ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভয়ের কোনো কারণ নেই, নির্ধারিত সময়েই হবে নির্বাচন: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫  
ভয়ের কোনো কারণ নেই, নির্ধারিত সময়েই হবে নির্বাচন: তারেক রহমান

বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য মলিন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

একই সঙ্গে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “ভয়ের কোনো কারণ নেই— নির্ধারিত সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোটের মাঠে জনগণের পাশেই থাকবে বিএনপি।

আরো পড়ুন:

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই অভয় বাণী উচ্চারণ করেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত হন।

তারেক রহমান বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেবল ‘এক্সপেরিমেন্ট’ কিংবা ‘এক্সপেরিয়েন্স’ অর্জনের নির্বাচন নয়; এটি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বার্থ ও সম্ভাবনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত একটি নির্বাচন। একই সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত রাখার প্রশ্ন।”

তিনি বলেন, “অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের নির্বাচন আরো বেশি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। ভোটের মাঠে জনগণের সঙ্গেই থাকব।”

“১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ ইতিহাসের প্রতিটি গণআন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে— জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনতার বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে,” জোর দিলেন বলেন তারেক রহমান।

নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর, পাড়া-মহল্লা, অলিগলি ও রাজপথে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপি সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “এই নির্বাচনি মিছিলে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।”

আগামী দশককে ‘রূপান্তরের দশক’ হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এই চিন্তা নিয়েই বিএনপি দেশ গড়ার কর্মসূচি ও তার বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটির বেশি তরুণ, কোটি কোটি কৃষক-শ্রমিক এবং কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই বিএনপির লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারলেই আমাদের আগামীর প্রতিটি বিজয় দিবস আরো গৌরবান্বিত ও অর্থবহ হয়ে উঠবে।”

মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন আমাদের মহান বিজয় দিবস। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, কখনোই এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য মলিন হবে না।”

তবে একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশি-বিদেশি অপশক্তি এখনো সক্রিয় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের রূপ ও চেহারা বদলালেও তাদের চরিত্র বদলায়নি।”

“বাংলাদেশ কোনো হঠাৎ ভেসে ওঠা ভূখণ্ড নয়; লাখো শহীদের আত্মত্যাগ এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্মান-সম্ভ্রমের বিনিময়েই এই দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে অসংখ্য গল্প, বই ও কবিতা রচিত হয়েছে,” যোগ করেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল। তবে তিনি অভিযোগ করেন, পতিত ও পলাতক একটি চক্র নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। ইতিহাসকে দলীয় ইতিহাসে পরিণত করার এই অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার সুযোগ নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি এখন বিজয়ের নতুন ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

পরাজিত শক্তিকে মোকাবিলায় প্রতিশোধ নয়, বরং গণতান্ত্রিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি মনে করে, যতদিন জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হবে, ততদিন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে না।”

তিনি বলেন, জনগণকে ক্ষমতাবান করার পূর্বশর্ত হলো— জনগণের সরাসরি ভোটে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা। এ কারণেই বিএনপি সব সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।”

তারেক রহমান বলেন, “দেশের জনগণ সাক্ষী— অকারণ শর্ত ও নানা অজুহাতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী একাধিক চক্র বারবার নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। তবু সব বাধা উপেক্ষা করে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে।”

তবে ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের পক্ষের সাহসী সন্তান ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনাও সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।”

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করলে কারা খুশি হবে? নির্বাচন ছাড়া সরকার বহাল থাকলে কারা লাভবান হবে? জনগণের ভোটে সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কাদের স্বার্থ রক্ষা পায়— এই প্রশ্নগুলোর মধ্যেই ঘাতকদের পরিচয় লুকিয়ে আছে।”

সবশেষে তারেক রহমান বলেন, “মহান বিজয়ের সুফল প্রতিটি নাগরিকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আবারও জনগণের সহযোগিতা, সমর্থন ও সুযোগ প্রত্যাশা করছে।”

ঢাকা/আলী/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়