ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মেয়ে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে, চিন্তা বেড়েছে বর্গাচাষি বাবার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
মেয়ে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে, চিন্তা বেড়েছে বর্গাচাষি বাবার

বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কুষ্টিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী রিমি খাতুনের। সে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে তার পিতা আলাউদ্দিন খন্দকার একজন গরিব বর্গাচাষী। বড় দুই মেধাবী মেয়ের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি, এখন ভাল ফল নিয়ে ছোট মেয়ে কলেজে ভর্তি হবে কীভাবে, খরচ কোথায় পাবেন? মেয়ে ভাল ফল করায় চিন্তা বেড়েছে এই হতদরিদ্র বাবার। 

রিমি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে জিপিএ-৫ পায়। সে উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নগরবাঁকা এলাকার আলাউদ্দিন খন্দকারের মেয়ে।

সরকারি রেলের জমিতে ডেকোরেটরের ব্যবসা ছিলো আলাউদ্দিনের। পরে সরকারি উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙ্গে যায় ব্যবসা। নিজের জমিজমা না থাকায় বর্গা চাষ করে বর্তমানে সংসার চালান আলাউদ্দিন।

তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই সংসার তার। তিন মেয়েই মেধাবী হওয়ায় তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন খুব কষ্টে। বড় মেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী, মেজো মেয়ে সরকারি ম্যাটসের শিক্ষার্থী।

ছোট মেয়ে রিমি খাতুন এবার এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। সে ১০৪১ নম্বর অর্জন করেছে।

রিমি খাতুন বলে, আমার এ সাফল্যের পেছনে আমার পিতা-মাতা, পরিবার ও শিক্ষদের অবদান সবচাইতে বেশি। আমি মন দিয়ে লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে চাই, মানুষের সেবা করতে চাই।

রিমির মা আরশিদা খাতুন বলেন, ‘আমার তিন মেয়েকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। তারা মানুষের মতো মানুষ হবে, এটাই আমার কাম্য।’

রিমির পিতা আলাউদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘আমি চাই আমার মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে। তবে লেখাপড়া করাতে অনেক খরচ। এমনিতেই দুই মেয়ে খরচ দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আমাকে। এবার ছোট মেয়েও ভালো রেজাল্ট করেছে। চিন্তা বেড়ে গেলো। এদিকে মেয়ের ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার।’

তিনি বলেন, ‘কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করবো, অর্থের অভাবে রয়েছি। একলা কাজ করে আর পেরে দিচ্ছি না। তারপরেও কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে সাধ্য মতো চেষ্টা করে দেখি, ভালো কোথাও মেয়েকে ভর্তি করাতে পারি কিনা।’

হত দরিদ্র এই পরিবারের সন্তান রিমির তার লেখা পড়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে পারিবারিক অর্থ সংকট।

হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, ‘রিমি আমাদের স্কুলের গর্ব। সে অসম্ভব মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তার পিতা একজন ভুমিহীন কৃষক। রিমি মেধাবী ও গরিব হওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তিসহ স্কুল থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে তাকে। তাকে স্কুলের সকল ফি মওকুফ করে বিনা বেতনে অধ্যয়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো।”

তিনি বলেন, ‘তার মধ্যে একটা অন্যরকম প্রতিভা রয়েছে। সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। সেভাবেই তাকে আমরা তৈরী করার চেষ্টা করেছি। তবে আর্থিক সংকটের কারণে পরিবার তার লেখাপড়া চালাতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’

 

কুষ্টিয়া/কাঞ্চন কুমার/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়