ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রামেক হাসপাতালে কৌশলী দালাল, বিপাকে রোগী 

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৯:৪৫, ৮ জানুয়ারি ২০২১
রামেক হাসপাতালে কৌশলী দালাল, বিপাকে রোগী 

রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তির অন্যতম একটি কারণ দালালের দৌরাত্ম্য।

এখানে সেবা নিতে এসে দালালের খপ্পরে পড়েননি এমন সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা হয়তো খুবই কম। তাদের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেমন বিপাকে পড়ছেন; তেমনি এদের অপতৎপরতার শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরাও। গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাই এদের প্রতারণার প্রধান শিকার।

আরো পড়ুন:

দালালের দৌরাত্ম্য থেকে সাধারণ রোগীদের রক্ষায় মাঝে মাঝেই অভিযান পরিচালনা করছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারও দালালি শুরু করছে এ দালালচক্র। আটছে বিভিন্ন ফন্দি ফিকির।

সর্বশেষ গত বছরের বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনে থেকে নারীসহ ১৪ জন দালালকে গ্রেপ্তার করে, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। এরা দীর্ঘ দিন ধরে মিধ‌্যা প্রলোভন দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে নিয়ে যেতেন। ভয়-ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন কৌশলে রোগীদের সরলতার সুযোগ নিতো এই বেপরোয়া দালালচক্র।

এমন অভিযানের পরও করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দালালরা। ওয়ার্ডগুলোর সামনে রোগী ও তার স্বজনরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তারা। ব্যবস্থাপত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানালে অশালীন মন্তব্যসহ গালিগালাজ করতেও দেখা যায়। অথচ রোগীদের এমন বিড়ম্বনায় পাশেই দাঁড়িয়ে দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন, কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। রোববার (৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

এদিন, বেলা ১২টার দিকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে হাসপাতলের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন, রাজশাহীর নওগাঁ জেলার ধামইরহাটের বাসিন্দা গৃহবধূ নুরুন্নাহার বেগম। তিনি ডাক্তারের দেওয়া টেস্টগুলো করাতে মেডিক‌্যালের প্যাথলজি বিভাগ খোঁজাখুঁজি করছিলেন। এসময় তার চাহুনি দেখে কয়েকজন দালাল তার পিছু নেয়। কৌশলে তাকে মেডি‌ক‌্যালের বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। দালালের খপ্পরে পড়েছেন এমনটি বুঝতে পেরে তিনি উঁচুস্বরে বাইরে টেস্ট করাবেন না বলে দ্রুত গতিতে প্যাথলজি বিভাগে ঠুকে যান।

পরে তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এর আগে তিনি চিকিৎসা সেবা নিতে এসে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। সে সময় তাদের কথামতো বাইরে টেস্ট করাতে গিয়ে দালালচক্র তাকে প্রতারিত করেছিলো। তাই তিনি টেস্ট করাবেন না বলে দ্রুত গতিতে তাদের থেকে সরে যান। নুরুন্নাহারে মতো এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

রোগীদের অভিযোগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদেরই টার্গেট করে এরা। রোগী ও স্বজনদের অস্থির দেখলেই দালালরা তার পিছু নিচ্ছে। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না বা টেস্ট করা হয় না এমন ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করে তাদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিচ্ছে দালালরা। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সঙ্গবদ্ধ দালালদের ভয়ে থাকতে হয় সাধারণ রোগীদের। এছাড়া, আনসার সদস্যদের সঙ্গে দালালদের সখ্যতা রয়েছে দাবি করছেন অনেক রোগী।

এদিকে, সরকারি হাসপাতালে দালালের এমন দৌরাত্ম্য থাকলেও বেসরকারি হাসাপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিকসেন্টারগুলোতে নেই রোগী ভাগানোর এমন অপতৎপরতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও দালাল তৈরিতে এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ি করছেন।

আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় দালালদের দমন করা যাচ্ছে না দাবি করে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দালাল চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালদের অপতৎপরতা রুখতে প্রায়শই অভিযান চালিয়ে তাদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তারা ঠিকই বেরিয়ে আসে। তারা আবার দালালি শুরু করে।

উপ-পরিচালক আরও জানান, হাসপাতালে দালালদের উৎপাত রোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। হাসপাতালে কিছু টেস্ট রোগীদের বাইরে করাতে হতো। সেটা আমরা হাসপাতালের ভেতরেই করানোর ব্যবস্থা করবো। কেননা এসব দালালদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই কমিশনের বিনিময়ে মাঠে নামাচ্ছে। হাসপাতালে সকল টেস্টগুলোর ব্যবস্থা করা হলে শতভাগ দালালমুক্ত না হলেও অনেকটাই কমে আসবে।

রাজশাহী/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়