ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কারাগারের পরিবর্তে বাড়িতে সায়মার সন্তান প্রসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ১৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৬:৪২, ১৪ মার্চ ২০২১
কারাগারের পরিবর্তে বাড়িতে সায়মার সন্তান প্রসব

নবজাতককে কোলে নিয়ে আদর করছেন শিল্পী বেগম, পাশে মা সায়মা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ছোট নারায়ণপুর গ্রামের দণ্ডপ্রাপ্ত সায়মা (৩০) কারাগারের পরিবর্তে নিজ বাড়িতে সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছেন। এতে খুশী মামলার বাদী ও আসামিপক্ষ। বাদী শিল্পী বেগম নবজাতক ছেলে সন্তান কোলে নিয়ে আদর করেছেন।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) সায়মা সন্তান প্রসব করেন। এই খবর জানাজানি হলে অনেকে সায়মার সন্তানকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন। সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সায়মাকে একটি গাভীও দেওয়া হয়েছে। এতে খুশি সায়মার পরিবার।

গত ১২ নভেম্বর মারামারির মামলায় সায়মা ও তার স্বামী জাকির হোসেনের ব্যতিক্রমী সাজা দেন রাজশাহীর একটি আদালত। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম এই দম্পতিকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে এক বছরের জন্য প্রবেশনে থেকে সংশোধনের সুযোগ করে দেন। এই শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের স্থগিত হওয়া সাজা ভোগ করার জন্য কারাগারে যেতে হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশীদ বাবু বলেন, আইনে প্রবেশন হচ্ছে কোনো আসামির প্রাপ্ত দণ্ড বা শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বাসায় পারিবারিক পরিবেশে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া

ছোটখাট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামিরা নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন। আর আপিল মামলা কমায় একদিকে মামলার জট কমছে, অন্যদিকে কারাগারে আসামির চাপও কমছে।

মামলার প্রবেশনাধীন আসামি জাকির বলেন, ‘সংশোধনের সুযোগ পেয়ে আদালতের দেওয়া শর্তগুলো মেনে চলছি। দুইজন প্রবেশন অফিসার সব সময় আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এরইমধ্যে আমরা উভয়পক্ষ (বাদী ও আসামিপক্ষ) আগের রাগ-ক্ষোভ ভুলে মিলমিশে পাশাপাশি বসবাস করছি।’ 

মামলার বাদী ও ভিকটিম শিল্পী বেগম বলেন, ‘ওরা ওদের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আমিও ক্ষমা করে দিয়েছি। নবজাতক শিশুটি তো নিষ্পাপ। ওই শিশুটি কারাগারে চার দেয়ালের ভেতর ভূমিষ্ঠ না হয়ে বাড়িতে জন্ম হওয়ায় আমরা খুশী।’ 

নারী আসামির জন্য নারী প্রবেশন অফিসার নিযুক্তির বিধান থাকায় সায়মাকে সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজশাহী সেফ হোমের উপ-পরিচালক (ডিডি) লাইজু সিদ্দিক। তিনি জানান, আসামিরা প্রবেশনে যাওয়ার পর নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করছেন। প্রবেশনের এক বছরের মধ্যে পাঁচ মাসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা প্রবেশনের সুযোগ পেয়ে বাদীপক্ষের সঙ্গে মীমাংসা করে ফেলেছেন। অবসান হয়েছে দীর্ঘদিনের শত্রুতার। আর এই সময় এই নবজাতকের জন্ম হওয়ায় আপস করা আরও সহজ হয়েছে।

আসামি জাকিরের প্রবেশন অফিসার মতিনুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু আসামিরা প্রবেশনে থেকে সব শর্ত পূরণ করেছেন এবং উভয়পক্ষ আপসে সহাবস্থান করছেন, সেহেতু পরবর্তী ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ভালো সুপারিশ করে বিজ্ঞ আদালতের কাছে রিপোর্ট করবো।’ তাদের সংশোধন করার চেষ্টার পাশাপাশি পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাদের একটি গরুও কিনে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রবেশন অফিসার মতিনুর রহমান।  
 

তানজিমুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ