ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গার্মেন্টস মালিকরা শুনুন...

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গার্মেন্টস মালিকরা শুনুন...

প্রায় তিন হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করে গাজীপুরের এসপি গার্মেন্টস কারখানায়। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে যেখানে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সেখানে এই গার্মেন্টসের মালিক সব শ্রমিককে দুই মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে ৩৫ দিনের ছুটি দিয়েছেন। অবস্থা স্বাভাবিক না হলে তিনি সবাইকে বিকাশের মাধ্যমে ঈদ বোনাস পাঠিয়ে দেওয়াসহ প্রয়োজনে সবার ছুটি বাড়িয়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া কারোনার কারণে কারও চাকরিও যাবে না বলে আশ্বস্ত করেন।

বকেয়া বেতন-ছাটাইসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর শোনা যায় চারদিকে, তার ভিড়ে এমন মানবিক গার্মেন্টস মালিকের গল্প একটু অন্যরকমই মনে হয়। হ্যাঁ করোনাকালে কর্মীদের জন্য এমন মানবিক গার্মেন্টস মালিকের নাম সুবল চন্দ্র সাহা। তিনি গাজীপুরের এসপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই গুণী ও মানবিক মানুষটির বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা গ্রামে। যিনি ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট-সংগ্রামে নিজেকে আজকের অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে তিনি ভুলে যাননি তার জীবন সংগ্রামের কথা। এজন্য শ্রমিকদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন সবসময়।

তার কারখানায় আছে শ্রমবান্ধব পরিবেশ ও শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মানবিক সুবিধা। অন্যান্য গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের প্রতি তার কর্তব্য পালনের বিষয়টি ভালোভাবে দেখেন না। এগুলো তাদের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ তারা তাদের শ্রমিকদের এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন।

সুবল সাহা কেবল ব্যবসায়ী নন, একজন সমাজসেবকও। তিনি পাবনার ডায়াবেটিক হাসপাতালে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করে একটি ফিজিওথেরাপি সেন্টার করে দিয়েছেন। চাটমোহর, বেলকুচি ও ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, আশ্রম ও ধর্ম প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দিয়ে থাকেন। দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীর চাকরি-বিয়ে-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মে সহযোগিতা করেন। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের প্রতি তার মহানুভবতার পরিচয় আলোচিত হচ্ছে সবখানে।

আলাপকালে সুবল চন্দ্র সাহা রাইজিংবিডিকে বলেন, জীবনে বড় হতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। সততা ও একাগ্রতা থাকতে হবে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, আমার যে ব্যবসা আছে, তা নিয়েই থাকতে চাই। কিছু ইউনিট বাড়ানোর কাজ চলছে। কিভাবে আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা যায় সে চেষ্টা করছি। আর আমার সবকিছুই মানুষের কল্যাণের জন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

যেভাবে আজকের সুবল সাহা: ১৯৫১ সালের ১৩ মার্চ পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত পার্শ্বডাঙ্গা গ্রামে সুধাংশু কুমার সাহা-সিন্ধু রানী সাহা দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাঁচ ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় সুবল সাহা। ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে মেট্রিক, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৭২ সালে ডিগ্রি পাস করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে চাল-ডালের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। এরপর পাবনায় তার পরিচিত বড় ভাই আতাউর রহমানের রাইস মিল, ডাল মিল ও তেল মিলের কারখানা দেখাশোনার পাশাপাশি তার সঙ্গে ঠিকাদারি করেন ১৯৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৯০ সালে চার বন্ধু সুবল সাহা,  ভজন কুমার সাহা, মাহাবুবুর রহমান ও নাজমুল হক মিলে নারায়ণগঞ্জের কিল্লারপুরে ছোট্ট পরিসরে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপন করে শুরু করেন ব্যবসা। নাম দেওয়া হয় উত্তরা ফেব্রিক্স। এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে চার বন্ধু একসঙ্গে গার্মেন্টস ব্যবসা পরিচালনা করেন ১৯৯৫-৯৬ সাল পর্যন্ত। তারপর ব্যবসার স্বার্থে আলাদা হয়ে যে যার মতো ব্যবসা শুরু করেন। তবে আলাদা হলেও চার বন্ধু প্রথম প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফেব্রিক্সের পার্টনারশিপ এখনও আছে। সেটি দেখাশোনা করেন মাহাবুবুর রহমান। অটুট আছে চার বন্ধুর সম্পর্কও। ১৯৯৭ সালের দিকে এসপি ফ্যাশন, এসপি নিটওয়্যার, এসপি ফেব্রিক্স, এসএম কটন ফেব্রিক্স সব মিলিয়ে এসপি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন সুবল সাহা।

রানা প্লাজা ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে সব কারখানা বন্ধ করে ২০০৮ সালে গাজীপুরে গিয়ে এএমসি নিট কম্পোজিট নামে একটি পুরোনো ফ্যাক্টরি কিনে নিয়ে নতুন করে শুরু করেন ব্যবসা। সেখানে এসপি ফ্যাশন নামে আরেকটি কারখানা তৈরি করেন। গাজীপুরের এ দুটি কারখানায় বর্তমানে কাজ করছেন ৩ হাজার ৩০০ জন কর্মচারী। তবে নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তার কোম্পানির করপোরেট অফিস। সেখানেও কাজ করছেন ৫০ জন কর্মচারী। তার কারখানায় চাটমোহরের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ব্যক্তি জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলে সজল ও মেয়ে সোমা দু’জনেই বিবাহিত। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন তারা। ২০১৮ সালে মারা যান সুবল সাহার স্ত্রী সবিতা সাহা।

আলাপকালে সুবল চন্দ্র সাহা জানান, আজকের সুবল চন্দ্র সাহার উঠে আসার পেছনে তার পরলোকগত স্ত্রী সবিতা সাহার সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে। আর তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তারা পাঁচ ভাই ও এক বোন। সুবল সাহার ব্যবসা উন্নয়নে তার ৪ নম্বর ভাই উত্তম কুমার সাহা ও ৫ নম্বর ভাই উদয় কুমার সাহার অনেকখানি অবদান রয়েছে বলে জানান।


পাবনা/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়