রূপগঞ্জে নিখোঁজ ৫১ হলেও মর্গে ৪৯ লাশ, যা বলছে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে পুলিশের মামলার এজাহারে নিখোঁজের সংখা ৫১ জন উল্লেখ করা হলেও লাশ উদ্ধার হয়েছে ৪৯টি। সেই হিসেবে লাশ ও নিখোঁজের সংখ্যায় ২টি লাশের হিসেবে গড়মিল রয়েছে।

তবে পুলিশ বলছে নিখোঁজের অভিভাবকদের দেওয়া তথ্যে ৫১ জনের নাম ঠিকানা পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ করা হয়। নিখোঁজ ও লাশের সংখ্যার সাথে গড়মিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অগ্নিকান্ডের প্রথমদিন ৮ জুলাই রাতে আগুনে আহত মীনা আক্তার (৩৪), স্বপ্না রানী (৪৪) ও মোরসালিন (২৮) নামে তিন শ্রমিকের হাসপাতালে মৃত্যু হয়। নিহত এ তিনজন ছাড়াই পুলিশের তালিকায় নিখোঁজ ৫১ জন।

পুলিশ বলছে, অগ্নিকান্ডে কারখানার ছয়তলায় ৩৬ ঘন্টার বেশি সময় আগুন থাকায় হয়তো লাশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, নয়তো অভিভাবকদের ৫১ জনের তালিকা করার পর কোন শ্রমিক জীবিত বাড়ি ফিরে আসলেও তারা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেনি। আবার নিখোঁজ একই শ্রমিকের নাম দুবারও তালিকায় দিতে পারেন অভিভাবকরা।  

এদিকে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৫ জন স্বজন লাশ শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিয়েছে। আরও চারটি লাশের স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ বাকি রয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।

পুলিশের মামলার এজাহারে নিখোঁজ ৫১ জনের নামের তালিকায় রয়েছেন- (১) ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার গোলাম হোসেনের ছেলে মহিউদ্দিন (২) একই থানা এলাকার মো. খাইরুল ইসলাম (৩) একই থানা এলাকার ইসমাইলের মেয়ে হাফেজা বেগম (৪) নারায়ণগঞ্জের হাকিম আলীর মেয়ে ফিরােজা বেগম (৫) কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম (৬) একই এলাকার স্বপনের মেয়ে সাহিদা বেগম (৭) মৌলভীবাজার জেলার পরবা বর্মনের মেয়ে কম্পা বর্মন (৮) কিশােরগঞ্জ জেলার তাইজুদ্দিনের মেয়ে রাত্রি (৯) কিশোরগঞ্জ জেলার মাইয়েমের মেয়ে খাদিজা বেগম (১০) নেত্রকোনা জেলার জাকির হোসেনের মেয়ে শান্ত মনি (১১) নবীগঞ্জ থানার সেলিমের স্ত্রী উর্মিতা বেগম (১২) কিশোরগঞ্জের কাইয়ুমের মেয়ে আকিমা বেগম (১৩) মুরালীপুর থানার কবিরের মেয়ে হিমা (১৪) রংপুরের স্বপন (১৫) কিশোরগঞ্জের মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা বেগম (১৬) রূপগঞ্জ থানা এলাকার রাজিবে স্ত্রী আমেনা বেগম (১৭) কিশোরগঞ্জের আব্দুর রশিদের মেয়ে মিনা (১৮) কিশোরগঞ্জের সুজনের মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৯) চাঁদপুরের আছান উল্লাহ ছেলে  পারভেজ (২০) ওই কারখানার সেকশন ম্যানেজার রাজশাহীর শুকুলের ছেলে মাহাবুব (২১) গাজীপুরের সেলিম মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া (২২) ভোলা জেলার মান্নান মাতবরের ছেলে মোঃ মামুন মিয়া (২৩) রূপগঞ্জ থানার আফজালের স্ত্রী নাজমা বেগম (২৪) পাবনা জেলার সাহাদাৎ খানের ছেলে মেহাম্মদ আলী (২৫) ভোলা জেলার ফজলুর ছেলে হাসনাইন (২৬) জামালপুরের মো. শওকতের ছেলে জিহাদ রানা (২৭) কিশোরগঞ্জের মো. সেলিমের মেয়ে সেলিমা বেগম (২৮) রূপগঞ্জ থানার সুমাইয়ার মা ফিরোজা বেগম (২৯) একই এলাকার জসীম উদ্দিনের স্ত্রী রিমা আক্তার (৩০) ভোলা জেলার কবিরের ছেলে মো. রাকিব (৩১) কিশোরগঞ্জের সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা আক্তার (৩২) কিশোরগঞ্জের চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুল (৩৩) একই এলাকার বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাছলিমা বেগম (৩৪) ভোলা জেলার মো. রাকিব-২ (৩৫) নোয়াখালি জেলার বাহারের ছেলে মো. আকাশ (৩৬) একই এলাকার আবুল কাশের ছেলে রাশেদ (৩৭) একই এলাকার এনায়েতের ছেলে বাদশা (৩৮) ভোলা জেলার ইউসুফ (৩৯) নোয়াখালি জেলার আবুল বাশারের ছেলে জিহাদ (৪০) শাকিল (৪১) কিশোরগঞ্জ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪২) একই এলাকার তাসলিমা-২ (৪৩) একই এলাকার আজিজুল হকের মেয়ে মোছা. রহিমা আক্তার (৪৪) গাইবান্ধা জেলার হাসেমুজ্জামান সরকারের মেয়ে নুসরাত জাহান টুকটুকি (৪৫) একই এলাকার চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবেয়া (৪৬) একই এলাকার মালেক মিয়ার মেয়ে মাহামুদা বেগম (৪৭) নেত্রকোনার আজমত আলীর মেয়ে তাকিয়া আক্তার (৪৮) হবিগঞ্জের আব্দুল মান্নানের মেয়ে ইসরাত জাজাহান তুলি (৪৯) কিশোরগঞ্জের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে শাহানা বেগম (৫০) দিনাজপুরের ফয়জুলের ছেলে সাজ্জাত হোসেন সজীব ও (৫১) গাইবান্ধার লুল্লু মওয়ার মেয়ে লাবনী আক্তার।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার ছয়তলায় ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় আগুন ছিল। এ দীর্ঘসময় হয়তো আগুনে লাশ পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে অথবা অভিভাবকদের তথ্যে ৫১ জনের তালিকা করার পর তাদের নিখোঁজ স্বজনরা বাড়িতে জীবিত ফিরে গেলেও তারা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেনি। লাশ ও নিখোঁজের সংখ্যার গড়মিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এখনো ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ বাকি আছে। পরে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে।