ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে স্বপ্ন তাদের

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১১:২৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে স্বপ্ন তাদের

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরে মেঘনা উপকূলীয় রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলায় কয়েক হাজার একর জমির আমন ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।  

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মেঘনার মিঠাপানি ও বৃষ্টি হওয়ায় জোয়ারের পানিতে আবাদি ধানের চারার কোনো ক্ষতি হবে না। বিবর্ণ চারা আবার সতেজ হয়ে উঠবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে এবার ৮১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ২২ হাজার ২০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৩ হাজার ৩১০, রামগতিতে ২৪ হাজার ১০, কমলনগর ১৯ হাজার ৭০০, রায়পুরে ১২৬৯৫ হেক্টর। আবাদি জমিতে চারা রোপণের জন্য রামগতিতে ১ হাজার ৪৪৫ হেক্টর ও কমলনগরে ১ হাজার ৫৭০ হেক্টরে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়।

কিন্তু ২৮ জুলাই থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে শুধু রামগতি ও কমলনগরের ১৭৭ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এতে অন্তত ২শ কৃষক প্রায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়া, চরজালিয়া, চরবংশী, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ, চরফলকন ও রামগতির চরগাজী, বড়খেরী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল জোয়ারের পানিতে কয়েক হাজার একর আমন ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক হোসেন আহম্মদ, রুহুল আমি ও দিদার হোসেন তাদের হতাশা ব্যক্ত করেন। বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, মেঘনা তীর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে প্রতিদিন জোয়ার-ভাটায় ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। তা ছাড়া এখন জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার একর জমির আমন ধান পচে যাচ্ছে।

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক কাশেম মাঝি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। জমিতে হালচাষ, ধানের চারা এবং চারা লাগানো বাবদ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু জোয়ারের পানির কারণে তার সে ধানের ক্ষেত পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, জমি লগ্নি, বীজ সংরক্ষণ, বীজ প্রস্তুত, জমি তৈরি, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কারসহ নানা কাজে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। নতুন করে রোপণ করার জন্য এখন আমন ধানের চারাও নেই। তা ছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি।

কৃষক হোসেন আহম্মদ বলেন, এমনিতে গত পূর্ণিমার সময় বীজতলা নষ্ট হওয়ার পর ধান আবাদ করতে গিয়ে যথেষ্ট চারা পাইনি। তাই এবারও অনেক কৃষক চারা রোপণ করতে পারেননি। তাও যদি জোয়ারের পানির প্রভাবে এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের দেখার কেউ নেই।

চর মার্টিন এলাকার আবুল কালাম আড়াই একর জমিতে আমনের চাষাবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। কৃষক নুর ইসলামও ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সোয়া একর জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছেন। তার ক্ষেত এখন ফাঁকা। পানির স্রোতের তোড়ে ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, এসব এলাকার কৃষকরা একেবারে গরীব। ধারদেনা করে তারা জমিতে আমনের চাষ শুরু করেছেন। কেউ এনজিও থেকে ঋণ, আবার কেউ ধানের উপর দাদন (সুদের বিনিময়ে টাকা) নিয়েছেন। ফসল উঠলে ঋণ পরিশোধ করে গোলায় ধান ওঠানোর স্বপ্ন ছিলো তাদের। কিন্তু মেঘনার জোয়ারের পানির স্রোতের সঙ্গে তাদের স্বপ্নও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

চরমমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী (মিয়া ভাই) বলেন, উপকূলীয় এলাকায় তীররক্ষা বাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানি খুব সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি প্রণোদনা আসলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী সহযোগীতা করা হবে। বিবর্ণ চারা আবার সতেজ হয়ে উঠবে।

জাহাঙ্গীর লিটন/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়