ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লঞ্চে জন্ম নেওয়া শিশু ও মা সুস্থ, আজীবন যাতায়াত বিনা ভাড়ায় 

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৪ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:৩৮, ৫ অক্টোবর ২০২০
লঞ্চে জন্ম নেওয়া শিশু ও মা সুস্থ, আজীবন যাতায়াত বিনা ভাড়ায় 

বরিশাল-ঢাকা রুটে একটি লঞ্চে এক সন্তান প্রসব করেছেন বাকেরগঞ্জের ফোরকান মিয়ার স্ত্রী ফাহিমা বেগম। নদীর ওপর জন্ম নেওয়া শিশু নুসাইবা এবং তার মা সুস্থ আছেন। এমভি অ‌্যাডভেঞ্চার-৯ নামে লঞ্চে জন্ম নিয়েছে বলে ওই নবজাতককে ‘অ‌্যাডভেঞ্চার কন্যা’ বলে অখ্যায়িত করেছেন অন্যান্য যাত্রীরা। আর মালিকপক্ষ ওই শিশু এবং তার বাবা-মার সারাজীবন বিনামূল‌্যে ওই লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। 

লঞ্চটি শনিবার (৩ অক্টোবর রাতে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালের উদেশ্যে ছেড়ে আসার সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর রাত ১২টায় ফাহিমার সন্তান প্রসব হয়। তখন লঞ্চটি মেঘনা নদী পার হচ্ছিল। সারারাত জুড়ে কৌতুহলী যাত্রীরা নবজাতককে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলো।

অ‌্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটির সুপারভাইজার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল গ্রামের বাসিন্দা ফোরকান হাওলাদার ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার স্ত্রী ফাহিমা বেগম গর্ভবতি ছিলেন। চিকিৎসদের ব্যবস্থাপত্রে এই মাসের ২২ তারিখ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরা ছিলো। তাই গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে আসার জন্য অ‌্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে বরিশালের উদেশ্যে রওনা হন ফোরকান ও তার স্ত্রী।’

‘কিন্তু রাত ১১টার দিকে ফাহিমা বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হয়। বিষয়টি লঞ্চ স্টাফরা জানাতে পেরে তারা প্রসূতি অভিজ্ঞদের সন্ধানে মাইকিং করেন। এসময় ওই লঞ্চের যাত্রী ছিলেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহনাজ শারমীন। তিনি আরেকজন নারীর সহযোগিতায় ফাহিমা বেগমকে দ্রুত লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ২১০ নং কেবিনে নিয়ে যান। এর ৪০-৪৫ মিনিট পর ফাহিমা একটি কন্য সন্তান প্রসব করেন।’

বরিশালে ফিরে শের-ই-বাংলা মেডিক‌্যাল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহনাজ শারমীন জানান, ‘আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা প্রথম। যদিও আমি একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, তবুও লঞ্চ স্টাফদের মাইকিং’র শব্দ শুনে আমি এগিয়ে যাই। আর কাজটি সম্পন্ন করে আমার কাছে খুব ভালই লাগলো।’ 

সদ্যজাত কন্যা সন্তানের পিতা ফোরকান হাওলাদার বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ আছেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, নদীর মধ্যে সাহায্যের জন্য আল্লাহ চিকিৎসকও পাঠিয়েছেন।’ 
তিনি লঞ্চ স্টাফ ও মালিকপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অ‌্যাডভেঞ্চার-৯ এর স্বত্ত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘অ‌্যাডভেঞ্চরে সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছে। তাই অ‌্যাডভেঞ্চার কন্যাকে দেখতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। তাই লঞ্চটির নামে নামকরণ করে ওই অ‌্যাডভেঞ্চার কন্যার নাম নুসাইবা। নবজাতক শিশু ও তার বাবা- মা আমার লঞ্চে যাতায়াত আজীবন ফ্রি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি এবং তারা ফ্রি যাতায়াত করতে পারবেন।’

জে. খান স্বপন/সাজেদ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়