ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গরু রক্ষায় দল বেঁধে পাহারা

গাজীপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ১১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:৪৬, ১১ জুলাই ২০২১
গরু রক্ষায় দল বেঁধে পাহারা

গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ইউনিয়নে চোরদের কবল থেকে কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা গরু রক্ষার জন্য গ্রামবাসি রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছে।

উপজেলার গোসিংগা নামের এ ইউনিয়নে অন্তত ১২ থেকে ১৫টি স্থানে দল বেঁধে পাহারা দেওয়া চলছে মাস দেড়েক ধরেই। কোরবানির ঈদ এলেই গরু চুরির হিড়িক পড়ে। তাই ভয়ে আগে থেকেই এ ব্যবস্থা করেছেন গ্রামবাসিরা।

অনেক কৃষক ও মৌসুমি ব্যবসায়ি কোরবানিকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে আলাদা টাকা উপার্জনের জন্য পশু লালন পালন করেন। অনেক সময় সেটি চুরি হলে অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা।

গ্রামবাসিদের এ পাহারাতে পুলিশ নিয়মিত সহযোগিতাসহ নানা পরার্মশ দিয়ে খামারিদের পাশে রয়েছেন বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পাহারার পর থেকে কোনো গরু চুরির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান গ্রামবাসি।

জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মোড়ে মোড়ে ৭/৮ জনের একটি করে দল লাঠি টর্চলাইট হাতে পাহারা দিচ্ছেন। তাদের সবাই আশপাশের অন্য দলের পাহারাদারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করেন। যুবক মধ্য বয়সী স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরাও রাত জেগে পাহারায় অংশ নিচ্ছেন।

বাউনি, হায়াতখার চালা, কাইচ্চাবাড়ি, পটকা, কর্নপুর, খিলপাড়া, পেলাইদ এলাকায় পাহারার দৃশ্য চোখে পড়ে। সড়কে চলাচলকারি কোনো মানুষ বা যানবাহন সন্দেহ হলে তাদের গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্দেহ না কাটলে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তাদের এই কাজে নিয়মিত উৎসাহ দেন টহলরত পুলিশ সদস্যরা।

বাউনি এলাকায় একটি পাহারাদার দলের দলনেতা আরিফ রাব্বানী। তিনি ৭/৮ জনের একটি দল নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এ দলে যুবকসহ বয়স্ক পুরুষ সদস্যরাও আছেন।

দলনেতা আরিফ রাব্বানী জানান, মাসখানেক আগেও প্রচুর গরু চুরি হয়েছে এ সব অঞ্চলে। সামনে কোরবানির ঈদ। এই সময় গরু চুরির আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। গত কয়েক বছর অনেক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তাই এবার এলাকাবাসি জনপ্রতিনিধিরা পরামর্শ করে গরু চুরি ঠেকানোর জন্য রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খিলপাড়া সরকার বাড়ি এলাকায় ১২টি দলের পাহারা চলে পালাক্রমে। ওই এলাকার ১১ নম্বর দলের প্রধান সেলিম সরকার। তিনি বলেন, নিয়ম করে প্রতিদিন রাত ১১ টা খেকে ভোর সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত পাহারা চলে। প্রত্যেক দলের প্রধান রয়েছে। সবার কাছে তালিকা রয়েছে কবে কার দলের পাহারা। সে দিন নিজ দায়িত্বে সবাই পাহারাতে উপস্থিত থাকে। মাঝে মধ্যেই পুলিশের টহল টিম আমাদের খোঁজ খবর নিতে আসেন। ওসি সাহেবও আসেন কখনো কখনো।

তিনি বলেন, পাহারা শুরু হওয়ার পর একটি চুরির ঘটনাও ঘটেনি। অন্য বছরে এ সময় চুরির হিড়িক পড়ে যেতো।

কৃষক আহসান হাবিব বলেন, গ্রামের কৃষকের ঘর থেকে একটি গরু চুরি হওয়া মানে অনেক বড় ক্ষতির মুখে পড়া। অনেকেই সারা বছর ধরে কষ্ট করে গরু লালন পালন করেন কোরবানি ঈদের হাটে ভালো দামে বিক্রি করবেন এ আশাতে। অনেকে এ টাকায় নানা স্বপ্ন বুনে থাকেন। ধারদেনা শোধ করেন।

কলেজ শিক্ষার্থী মাহিদুল হাসান বলেন, সবার সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দিতে ভালোই লাগে। মাঝে মধ্যে দলনেতারা ভোজের আয়োজন করেন। এতে আনন্দ বাড়ে। পুলিশ খবর রাখে নিয়মিত। সবার মিলিত কষ্টের কারণে চুরি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। কৃষকরা নির্ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন গোয়ালে গরু রেখে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, স্থানীয় কৃষক ব্যবসায়িদের মোটাতাজা করা গরু চুরি ঠেকাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টহল জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগেও রাতে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করে। নিয়মিত তাদের খোঁজ রাখে পুলিশের টহল টিম।

রফিক সরকার/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়