ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিঃস্ব বাদ্য পরিবার

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৪:১১, ৫ ডিসেম্বর ২০২০
বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিঃস্ব বাদ্য পরিবার

বাস সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ কেড়ে নিয়েছে একই পরিবারের পাঁচ জনের প্রাণ। পরিবারের এমন হৃদয়বিদারক করুণ পরিণতিতে আত্নীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর চোখে মুখে শোকের মাতম। 

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে মানিকগঞ্জে দৌলতপুর উপজেলার মূলকান্দি এলাকায় বাস সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য, এক আত্মীয় ও সিএনজি চালক নিহত হয়েছেন। 

জানা গেছে, ৩ বছরের নাতনী রাধে বাদ্যকার ডায়েরিয়াজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা রওনা হন। দুপুরে দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সিএনজি ভাড়া করে তারা রওনা দেন। দৌলতপুর উপজেলার মূলকান্দি এলাকায় সিএনজি পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ভিলেজ লাইন নামের একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ দূর্ঘটনায় ঘটনা স্থলেই খুশি বাদ্যকার নিহত হন।

পরে সিএনজিচালকসহ ওই বাদ্য পরিবারের বাকি সদস্যদের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ছয় জনের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার চাষা ভাদ্রা গ্রামে। নিহতরা হলেন- হরেকৃষ্ণ বাদ্যকার (৬০), তার ছেলে গোবিন্দ বাদ্যকার (২৬), গোবিন্দর স্ত্রী ববিতা বাদ্যকার (২৫), মেয়ে রাধে বাদ্যকার (৩), চাচী খুশি বাদ্যকার (৬৪) ও ফুফাতো ভাই রাম প্রসাদ বাদ্যকার (৩৫)। 

সরেজমিনে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে  নিহতদের পরিবারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, হরে কৃষ্ণ বাদ্যকারের দুই মেয়ে অর্চনা ও মালতি বাদ্যকার পরিবারের বাবা, ভাই, ভাবি, ভাতিজি, চাচী ও চাচাতো ভাইকে হারিয়ে শোকে মূর্ছা যাচ্ছে। এলাবাসীও এমন ঘটনা যেন মেনে নিতে পারছেন না। হঠাৎ করে সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।
 
অর্চনা বাদ্যকার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বাবা ভাই চলে গেলো। এ পরিবারে আর কেউ রইলো না। আমরা দুই বোন দূরে স্বামীর বাড়িতে থাকি। এখন আমার মাকে কে দেখবে? 

অর্চনা বাদ্যকারের স্বামী রতন চন্দ্র দাস বলেন, রাধে কৃষ্ণের পরিবারে দুই মেয়ে ও স্ত্রী ছাড়া সবাই মারা গেছেন। এ পরিবারে আয় রোজগার করার মতো আর কেউ বেঁচে রইলো না। মেয়েদের স্বামীর বাড়িতে থেকে জীবনযাপন করার সুযোগ থাকলেও রাধে কৃষ্ণের স্ত্রীকে দেখার কেউ নেই। দুর্ঘটনায় নিহত ছয় জনের সৎকারের প্রস্তুতি চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ময়না তদন্ত ছাড়া মরদহ পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। 

গোবিন্দর বোন মালতী বলেন, আমার মাকে কে দেখবে? এভাবে কি কেউ চলে যায়? সবাই একদিন মারা যাবে। তাই বলে একদিনেই সবাইকে যেতে হবে? 

চাষা ভাদ্রা গ্রামের প্রতিবেশি আব্দুল সেলিম বলেন, এ পরিবারটি আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতো। বাপ-ছেলের হাতেই এ সংসারের হাল ছিল। তবে তারা একই দিনে মারা যাওয়ায় পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেলো। 

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লোকমান হোসেন জানান, এরা খুবই নিম্ন আয়ের মানুষ। এ পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্ট জীবনযাপন করতেন। তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের আয় রোজগার করার মতো সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। 

প্রতিবেশী আতাউর মন্ডল বলেন, এ বংশের লোকেরা বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে আয় করে সংসার চালাতো। তবে এ পেশায় আগের মতো আয় না থাকায় হরেকৃষ্ণ বাদ্যকার অটোভ্যান ও তার ছেলে গোবিন্দ স্থানীয় বাজারে নরসুন্দরের কাজ করে সংসার চালাতো। 

এ বিষয়ে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা জানান, বেপরোয়া গতিতে চলার কারণে বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বাস ও সিএনজি আটক করা হয়েছে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়