ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘আমরার কামও নাই, খাওনও নাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৮:০৪, ২৯ জুলাই ২০২১
‘আমরার কামও নাই, খাওনও নাই’

বিয়াইন বেলাতথন বইয়া আছি আমরার কামও নাই, খাওনও নাই। ছবি তুলে কি করবেন ছবি তুললে তো আর আমাদের পেট ভরবো না। এডা লকডাউন নয় এডা আমরার মরার ডাউন।

কাজের খোঁজে রাস্তার পাশে বসে এভাবেই আহাজারি করছে দিনমজুর রুস্তম শেখ।

১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় ৭ দিনের মাথায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনমজুরেরা। কঠোর লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে চাপা হাহাকার। নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে অসহনীয় কষ্ট পোহাচ্ছে। আবার জীবন বাঁচাতে কাজের সন্ধানে রাস্তায় নেমে এসেছে। ধার-দেনায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছে না, আবার অন্যের কাছে হাত পেতে কিছু নিতেও পারছে না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে দিনমজুর অসহায় মানুষদের জীবন।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগাঁ মার্কেটের সামনে বসে আছেন অর্ধশতাধিক দিনমজুর শ্রমিক। কাজের খোঁজে সকাল ৬ টা থেকে বসে আছেন তারা।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকার রফিকুল ইসলাম (৩৬) বলেন, ঈদের আগের দিন ৬০০ টাকার কাম করছি। ঘরে ছোট ছোট ৩ টা পোলাপান আছে। ঘরভাড়া দিয়া থাকি। ঈদের একদিন পর থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বসে থাকি। কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাসায় যাই। যা কিছু গোছানো ছিল এই ৭ দিনে শেষ হয়ে গেছে। এখন ঘরে খাওয়ার মতো কিছু নাই। গাড়ি চললে লোকজন এসে আমাদের কামে নিয়া যাইতো। কিন্তু লকডাউনের কারণে গাড়িও বন্ধ, আমাদের কাজও বন্ধ।

মোসলেম এর বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর। গালে হাত দিয়ে উদাস মনে বসে আছেন। তিনি বলেন, দুঃখের কথা কি বলবো। আমরা তো কাজ করে খাই। মানুষের কাছে কখনো হাত পাতিনি। মানুষের কাছে তো চেয়ে খেতে পারবো না। আমরা লকডাউন চাইনা, কাজ চাই।

কুমিল্লার লেবু মিয়া, ৪ সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে রওশন সড়ক এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। লকডাউনের আগে দিনে ৮০০ টাকা ইনকাম করতাম। ভালোই চলতো সংসার। এখানে কাজের জন্য বসে থাকলে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। কিছু বললে পুলিশ বলে আপাতত বাড়িত গিয়ে ডালভাত খাও। কিন্তু ঘরে এখন ডালভাত খাওয়ারও উপায় নেই।

করোনা মহামারির কারণে এসব নিম্ন আয়ের মানুষরা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, তার থেকে বেশি উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ক্ষুধা নিবারণের চিন্তায়। তাদের ভাবনার সর্বোচ্চ স্তরে কাজ করে দু'বেলা দু'মুঠো ভাত।

গাজীপুর/রেজাউল/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়