ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হবিগঞ্জের বিআরটিএ অফিসে সেবা পেতে হয়রানি

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১১:২১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
হবিগঞ্জের বিআরটিএ অফিসে সেবা পেতে হয়রানি

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হবিগঞ্জ সার্কেল অফিসে সেবা নিতে এসে দালাল চক্রের খপ্পরে পরছেন সেবা গ্রহীতারা। ফলে একদিকে যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা অন‌্যদিকে সরকার থেকে নির্ধারিত অর্থের থেকে বেশি খরচ করতে হচ্ছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠছে দালাল চক্রটি। ওই অফিসে দালালদের কর্তৃত্ব এতটাই যে তাদের ছাড়া কোনো কাগজপত্রই ইন-আউট হয় না। কিছুদিন আগে দালালদের লাগাম টানতে বিআরটিএ অফিসে ক্লোজড্‌ সার্কিট টিভি ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন করা হয়। সেসময় দালালদের উৎপাত কিছুটা কমলেও সম্প্রতি আবারও বেড়েছে তাদের অবাধ বিচরণ।

এদিকে,  রহস্যজনক কারণে অফিসের সিসিটিভি অকেজো হয়ে পড়েছে। যার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দালালরাচক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথমে সরকার নির্ধারিত ৫শ’ ৩৮ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। পরে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আরও দুই হাজার ৩শ’ টাকা জমা দিতে হয়। সব মিলিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একজন ব্যক্তির খরচ হয় দুই হাজার ৮শ’ ৩৮ টাকা। কিন্তু হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিস থেকে হালকা যানবাহনের এ লাইসেন্সটি পেতে গ্রাহককে গুনতে হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

এছাড়াও প্রতিটি সিএনজি’র লাইসেন্স, রোড পারমিট ও গাড়ির নম্বর প্লেটের জন্য সরকারি নির্দেশনা মতে জমা দিতে হয় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা। আর এখানে গ্রাহককে গুনতে হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত টাকাগুলো যায় দালাল ও অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে।

এমন তথ্য জানিয়ে জেলা শহরের বাসিন্দা রাসেল মিয়া বলেন, ‘হালকা যানের লাইসেন্স করার জন্য হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে একাধিক দিন গিয়েছি। অবশেষে উৎকোচ দেওয়ায় লাইসেন্স হয়। কিন্তু লাইসেন্স দিতে কর্তৃপক্ষ বিলম্ব করছিল। এক পর্যায়ে সাংবাদিককে দিয়ে এসব অনিয়মের তথ্য দিয়ে পত্রিকায় সংবাদ করানোর কথা বললে, দ্রুত লাইসেন্স পাই। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দালাল চক্রকে।  এদের খপ্পরে পড়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।’

রাসেল মিয়া জানান, হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের এ সমস্যা একদিন বা দুই দিনের নয়। বছরের পর বছর ধরে দালালদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সেবা গ্রহীতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক কর্মী জানান, সিসিটিভি থাকলেও দালালদের বিচরণ রয়েছে। ফলে আগের মতো আবারও বেড়ে গেছে বিআরটিএ অফিসে গ্রাহক হয়রানি।

তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বিআরটিএ হবিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. নুরুজ্জামান। তিনি জানান, দালাল নির্মূল করতে বিআরটিএ অফিস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া আছে। বিআরটিএ অফিসের সিসিটিভি সচল রয়েছে। কেউ দালাল ধরে দিলে তাকে গরু জবাই করে খাওয়া হবে।

এদিকে, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বিআরটিএ অফিসে বেশ কিছু অভিযান চালান। প্রতি অভিযানেই ১ থেকে ২ জনকে আটক করে জেল জরিমানা দিয়েছেন তিনি। দালাল নির্মূলে সম্পূর্ণ অফিসকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসেন তিনি। এতে কিছুদিনের জন্য বিআরটিএ অফিসে বন্ধ হয়ে যায় তাদের আনাগোনা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, শুধু বিআরটিএ অফিসই নয়, যে কোনো অফিস থেকে দালাল নির্মূল করতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে দালালদের জেল-জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে।

হবিগঞ্জ/বুলাকী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়