ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সম্মান বাঁচাতে ৩৩৩-এ কল করে সম্মান হারানোর গ্লানি

হাসান উল রাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৫ মে ২০২১   আপডেট: ১৮:০০, ২৫ মে ২০২১

সম্মান হারানোর ভয়ে পাড়া প্রতিবেশী বা স্বজনদের কাছে হাত পাততে পারেননি। সম্মান বাঁচিয়ে সরকারিভাবে গোপনে খাদ্য সহায়তা পেতে তাই ফোন করেছিলেন ৩৩৩ নম্বরে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সম্মান বাঁচাতে গিয়ে সম্মান হারালেন। উল্টো জরিমানা হিসেবে ১০০ অভাবি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে হলো নারায়ণগঞ্জের ফরিদ আহমেদ শেখকে।

চারতলা ভবন ও হোসিয়ারি কারখানার মালিক ভেবে জরিমানা দিতে তাকে বাধ্য করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা। 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নাগবাড়ী এলাকায় বাড়ি ফরিদ আহমেদের। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া চার তলা ভবনের চতুর্থ তলায় দুটি কক্ষে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

তিন বার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে তার। ১৬ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ছেলে রিপাদ, বিবিএ পড়ুয়া মেয়ে সামাইয়া ও স্ত্রী হিরন বেগমকে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। 

ছয় ভাই ও এক বোন পৈত্রিক চার তলা বাড়িটির ওয়ারিস। ফরিদ আহমেদের ভাগে পড়েছে মাত্র দুটি কক্ষ। বয়স হয়েছে। চোখেও কম দেখেন। নাগবাড়ি এলাকায় আবুল হোসিয়ারিতে মাত্র আট হাজার টাকা মাসিক বেতনে শ্রমিকদের কাজ দেখাশুনা করেন। 

ফরিদ আহমেদের সামান্য এ উপার্জনেই চলে সংসার। এর মধ্যে ছেলে, তার নিজের ও স্ত্রীর জন্য প্রতি মাসে ওষুধ কিনতেই বেরিয়ে যায় উপার্জনের বেশিরভাগ অংশ। বাকি টাকায় কোনোমতে চলে সংসার। প্রশাসনের এমন নির্দয় সিদ্ধান্তে সম্মান হারিয়ে চরম লজ্জার মধ্যে পড়েছেন ফরিদ আহমেদ।

অভাব থাকলেও আত্মসম্মানের কারণে কারও কাছে হাত পাতেনি পরিবারটি। অথচ ভেতরে ভেতরে চরম দুর্দিনে ছিলেন তারা। গোপনে সাহায্য পেলে সম্মানও বাঁচবে, পরিবারের সবার খাওয়া দাওয়ার চিন্তাও ঘুঁচবে। কিন্তু তাতো হলোই না উপরন্তু জরিমানা গুণতে হলো। জরিমানা না দিতে পারলে তিন মাসের জেল। খাদ্য সহায়তা চেয়ে জেলে যেতে হবে। এই ভাবনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদ আহমেদ। 

স্বামীর সম্মান বাঁচাতে ও জেল থেকে রক্ষা করতে তাই বড় মেয়ে কাছে ছোটেন হিরন বেগম। মেয়ের স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে ১০০ পরিবারকে খাদ্য কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। 

টাকা গেলে টাকা আসবে। কিন্তু সম্মান গেলে তা কী আর ফিরে আসবে? এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হিরন বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মনের কষ্ট পাথর চাপা ঝর্নার মতো কান্না হয়ে বেরিয়ে আসে তার।

আরও পড়ুন: শাস্তির ভয়ে ঋণ করে ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা

প্রশাসনের এমন হঠকারি সিদ্ধান্তে ফরিদ আহমেদের পরিবারের সম্মানহানি করা হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে আরও খোঁজ খবর করা দরকার ছিল বলে মনে করছেন তারা।

এলাকাবাসীর মতে, প্রশাসনকে তথ্য দিতে গিয়ে তিন বার ব্রেইন স্ট্রোক করা ফরিদ আহমেদের ভুল হতে পারে। তিনি চার তলা বাড়ি ও কারখানার মালিক এটি ভুল তথ্য। 

ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন- এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৬ মে বুধবার তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া ফরিদ আহমেদের খরচ হওয়া টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ/সনি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়