কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ভিড় বাড়ছে তেঁতুলিয়ায়
মো. আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম
নেপাল এবং ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক দৃশ্য খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে। এ শৃঙ্গকে একপলক দেখতে এখন পর্যটকের ভিড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রতি বছর পর্যটকরা ছুটে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে। কেউ কেউ সরাসরি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যবেক্ষণ করেন। যাদের এসব সুযোগ হয় না তাদের জন্য দেশের মাটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অবলোকনের উত্তম জায়গা তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো।
প্রতিবছরই শীতের আগে আগে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তেঁতুলিয়া থেকে দৃশ্যমান হয় এ পর্বতশৃঙ্গ। তবে এবার অক্টোবরেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন এখানে।
প্রতি বছর ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দৃশ্যমান হতো কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু এবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা দৃশ্যমান হচ্ছে।
জানা গেছে, তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার।
বছরের এ সময়টাতে তেঁতুলিয়ায় মেঘ-কুয়াশামুক্ত আকাশের উত্তর-পশ্চিমে তাকালেই দেখা মেলে বরফাচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘার। রোদ পড়ে এর বরফ এমনভাবে ঝলমল করতে থাকে যে, সে এক অপরূপ দৃশ্য।
সূর্য উদয়ের পর কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়াটি প্রথমে কালচে-লালচে দৃশ্যমান হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ সৌন্দর্য পরিবর্তন হতে থাকে। তুষার শুভ্র বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যটকদের সামনে আর সুন্দর রূপ নিয়ে দৃশ্যমান হয়। বিকেলে সূর্যকিরণে ধরা দেয় পর্যটকদের সামনে।
চোখের কাছে ভেসে থাকা হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য যে কারোরই মন কেড়ে নেয়।
অনেকেই বলছেন, এ বছরের শুরু থেকে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকার ফলে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সরকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় মানুষ ঘুরতে বেরিয়েছে। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার খবর পেয়ে তেঁতুলিয়া ছুটে আসছেন অনেকে। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখেই ফিরতে না হয়, তাই অনেকেই আসছেন আবহাওয়ার আগাম খবর নিয়ে। আবার কেউ আসছেন খবর না নিয়েই। এতে করে প্রচুর পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে উত্তরের এ জেলা। এতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলসহ যানবাহনগুলো।
কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে কথা হয় আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাল ক্যামেরায় এ শৃঙ্গের ছবি তুলে আসছি। এ অঞ্চলের সৌন্দর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এখন প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসছে দেখে বেশ ভালো লাগছে। তেঁতুলিয়াকে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।
কথা হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জাকির হোসাইন তমাল, আব্দুল্লাহ মাহমুদ, মৌরি হাসান, তানিয়া হামিদ, কাশমিরা জাহান, নিশাত, লুবনা রহমান, তাহসানের সঙ্গে। তারা বলেন, বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে জেনেছি এ সময়টাতে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও হিমালয় দেখা যায়। তাই ছুটে এসেছি। কাছ হতে দেখতে পেয়ে খুব ভালো লেগেছে, মুগ্ধ হয়েছি। এ ছাড়াও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও দর্শনীয় স্থানগুলোও মুগ্ধ করার মতো। সময় পেলে আবার ছুটে আসব।
ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম জানান, তেঁতুলিয়া শান্তিপূর্ণ উপজেলা, তবুও পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তায় যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন এ জন্য এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সেবা দিচ্ছে পর্যটন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তেঁতুলিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম। ২০১৬ সালে ‘পর্যটন বিকাশে পর্যটকদের সেবায়’ স্লোগানকে ধারণ করে ৫ জন শিক্ষিত তরুণ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান গঠন করেন উদ্যোক্তা এস কে দোয়েল। পর্যটকদের কাছে সঠিক তথ্য দেওয়া ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে এরই মধ্যে বেশ সাড়া পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এস কে দোয়েল বলেন, ‘আমরা এখন পর্যটকদের এ অঞ্চলের সঠিক তথ্য প্রদান, আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট বুকিং, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, যানবাহন ব্যবস্থা, ট্যুরিস্ট গাইড প্রদানের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি। অনেক সময় পর্যটকরা সঠিক তথ্য বা ট্যুরিস্ট গাইডের অভাবে এ পর্যটন অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারেন না, সে লক্ষ্যেই আমাদের এ উদ্যোগ।’
এসএম