ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডেইরি খামারে আফিলার ভাগ্যবদল

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৪:০৬, ২৬ অক্টোবর ২০২০

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিণ হাতুন্ডা গ্রাম। এই গ্রামের এক ছোট্ট কুঁড়েঘরে বাস করতেন আফিলা খাতুন।

অভাবের সংসারে চার সন্তান আর স্বামী নিয়ে খুব কষ্টে আফিলার দিন চলতো। কোনো সময় খেয়ে আবার কখনও না খেয়ে থাকতে হতো তাদের।

আরডিআরএস বাংলাদেশ নামে সংস্থার এক কর্মী মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে আফিলার সন্ধান পান। তিনি সেসময় আফিলাকে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী হবার পরামর্শ দেন।

তার কথা শুনে আফিলা ঋণ নিয়ে একটা গাভী কেনেন। এরপর স্বামী আর সে মিলে সেই গাভী পরম যত্নে পালন করতে থাকেন। এরপর আর আফিলাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই এক গাভী থেকে আফিলার গোয়ালে এখন সাতটি গাভী। রয়েছে একটি বাছুরও। সেই গাভীগুলোর দুধ বিক্রি করে আফিয়া এখন সফল ডেইরি খামারি।

আফিলার গল্পটা খুব সুন্দর শোনালেও এর পেছনের কাহিনীটা বেশ চ‌্যালেঞ্জের। এর পরতে পরতে রয়েছে আফিয়ার কষ্ট আর পরিশ্রমের ঘামে ভেজা এক সাফল‌্যের গাঁথা।

সেই কষ্টের গল্প শোনাচ্ছিলেন আফিলা। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আরডিআরএস-এর এনজিও কর্মী তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তার কথা শুনে ২০১২ সালে ১০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে একটি গাভী ক্রয় করেছিলাম। স্বামী বাছির মিয়া ও আমি মিলে সেই গাভীর দুধ বিক্রি করতাম। সেই থেকে সফলতা আসতে শুরু করে। বর্তমানে সাতটি গরু থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। প্রতি লিটার দুধ ৫৫ টাকায় মিষ্টির দোকানিরা ক্রয় করে। গরুর খাদ্য হিসেবে চাষ করা নেপিয়ার জাতের ঘাস, খড়, ভুসি দিই। এসব খেয়ে গাভীগুলো মোটাতাজা হয়ে দুধ দেয়। এতে আমাদের খরচ কম পরে জন‌্য লাভটা ভালো থাকে।’

আফিলা আরও বলেন, ‘বর্তমানে এ খামারটিকে এগিয়ে নিতে আরডিআরএস বাংলাদেশ চুনারুঘাট শাখা অফিস থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ টাকার সঙ্গে কিছু যোগ করে আরও তিনটি গাভী গরু ক্রয় করা হয়েছে। এভাবে দিন দিন খামারটিকে এগিয়ে নিতে আমার স্বামী ও আমি মিলে কঠোর শ্রম দিচ্ছি। আশা করছি ভবিষতে আরও ভালো হবে।চেষ্টায় সুফল পাওয়া যায়। এটার প্রমাণ পাওয়া হাতে-নাতে পেয়েছি। আরও এগিয়ে যেতে সবার দোয়া চাই।’

আফিলার স্বামী বাছির মিয়া বলেন, ‘এ খামার গড়ে উঠার পিছনে স্ত্রী আফিলা খাতুনের বিরাট অবদান। সে সার্বক্ষণিক খামার দেখভাল করে। বর্তমানে খামারের আয়ে পরিবার নিয়ে সৎপথে বেঁচে আছি। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করাচ্ছি। আমদের কুঁড়ে ঘরের পরিবর্তে পাকা ঘর করতে পেরেছি। সংসারে তেমন অভাবও নেই। পরিশ্রম করতে পারলে সংসারে আয় উন্নতি যে হয়, এটা এখন বুঝতে পারছি।’

আরডিআরএস’র কর্মী আফিয়া খাতুন জানান, ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে পরিশোধ করায় এবার ৭ লাখ টাকার নতুন ঋণ দেওয়া হয়েছে আফিলা খাতুনকে। কঠোর পরিশ্রম করায় তার ডেইরি খামার অনেক এগিয়েছে। এ কারণে অত্যন্ত ভাল লাগছে।

আরডিআরএস বাংলাদেশ’র শায়েস্তাগঞ্জ এলাকার এলাকা ব্যবস্থাপক মো. আজহারুল ইসলাম জানান, আরডিআরএস বাংলাদেশ’র ঋণ নিয়ে আফিলা খাতুন একে একে গাভী গরু ক্রয় করছেন। গড়ে তুলেছেন ডেইরি খামার। এ খামার থেকে দুধ উৎপাদন হচ্ছে। বিক্রি করে আসছে অর্থ। এ টাকায় পুরো পরিবার আলোকিত হচ্ছে। বলতে গেলে তিনি একজন সফল খামারি।

খামারটির উন্নয়নে আমাদের পক্ষ থেকে ঋণ প্রদান অব্যাহত আছে। আমরা এমন নারীদের  ‍খুঁজে বের করে ঋণ দিচ্ছি। এ টাকায় তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেই সঙ্গে এসব কর্মমুখী নারীদের অনুকরণ করে বেকার নারী ও পুরুষরা বাড়ি বাড়ি কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারছেন। এক্ষেত্রে আরডিআরএস বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, হবিগঞ্জে রয়েছে হাওর ও পাহাড়। এসব এলাকার প্রায় বাড়িতেই গরু পালন করা হয়। এছাড়া, জেলার বিভিন্ন স্থানে খামার গড়ে উঠায় বেকার সমস্যাও দূর হচ্ছে। আফিলা খাতুনের সাফল্যের কথা জেনে অত্যন্ত ভাল লেগেছে। যেকোনো পরামর্শে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তার পাশে আছে।

হবিগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়