ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনা এবং করোনা উপসর্গে মৃত‌্যু বাড়ছে বগুড়ায় 

এনাম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:৩০, ২৯ জুলাই ২০২১

করোনা এবং করোনা উপসর্গে বগুড়ায় মৃত্যুর হার বাড়ছে। জুন মাসের তুলনায় জেলায় চলতি মাসের এখন পর্যন্ত করোনায় দ্বিগুণেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জুন মাসে বগুড়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৯ জন। এর মধ্যে ৩৭ জন ছিলেন বগুড়া জেলার। বাকীরা আশপাশের জেলার। তবে করোনার ডেলটা ভেরিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে মৃত্যু দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। 

২৯ জুলাই পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪৪ জন। এর মধ্যে বগুড়ার ১১২ জন। বাকী ৩২ জন অন্য জেলার। তবে গত চার দিন ধরে বগুড়ায় সংক্রমণের হার কমেছে। গত চার দিনে শনাক্তের হার ২১ থেকে ২৮ শতাংশের মধ‌্যে সীমাবদ্ধ আছে।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন শাম্মী আকতার জানান, তার মা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জ্বর ভালো হয়ে গেলে তারা ভেবেছিলেন সাধারণ জ্বর। তবে কয়েকদিন পর হঠাৎ তার মায়ের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে পঞ্চাশে নেমে আসে। গত ৯ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করান। নমুনা পরীক্ষা করে জানতে পারেন তার করোনা পজিটিভ।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় মায়ের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। এখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো পর্যায়ে। ঘরে ঘরে করোনা টেস্ট করে রোগী শনাক্তের পর সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। এতে মৃত্যু কমবে। হাসপাতালে থেকে গত কয়েকদিনে দেখেছি যারা করোনা পজিটিভ হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা নিয়েছেন তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। যারা দেরি করছেন, তারা লাশ হয়ে ফিরেছেন।’

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বর্তমানে যেসব রোগী মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৭০% গ্রামের- বাকীরা শহরের। গ্রামের মানুষ বেশি মারা যাওয়ার কারণ, তারা একেবারেই টার্মিনেশন সময় অর্থাৎ যখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৫০-৪৫-এ নেমে এসেছে তখন। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ২৫০টি বেড রয়েছে। এর মধ্যে ২০৭টি বেডে রোগী ভর্তি আছে।

বগুড়া ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, জেলায় করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। গত কয়েক দিনের সংক্রমণের হারের দিকে তাকালে সেটা বোঝা যাবে। জেলায় অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই। বেড ক্যাপাসিটির তুলনায় রোগী ভর্তি কম। রোগী বাড়লে সেই প্রস্তুতিও আমাদের নেওয়া আছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এখন অধিকাংশই গ্রামের এবং এই ব্যক্তিদের অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব। ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সীদেরও অনেকে মারা গেছেন। তবে সে সংখ‌্যা অনেক কম।

গ্রামের মানুষদের সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ, তারা এখনও বিশ্বাস করেন না করোনা বলে কিছু আছে! তারা স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। মাস্কের ব্যবহার নেই বলতে গলেই চলে। জ্বর বা অন্য কোনো উপসর্গ থাকলেও গুরুত্ব দেননি ইতোপূর্বে। যে কারণে আক্রান্ত হওয়ার পর করোনা যখন পুরোপুরি কাবু করে ফেলে, তখন স্বজনরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। এটিই মূল কারণ। তবে এখন করোনায় গ্রামের মানুষ বেশি মারা যাওয়ায় তারাও করোনায় সচেতন হচ্ছে। 

ডা. তুহিন বলেন, ‘কেবলমাত্র টিকা গ্রহণ স্বাস্থ্যবিধি এবং সচেতনতাই পারে মহামারি করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু থেকে বাঁচাতে।’

এদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কঠোর বিধিনিষেধের ২/৩ দিন মানুষ ঘর থেকে কম বের হলেও বর্তমানে শহরে জনসমাগম বেড়েছে। তবে জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে কঠোর বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে তৎপর ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। প্রতিদিন জেলা প্রশাসন থেকে কঠোর বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে।’

 বগুড়া/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়