ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

৯ দিন পার হলেও গ্রেপ্তার হয়নি গণধর্ষণের আসামিরা

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ১২ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
৯ দিন পার হলেও গ্রেপ্তার হয়নি গণধর্ষণের আসামিরা

‘আমার স্ত্রীর ইজ্জত হরণের মামলা করতে ওসি সাহেব খরচের কথা বলে আমার থেকে ৫হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি আসামিদেরকে ধরছেন না। স্ত্রীর ইজ্জতও গেল আমার টাকাও গেল।'

ক্ষোভে কষ্টে কথাগুলো বললেন, নোয়াখালীর কবিরহাটে গণধর্ষণের শিকার হওয়া এক গৃহবধূর স্বামী। তিনি তার স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলারও বাদী।

কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে স্বামীর সামনে থেকে গৃহবধূকে (২০) তুলে নিয়ে গণধর্ষণের পর ৯দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে তারা সবাই পলাতক, তাদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিন অভিযান চলছে। অপরদিকে থানায় মামলা দায়েরের জন্য ভয়ঙ্কর পরিনতি ভোগ করার হুমকি দিয়েছে মামলার আসামিরা। এ অবস্থায় ধর্ষণ মামলা করেও বেকায়দায় পড়েছেন ওই দম্পতি।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) কথা হয় ধর্ষণ মামলার বাদীর সাথে। তিনি জানান, ঘটনার পরদিন ৪ জুন সকালে কবিরহাট থানায় এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান ধর্ষণ মামলা না নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টার একটি অভিযোগ নেন। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে পৌঁছালে তাদের হস্তক্ষেপে গত ৬ জুন একটি গণধর্ষণ মামলা নেন ওসি। মামলা নথিভুক্ত করতে তার কাছ থেকে ৫হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পুলিশের বিরুদ্ধে আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের গ্রেপ্তারে গড়িমসি করার অভিযোগ তুলেছেন বাদী ।

তিনি বলেন, ‘গত সোমবার বিকালে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি আবুল কালাম, গিয়াস ও সোহেলকে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করতে দেখে ওসিকে ফোন করলে তিনি আসামি ধরতেছি, ধরবো বলে কালক্ষেপণ করছেন।'

বাদীর অভিযোগ, পুলিশ আসামিপক্ষের সঙ্গে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করার কারণেই আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছেনা। এদিকে আসামিরা মুঠোফোনে তাকে মামলা করায় ভয়ঙ্কর পরিনতির জন্য প্রস্তুত থাকার হুমকি দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলা করে এখন আমি চরম বেকায়দায় রয়েছি।'

এ ব্যাপারে কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আসামিরা এলাকায় নেই। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছেনা। তবে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে।'

মামলা নথিভুক্ত করতে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযাগ করতেই পারে, তবে তা কতটুকু সত্য তা দেখা উচিত।'

নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পুলিশ কোন মামলা রেকর্ড করতে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারপরও ধর্ষণ মামলার বাদীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকে তবে ওসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ জনগণের সেবক ও রক্ষক। এখানে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা কেউ পালন করলে তাকে কঠোর পরিনতি ভোগ করতে হবে।'

প্রসঙ্গত, মামলার বিবরণ অনুযায়ী- গত ৩জুন বিকেলে নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলার চর বৈশাখী গ্রাম থেকে জমি কেনার উদ্দেশে কবিরহাট উপজেলার পূর্ব নবগ্রামে স্থানীয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসেন ওই দম্পতি। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তারা আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় সমাজ কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামের নেতৃত্বে ৬-৭ জন গৃহবধূর আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দেন। ঘরে ঢুকেই ওই দম্পতির মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক থাকার কথা বলে তাদের বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চান। এক পর্যায়ে ওই দম্পতিকে জোরপূর্বক ঘর থেকে তুলে বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে তাদের একটি খোলা মাঠে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে গৃহবধূর স্বামী ও এক আত্মীয়কে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় আব্দুস সাত্তার গৃহবধূকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে গৃহবধূকে নেওয়ার জন্য তার খালাতো ভাই ও তার স্ত্রী এবং স্বামী এসেছে বলে ঘর থেকে বের করে স্থানীয় বেঁড়ি বাঁধে নিয়ে যায়। সেখানে নবগ্রামের আব্দুস সাত্তার, সোহেল, আবুল কালাম, রিপন, মাসুম, গিয়াস উদ্দিন ও নূর আলম তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

 

নোয়াখালী/সুজন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়