ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সৈকতে বর্জ্য: চল্লিশের বেশি কচ্ছপের মৃত্যু

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সৈকতে বর্জ্য: চল্লিশের বেশি কচ্ছপের মৃত্যু

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক বর্জ্য, মদের বোতল, ছেঁড়া জাল ও রশির কারণে এ পর্যন্ত ৪০টির বেশি কচ্ছপের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আঘাতপ্রাপ্ত ১১৬টি কচ্ছপকে সাগরের পানিতে অবমুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে চার দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বুধবার (১৫ জুলাই) থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বর্জ্য আপসারণ করা হবে।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার বিকেলে সৈকতে দরিয়ানগর থেকে প্যারাসেলিং পয়েন্ট পর্যন্ত আরও পাঁচটি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসে। এছাড়াও বিরল প্রজাতির একটি জীবিত কচ্ছপকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছে সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের সদস্যরা।

সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান সায়েম বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সৈকতের দরিয়ানগর থেকে পয়েন্ট থেকে প্যারাসেলিং পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচটি মৃত কাছিম ভেসে আসে। পরবর্তীতে প্রশাসনকে অবহিত করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিদুয়ান হাসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশারফসহ আমরা কয়েকজন মিলে কচ্ছপগুলোকে বালিয়াড়িতে পুঁতে ফেলি।

‘এছাড়া আরেকটি বিরল প্রজাতির কাছিম পাওয়া গেছে। স্পিড বোটে করে সেটিকে গভীর সাগরে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত চার দিনে সৈকতে ৫০ টনের অধিক বর্জ্য ভেসে এসেছে এবং ৩০ থেকে ৪০টি কাছিম মারা গেছে।”

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, “গত শনিবার থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য, বোতল, ছেঁড়া জাল ও রশি কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে। যা সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে শুরু করে সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর ও হিমছড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তীতে ইনানী সৈকত পর্যন্ত এসব বর্জ্য ভেসে এসেছে।

‘এটি পরিবেশ অধিদপ্তর শনিবার থেকে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত মনিটরিং করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- ভেসে আসা বর্জ্য ৫০ টনেরও বেশি হবে। এসব বর্জ্য অপসারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন এক সাথে কাজ করবে।”

অপরদিকে চট্টগ্রাম বনবিভাগের বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কক্সবাজার সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সাগরে বর্জ্য ভেসে আসার ঘটনায় কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে। তাই আমিসহ তিন সদস্যের একটি টিম রোববার (১২ জুলাই) কক্সবাজার সৈকতে যাই। সেখানে ৩০টি কাছিমের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হই। এছাড়া শতাধিকের বেশি কাছিমকে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এবং দুটি কাছিম চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে সৈকতের বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা বর্জ্যের অবস্থা দেখতে মঙ্গলবার বিকেলে পরিদর্শনে যান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রটোকল ও পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান জাহিদ খান। তিনি সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে প্যারাসেলিং পয়েন্ট পর্যন্ত বর্জ্যের অবস্থা দেখেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য রাখা হয়েছে বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য সম্পদ ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়াও হয়েছে।

এছাড়া ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে উচ্চতর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।


কক্সবাজার/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়