জনগণকে ভীত করার প্রচেষ্টা চলছে, সরকারের দায়িত্ব আশ্বস্ত করা: রিজওয়ানা
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে সুষ্ঠু একটা নির্বাচন। যেখানে শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোট দিতে পারবেন। এখন এটাকে ব্যাহত করার জন্য একটা শক্তি সমাজে কাজ করছে। এই শক্তিকে একইসঙ্গে আমাদের প্রতিহত করতে হচ্ছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে। প্রত্যাশার জায়গা থেকে আমরা বলে দিতে পারি, আমরা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বতঃস্ফূর্ত একটা নির্বাচনের দিকে তাকাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “অবশ্যই এটার বিপরীতে দেখতে পাচ্ছি; আরো বেশি প্রকট করে, প্রতিপক্ষ যে আঘাতগুলো হানছে সেগুলো আসলে রক্তাক্ত একটা সংঘাতময়, সেটার জন্য আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। একটা কথা জনগণের উদ্দেশে বলা দরকার, আমাদেরকে, জনগণকে ভীত করার একটা প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণকে আশ্বস্ত করা যাতে করে জনগণের মধ্যে ভয়ের সংক্রমণটা না হয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা খুবই দুঃখজনক বিষয়; প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় দেখা যায়; আমরা যুক্তি দিয়ে, তর্ক দিয়ে না করে হত্যাচেষ্টাকে একটা অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কাপুরুষোচিত। এটার মধ্যে তো কোনো বীরত্ব নেই। আপনার যদি শক্তি থাকে আপনি জনগণের মুখোমুখি হন, জনগণের মুখোমুখি কীভাবে হতে হয় একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তো সবার কাছে স্পষ্ট। সেটা না করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই যে একটা সংস্কৃতি চলে এসেছে, এটা কোনোভাবেই নতুন বাংলাদেশে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।”
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের নির্বাচন। আমরা খুবই আশা করছি, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে সুদৃড় একটা যাত্রা শুরু করব। এজন্য কেবল মাত্র একটা নির্বাচনই হচ্ছে না একটা গণভোটও হচ্ছে। যেখানে সংস্কার প্রশ্নে বড় কতগুলো বিষয়ে জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারবেন। এখন তার ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রের যাত্রাটা এবার পরিবর্তিত আকারে শুরু হতেই পারে।”
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “যখন থেকে আমরা স্বাধীন হলাম, তখন থেকেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার। প্রত্যাশা ছিল একটা বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার, অনেক বছর পরে এখন আবার মনে হচ্ছে ওই জিনিসগুলো আমরা অর্জন করতে পারিনি। পারিনি বলেই তো গণঅভ্যুত্থান হলো, পারিনি বলেই বিপ্লব হলো। আমরা আজকে এমন একটা সন্ধিক্ষণে আছি, যেখানে আমরা একটা শাসন ব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে নতুন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করব।”
তিনি বলেন, এটা তো সত্য কথা, ৫৪ বছর পরেও যখন একটা গণঅভ্যুত্থান হয়, তার অর্থ হচ্ছে ৭১ এর যে স্বপ্নটা আমাদের ছিল, যে বিশ্বাসটা আমাদের ছিল, যে প্রত্যাশাটা আমাদের ছিল, রাষ্ট্র সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আমরা আশা করি, নির্বাচনের মাধ্যমে একটা ভিত্তি স্থাপন হবে। যেই ভিত্তিটা গণতন্ত্রকে যেমন সূদৃড় করবে, তেমনি জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে। একটা বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্নটা আমাদের এখনো রয়ে গেছে অধরা, আমরা পূর্ণতার দিকে যাত্রাটা শুরু করতে পারব।”
সরকার জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, “একটা টেন্ডেন্সি দেখি খুব- আপনারা ব্যর্থ কিনা, আপনারা সফল কিনা। একটা এক-দেড় বছরের সরকারের ব্যর্থ আর সফলতার গল্পটা একটু অন্যভাবে বিচার করতে হবে। এ জন্য যে, আমরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন একেবারে ভেঙে পড়া অবস্থায় আমরা কাজটা শুরু করেছি। সেই ভেঙে পড়া অবস্থাকে জোড়া লাগিয়ে এই রাষ্ট্রকে আবার একটা যাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল আমাদের কাজ। আমরা সেই কাজটা করেছি। সেখানে আমি এই সরকারকে ব্যর্থ বা সফল কোনোটা বলারই সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না। এ সরকার তখনই সফল হবে যখন দেখা যাবে, যে উদ্দেশে নিয়ে এই সরকারের যাত্রা, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার করা এবং সংস্কার করা সেগুলো শেষ পর্যন্ত গিয়ে আমরা সফল হব।”
“নিরাপত্তা দেওয়ার যতটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি থাকে, সবটুকু স্বাভাবিক প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ের আঘাতটা নিয়ে, স্বাভাবিক প্রস্তুতির চেয়েও বেশি কিছু আমাদের নিতে হবে। কারণ প্রতিপক্ষ আরো বেশি সংগঠিত এবং সে পেছন থেকে আঘাত করছে। এই যে, পেছন দিক থেকে আঘাত, এটার বিপরীতে আমাদের আরো বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করছি আমরা। আমরা নিরাপত্তা আরো জোরদার করছি”, যোগ করেন উপদেষ্টা।
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ