ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নোংরা আবর্জনা খাবার জোগায় যাদের

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ২১:৫০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রতিদিন সকাল হলেই বগুড়া পৌরসভার আবর্জনার ফেলার নির্ধারিত স্থানগুলোতে ঝোলা ব্যাগ হাতে হাজির হয় একদল শিশু। এরপর বাড়ি বাড়ি থেকে ভ্যানগাড়ি এবং আবর্জনার ট্রাক আসামাত্র সেখানে হামলে পড়ে তারা।

নোংরা আবর্জনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তারা আবিষ্কার করে নিজেদের উপার্জনের কাগজ, প্লাস্টিক, লোহা, টিনসহ নানা ধরণের বস্তু। আবর্জনার দুর্গন্ধে ময়লার ভাগাড়ের আশপাশ দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা নাক ও মুখ চেপে ধরেন সেখানে এই শিশুগুলো উপার্জনের আশায় একে-অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দু’হাত ভেজায় আবর্জনায়।

আরো পড়ুন:

বগুড়ার এই পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে নেই কোনো সরকারি পদক্ষেপ।

বগুড়া সমাজসেবা কার্যালয় থেকে এসব পথশিশুদের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানা যায়নি।  তারা বলছে, বগুড়াতে পথশিশুদের নিয়ে তাদের কোন কার্যক্রম নেই।  শুধুমাত্র এতিম শিশুদের নিয়েই তাদের কার্যক্রম চলমান আছে।  

তবে পথশিশুদের মাঝে অনেক শিশু এতিম হলেও তাদের খোঁজ খবর নেয়ার কেউ নেই। ফলে এই শিশুগুলোর সঠিকভাবে সামাজিকীকরণ হচ্ছে না।  লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার শিকার হয়েই বেড়ে উঠতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা হয়ে গেল রবি, বৃষ্টি, সুখী নামের তিন পথশিশুর সঙ্গে।  এদের মধ্যে কথা হলো রবির সঙ্গে।  

রবি জানায়, তাদের বসবাস বস্তিতে। আবর্জনায় হাত দিতে তাদের ন্যূনতম ঘেন্না করে না।  প্রতিদিন আবর্জনা থেকে বিক্রির উপযোগী বস্তু কুড়িয়ে তারা একেকজন ৮০ থেকে ১২০ টাকা। উপার্জন করে।  এই টাকা থেকে তাদের খাবারের বন্দোবস্ত হয়।

ময়লার ভাগাড় থেকে উপার্জিত টাকা এসব শিশুদের মধ্যে যাদের বাবা মা আছে তারা তাদের বাবা মাকে দেয় এবং নিজেরা নিজেদের পছন্দ মতো খাবার কিনে খায়।  

আর যেসব শিশু এতিম তারা বেচে থাকার তাগিদে নিজেদের প্রয়োজন মেটায়।

তবে দরিদ্রতার কারণে অনেক মাকেই দেখা গেছে নিজেদের সন্তানদের দিয়ে আবর্জ্নার ভাগাড়ে বিক্রয়যোগ্য বস্তু খুঁজতে। তাদের এতোটুকুই আশা যাতে দিন শেষে কিছুটা বাড়তি আয় থাকে।

আবর্জনা কুড়াতে আসা শিশুদের মা’দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অভাবের সংসার।  এজন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমন নোংরায় হাত দিতে বাধ্য হচ্ছেন।  নিজেদের পাশাপাশি তাদের সন্তানরাও হাত দিচ্ছে। যদি অভাব না থাকতো তাহলে তারা এসব করতেন না।

বস্তি ও পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত চিন্তায় ২০১৪ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর দিশারী পরিবার’ আত্মপ্রকাশ করে। এসব শিশুদের মাঝে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য সংগঠনটি ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল’ পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আর এতে নিরলসভাবে শ্রম দিচ্ছেন একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক। সপ্তাহের ৪ দিন প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান দিয়ে থাকেন তারা।  তবে করোনায় ছুটির পর থেকে তাদের পাঠদান কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা ছাড়াও এই সংগঠনটি শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি এবং ময়লা আবর্জনায় কাগজ কুড়ানো থেকে নিবৃত রাখতে তাদের পরিবারকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আদিত্য কুমার জানান, যেসব শিশুরা এসব ময়লা আবর্জনা কুড়ায় এসব শিশুদের অধিকাংশেরই বাবা মা নেই।  কারো মা আছে বাবা নেই।  আবার কারো বাবা আছে মা নেই।  যে কারণে তারা অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে ওঠে। এসব শিশুদের ভবিষ্যতের কথা তাদের পরিবারও চিন্তা করে না। পড়াশোনা করাতে চায় না। আমরা উদ্যোগ নিয়ে গত ৭ বছর ধরে এসব শিশুদের পড়াশোনার করাচ্ছি।

প্রথম দিকে শিশুদের আমাদের স্কুলমুখী করতে অনেক সমস্যা হয়েছে। তবে যেসব শিশু আমাদের স্কুলে পড়ছে তাদের অধিকাংশই নিয়মিত ক্লাস করতো এবং রেজাল্টও ভালো করতো।  করোনার কারণে তাদের পাঠদান স্থগিত আছে।

তিনি আরো জানান, পথশিশুদের জন্য সরকারিভাবে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। যাতে করে এই শিশুগুলো দেশের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

বগুড়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সাঈদ মো. কাওছার রহমান জানান, পথশিশু বা যারা আবর্জনায় কাগজ কুড়ায় এসব শিশুদের নিয়ে তাদের বগুড়াতে সুনির্দিষ্ট কোন কাজ নেই।  তবে এতিম শিশুদের জন্য সরকারি শিশু পরিবার আছে।  এছাড়া শূণ্য থেকে ০৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বেবি হোম’ আছে। আমরা সেখানে শিশুদের রেখে লালন পালন করি।

তবে ছিন্নমূল পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করা দরকার।  সরকার যদি এটা গ্রহণ করে তাহলে এটা অবশ্যই একটা ভালো ফল দেবে এবং যদি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয় তাহলে আমরা অবশ্যই আন্তরিকতার সঙ্গেই এ বিষয়টিতে কাজ করবো।

এনাম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়