ/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম