ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গৃহবধূকে শেকলে বেঁধে নির্যাতন

সাভার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ৫ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৮:১৩, ৬ নভেম্বর ২০২০
গৃহবধূকে শেকলে বেঁধে নির্যাতন

ঢাকার ধামরাইয়ে এক গৃহবধূর পায়ে শেকল পরিয়ে তাকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (৪ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ধামরাই উপজেলার সূতিপাড়া ইউনিয়নের বেলীশ্বর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার হন নাছিমা আক্তার নামের ওই গৃহবধূ। পরে তাকে উদ্ধার করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

নাছিমা আক্তার ও তার পরিবারের সদস‌্যরা অভিযোগ করেছেন, শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তাকে নির্যাতন করেছেন। গৃহবধূর স্বামী নুরুল করিম কাঞ্চন বেলীশ্বর গ্রামের রহিজ উদ্দিনের ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন—কাঞ্চনের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম ওলিদ, তার স্ত্রী রেনু বেগম ও মেয়ে রুমানা ইসলাম দিশা।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নাছিমা আক্তার জানান, দেবর রফিকুল ইসলাম ওলিদের মেয়ে দিশার সঙ্গে স্বামীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা তিনি জানতেন। মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির পাশে কাঞ্চন ও দিশা বেড়াতে গেলে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন তিনি। সন্ধ্যায় এ বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হলে তিনি রাগ করে হাতকোড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে যান। বুধবার সকালে ছেলেমেয়ের কথা মনে করে আবার শ্বশুরবাড়িতে যান। এ সময় দেবর ওলিদ, তার স্ত্রী রেনু ও মেয়ে দিশার সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এ সময় তারা দা-বটি নিয়ে তাকে মারতে এলে তিনি দৌড়ে বাড়ির বাইরে যান। কিন্তু রাস্তা থেকে তাকে ধরে কোমড়ে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে আনা হয় বাড়ির সামনে। পরে দড়ি দিয়ে সুপারির গাছের সঙ্গে বেঁধে ও পায়ে শিকল পরিয়ে নির্যাতন চালান তারা।

ভুক্তভোগীর মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘১০ বছর আগে মাইয়ারে বিয়া দেই। কাঞ্চনের আগের বউ একটা মাইয়া রাইখা মারা গেছে। বিয়ার এক বছর পর আমার মাইয়ার একটা পোলা হয়। নাছিমা তার সতিনের মাইয়াকে নিজের সন্তানের মতোই আদর করতো। হ্যারপরও নাছিমাকে তার স্বামী কাঞ্চন, দেবর ওলিদ ও তার স্ত্রী রেনু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। কাঞ্চনের সঙ্গে অনেক মাইয়ার অবৈধ সম্পর্ক আছে। হেইডার প্রতিবাদ করায় বুধবার ওরা আমার মাইয়ারে গাছের সাথে বাঁইধা নির্যাতন করছে। মাথার চুল ছিইড়া দিছে। সেপটিপিন দিয়া নাছিমার শইল্লে নির্যাতন করছে। হ‌্যার আগেও আমার মাইয়ারে নির্যাতন করছে কাঞ্চন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মাইয়ার নির্যাতনকারীদের সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মাইয়ার ওপর যারা নির্যাতন করেছে, তাদের শাস্তি চাই।’

নাছিমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ মেয়ের সংসার বাঁচাতে মীমাংসার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

তবে নাছিমার স্বামী মানিকগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিসের টেকনিশিয়ান নুরুল ইসলাম কাঞ্চন দাবি করেন, চার বছর ধরেই তার স্ত্রী মানসিক রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসাও করানো হয়েছে। মাঝেমধ্যেই স্ত্রী তাকে মারধর করেন। এমনকি কামড় দিয়ে আহত করেন। মঙ্গলবার তার সঙ্গে স্ত্রীর ঝগড়া হয়। ওই দিন প্রাইভেটকার ভাড়া করে স্ত্রীকে তার বাবার বাসায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরদিন সকালে নাছিমা তার বাড়িতে এসে ভাঙচুর করেন। এ সময় বাড়িতে থাকা ছোট ভাই ওলিদ ও তার স্ত্রীকে মারেন নাছিমা। এ সময় তিনি অফিসে ছিলেন। নাছিমাকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না, সেটা তিনি জানেন না।

তিনি অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে বিয়ের আগে আরেক জায়গায় নাছিমার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরও আরেকজনের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রাখতেন নাছিমা। এসব নিয়েই তাদের মধ্যে বিবাদ চলছিল।

মানসিক সমস্যা হলেই কাউকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা যায় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে কাঞ্চন বলেন, ‘কাউকে প্রাণে মারতে গেলে কিংবা ভাঙচুর করলে তাকে বেঁধে রাখা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে পুলিশও বেঁধে রাখে। আপনিও বেঁধে রাখবেন। এছাড়া, নাছিমা যখন ভাঙচুর করছিল তখন তার বাবা-মাকে ফোন করে জানিয়েছেন ওলিদ। তারাই নাছিমাকে বেঁধে রাখতে বলেন বলে জানিয়েছেন ওলিদ।’

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এখনো আমরা ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি নারী নির্যাতন ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা মামলা নেবো।’

সাব্বির/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়