ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাগেরহাটে চিংড়ির সঙ্গে জড়িতরা চরম হতাশায়

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাগেরহাটে চিংড়ির সঙ্গে জড়িতরা চরম হতাশায়

বাগেরহাটে নানা কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চিংড়ি উৎপাদন। ফলে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন চিংড়ি শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লাখ চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক।

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে চিংড়ি শিল্পের ভবিষ্যত।

জানা গেছে,বাগেরহাট জেলায় ৬৬ হাজার ৭ শ ১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬শ ৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৬ হাজার ৫‘শ ৭৫ মে.টন বাগদা ও ১৫ হাজার ৪শ ১৩ মে.টন গলদা উৎপাদন হয়েছে।

চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে চিংড়ি উৎপাদনের মৌসুম শুরুর ৩ মাস আগে ২০১৯ সালে অক্টোবরে আবহাওয়াজনিত কারণে এক রাতেই প্রায় ৫০ কোটির গলদা চিংড়ি মারা যায়। এর কয়েকদিন পরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে চিংড়ি শিল্পে। এরই রেশ কাটতে না কাটতেই বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের কারণে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে নতুন করে ঘেরে চিংড়ির পোনা ছাড়তে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

আলাপকালে মৎস্য চাষি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চিংড়ি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু এ বছর যখন চিংড়ি মাছ বিক্রির সময় তখনই করোনা‘র প্রভাবে মাছ ক্রয় বন্ধ রয়েছে। আবার ঘেরে পোনা ছাড়ারও সময় এসেছে। এখন পানিও নেই। ঘেরের বিক্রি উপযুক্ত মাছের দাম নেই, পোনার দাম আকাশ চুম্বি। কি যে হবে আমাদের।'

চিংড়ি ব্যবসায়ী লিটন পরামানিক বলেন, ‘করোনার প্রভাবে বিদেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ। দেশের বাজারেও মাছের তেমন ক্রেতা নেই। কারণ বাগেরহাট থেকে অন্য কোথাও মাছ পাঠানোর সু ব্যবস্থা নেই। আমরা এক ধরণের বেকার অবস্থায় রয়েছি। অতিদ্রুত দেশ ও বিদেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমাদের না খেয়ৈ মরতে হবে।'

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেম ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি মো. মহিবুল্লাহ মিন্টু বলেন, ‘আমার ১২শ বিঘা জমির ৩টি ঘেরে গেল বছর প্রায় ৯০ লক্ষ বাগদার পোনা ছেড়েছিলাম। এ বছর মাত্র ১৫ লক্ষ পোনা ছাড়া হয়েছে। এবার পোনা সংকটের কারণে গত বছরের তুলনায় হাজার প্রতি ৬শ টাকা বেশি দিয়ে পোনা কিনতে হচ্ছে। যার ফলে চাহিদা অনুযায়ী পোনা ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে কম মূল্যে বাগদা চিংড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে।'

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘বৈরি আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জেলায় মোট চিংড়ির উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ মরার উপর খাড়ার ঘা‘ হয়ে দেখা দিয়েছে চাষিদের কাছে। এরই মধ্যে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় প্রায় আড়াই থেকে তিনশ কোটি বাগদার পোনা ও দেড় থেকে দুই কোটি গলদা চিংড়ি পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এবছর নানা কারণে তিন ভাগের একভাগ পোনাও পাওয়া যাচ্ছে না।'

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জোয়ার-জলোচ্ছাসে ভেসে গেছে ৪ হাজার ৬৩৫টি মাছের ঘের। এর আগেও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিংড়ি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে।'


বাগেরহাট/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়