তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণ হচ্ছে না সাভারে
রুবেল আহমেদ প্রিন্স || রাইজিংবিডি.কম
সাভার সংবাদদাতা : শিল্পাঞ্চল এবং রাজধানী ঢাকার নিকটতম উপজেলা হওয়ায় সাভারে জনসংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ:। বাড়ছে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা। এখন এই ছোট্ট শহরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বসবাস।
প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন এখানে। যার মধ্যে ১০ লাখের মতো সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত। আর বাকীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরতসহ নানা পেশায় জড়িত। বেশিরভাগ বসবাস করছেন ভাড়া বাসায়। কিন্তু এদের প্রায় ৫০ শতাংশই এখনো পূরণ করেননি তাদের ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম।
এতে করে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় পরিচয় গোপন করে সহজেই সন্ত্রাসীসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা বসবাসের সুযোগ নিতে পারে বলে শঙ্কা সচেতন মহলের। তাদের প্রত্যাশা, দ্রুত সব ভাড়াটিয়ার তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
সাভার ও আশুলিয়ার অনেক পাড়া মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ভাড়াটিয়াই তথ্য নিবন্ধন ফরম সম্পর্কে অবগত আছেন। তবে, বাড়ির মালিকরা তাদের ফরম না দেওয়ায় তারা ইচ্ছা থাকা সত্যেও ফরম পূরণ করতে পারছেন না। ভাড়াটিয়াদের দাবি, বাড়ির মালিকেরা তাদের কখনও ফরম দেয়নি বা থানা পুলিশও কখনও তাদের ফরম পূরণ করতে বলেনি। তাই তারা ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণ করেননি।
ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম নিয়ে কথা হয় আশুলিয়ার জিরানী এলাকার ভাড়াটিয়া মাসুদ আকন্দের সাথে। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকেন, সে বাসার বাড়ির মালিক তাদের কোন ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম দেননি। তাই তিনিসহ তাদের বাসার অন্যান্য ভাড়াটিয়াও তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণের আওতায় আসতে পারেননি। তবে পাশের একটি বাসায় তার বন্ধু সাব্বির হোসেনের বরাত দিয়ে মাসুদ আকন্দ জানান, তার বন্ধুর বাসার বাড়িওয়ালা থানা থেকে ফরম এনে ভাড়াটিয়াদের দিয়েছে। ওই বাসার সবাই যাবতীয় তথ্য দিয়ে ফরমগুলো পূরণ করে বাড়ির মালিকের কাছে জমাও দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সাভারের হেমায়েতপুরে বিল্লাল হোসেন নামে এক পোশাক শ্রমিকের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম দিচ্ছে না বলেই তিনি, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে পারছেন না। তবে এই পোশাক শ্রমিকের দাবি, তিনি আগে সাভারের জামসিং মহল্লায় থাকতেন। সেখানে থাকাকালীন সেখানকার বাড়ির মালিক তাকে ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম দিয়েছিল। তখন তিনি সেটা পূরণ করে তার কাছে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানের বাড়ির মালিক এখনও ফরম দেননি বলে বাসা বদলের তিন মাস অতিবাহিত হলেও তিনি ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে পারেননি।
এদিকে, ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরমের পূরণের বিষয়ে কথা হয় সাভারের এএমডি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বুলবুলের সাথে। তিনি জানান, ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরমে একজন ব্যক্তিকে তার যাবতীয় তথ্য দিতে হয়। তাই যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা বাসা ভাড়া নিতে চাইবেন না। যখনই সঠিক পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিতে হবে, তখনই একটা অজানা ভয়ে অপরাধীরা বাসা ভাড়া নেওয়া থেকে এড়িয়ে চলবে।
বাড়ির মালিকের জন্যও ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন আমজাদ হোসেন । তিনি বলেন, ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণের কার্যক্রম শতভাগ সফল করতে হলে যে সব বাড়ির মালিক তাদের ভাড়াটিয়াদের এখনও ফরম দেননি সে সব বাড়ির মালিককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলেই কার্যক্রম শতভাগ সফলতা পাবে।
ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণের কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, এই কার্যক্রম আরও বেগবান করতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। পাশাপাশি ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম পূরণে বাড়ির মালিকদেরও সহযোগিতা চান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
রাইজিংবিডি/সাভার/২ জুলাই ২০১৯/রুবেল আহমেদ প্রিন্স/হাকিম
রাইজিংবিডি.কম