ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

উপহার সামগ্রী পৌঁছানো হলো সেই শাহীনূরের কাছে

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ১৫ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
উপহার সামগ্রী পৌঁছানো হলো সেই শাহীনূরের কাছে

‘কদিন ধইরা পোলাপাইনগুলারে একমুঠ চাইল গালাইয়া ফ্যান কইরা খাওয়াইতাছিলাম, এখন কদিন গেদা-গেদিগোরে ভাত দিবার পামু। দুই বেলা পেট ভইরা ভাত খাইবার পামু।’

দেশের শীর্ষস্থানীয় ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা উপহার পেয়ে এভাবেই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করছিলেন শাহীনুর বেগম।

শাহীনুর টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার পৌর এলাকার বন্দেভাটপাড়ার বাসিন্দা। সেখানে অন্যের পতিত জমিতে পলিথিন-বেত দিয়ে তৈরি ঘরে তিন সন্তান নিয়ে বাস করেন তিনি।

শাহীনুরের শ্বশুর বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার কুমারখালি গ্রামে। তার বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। বছর খানেক আগে স্বামী হারানো শাহীনুর সংসার চালাচ্ছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি করে। কিন্তু করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার পর থেকে তার উপার্জন বন্ধ। ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।

শাহীনুরের দূরবস্থা নিয়ে গতকাল বৃহষ্পতিবার (১৪ মে) ‘পোলাপাইন নিয়া না খাইয়া মইরা যামু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি।

প্রতিবেদনটি নজরে আসে রাইজিংবিডির উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিমের। তিনি তাৎক্ষণিক শাহীনুরের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই প্রতিবেদককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি উদয় হাকিম তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শাহীনুরের জন্য ২০ দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ সহযোগীতার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতেও শাহীনুরকে সাহায্য করার ঘোষণা দেন তিনি।

শুক্রবার (১৫ মে) সকালে শাহীনুরের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সেই উপহার তুলে দেন রাইজিংবিডির টাঙ্গাইলের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহরিয়ার সিফাত।

উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চাল, ডাল, আলু, তেল, লবণ, হলুদ-মরিচ, ডিম, সাবান ও নগদ টাকা।

শাহীনুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসে আছেন তিনি। পাশে বড় মেয়ে রোজিনা (৯) ও মেঝো ছেলে সাগর (৭) সামান্য চাল দিয়ে গলিয়ে করা ভাতের মাড় খাচ্ছে তারা। ছোট মেয়ে সাগরিকা (২) ঘুমাচ্ছে মায়ের কোলে।

উপহার সামগ্রী পেয়ে আনন্দে চোখ চকচক করে ওঠে শাহীনুরের। বাজারের ব্যাগ দেখে খাবার ফেলে রেখেই খুশিতে সেগুলো নামাতে থাকে মেয়ে রোজিনা।

এসময় শাহীনুর বলেন, ‘গেদির বাপ মরার পর বিক্ষা কইরা পোলাপাইনগুলারে দুইডা ডাল-ভাত খাওয়াইতাম। কিন্তু করোনার লাইগা গত দেড় মাস ধইরা বিক্ষা করবার যাইতে পারি না। যেখানেই যাইতাম, মাইনষে দূর দূর কইরা তাড়াইয়া দিতো। কামাই নাই তাই ঘরে খাওনও আছিলো না। খিদার জ্বালা বড় জ্বালা। এই জ্বালায় কোরোনা কী আর করবো? কয়দিন আগে একজনে কিছু চাইল ডাইল, তেল মশলা দিয়া গেছিলো। সেগুলা কয়দিন খাইছি। অহন হেইডাও বাড়ন্ত। এখন এই সদাই দিয়া কয়দিন পেট ভরা খাইবার পারুম।’

খাদ্য সহায়তা চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নে শাহীনুর বলেন, ‘মেলা বার মেম্বার রিপন মিয়ার কাছে গেছি, খালি কইছে দিবো দিবো। কিন্তু এতোদিনেও এক কেজি চাইলও আমাদের দেয় নাই। কয় সাহায্য পাইবার লাইগ্যা এহানের ভোটার হওন লাগে। আমাগের বাড়ি তো মেলা ফাঁকে, তাই কইয়া কি আমরা কিছু পামু না? হুনি সরকার মাইনষেরে ট্যাহা দেয়, চাইল-ডাইল দেয়, আমাগোরে তো কিছুই দেয় না। না খাইয়া অহন মরবার নিছিলাম।’

এদিকে আর কতো দূরবস্থা হলে শাহীনুরের মতো অসহায়রা সরকারী সহায়তা পাবে, এমন বিষয়ে জানতে চাইলে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতোটা সম্ভব স্বচ্ছভাবে অসহায়দের সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। হয়তো শাহীনুর এখানকার ভোটার না বলে তালিকায় স্থান পায়নি। তারপরও সে সাহায্য পাওয়ার যোগ্য। আর ইতোমধ্যেই প্রকৃত অসহায়দের নাম বাদ দিয়ে ওই এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করায় স্থানীয় কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রিপনকে শোকজ করা হয়েছে। আপনারা সাহায্য পৌঁছে দিয়েছেন, সে জন্য ধন্যবাদ। ২-১ দিনের মধ্যেই আমি নিজে উপস্থিত হয়ে শাহীনুরকে সরকারী সাহায্য পৌঁছে দেবো।’

এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

** ‘পোলাপাইন নিয়া না খাইয়া মইরা যামু’


টাঙ্গাইল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়