ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঝালকাঠির বাসন্ডা খালের ভাঙনে মানুষের ভোগান্তি 

অলোক সাহা, ঝালকাঠি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১  
ঝালকাঠির বাসন্ডা খালের ভাঙনে মানুষের ভোগান্তি 

বাসন্ডা খালের ভাঙনে ঝালকাঠি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়ের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিস্তাকাঠি আবfসন প্রকল্প পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে খালের পাড়ের ৪ শতাধিক পরিবারের সদস্যরা। হুমকিতে আছে তিনটি লবণের মিল, দুটি মসজিদ ও পাকা স্থাপনা। পাশাপাশি খালের পাড় ভেঙে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষের বসতবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে কিফাইত নগরের গাবখান সেতুর টোলঘর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারের একমাত্র পাকা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে বেহাল সড়কে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে সড়কটির বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

ঝালকাঠি পৌরসভা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাসন্ডা খাল ঝালকাঠি পৌরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডকে মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এক সময় এ দুটি ওয়ার্ড সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৯০ এর দশকে ওয়ার্ড দুটি ঝালকাঠি পৌরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে দুই দশকেও এ দুটি ওয়ার্ডে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। 

বর্তমানে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাদামতলী থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত খালের পাড়কেন্দ্রিক সড়কটি বিলীন হওয়ায় দুই এলাকার বাসিন্দারা বসতবাড়ি হারানোর হুমকিতে আছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একমাত্র পাকা সড়ড়ের অবস্থা বেহাল। অতুল মাঝির খেয়াঘাটও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বাসন্ডা খালে বিলীন হতে পারে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কই কাঁচা। বর্ষায় এ ওয়ার্ডের মানুষের চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। মীরবহর বাড়ি থেকে বারেক ফকিরের বাড়ি হয়ে পুরাতন ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারের পাকা সড়কের নির্মাণ কাজ ফেলে রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ঋষিবাড়ি থেকে তালুকদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশের সড়কেরও বেহাল দশা। এ ওয়ার্ডে পাকা নালা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।

এলকাবাসীর অভিযোগ, বর্তামান মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার ও সাবেক মেয়র আফজাল হোসেনের বাড়ি এই ওয়ার্ডে হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করেননি। এদিকে বাসন্ডা খালের ভাঙনের ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর বটতলা থেকে নেছারাবাদ মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেছারবাদ, যুব উন্নয়ন ও রামনগর এলাকার বাসিন্দাদের শহরের বের হওয়ার এটি একমাত্র পথ। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।

সরেজমিনে বাসন্ডা খালে নৌকাযোগে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পারের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিস্তাকাঠি আবসন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খালের পাড় দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁচা সড়কটি নেই বললেই চলে। খালপাড়ের কোথাও কোথাও সামান্য কিছু পথ থাকলেও অনেক স্থানেই তা বিলীন হয়ে গেছে। পথ না থাকায় মানুষের রেকর্ডীয় জমি ও বাড়ির উঠান দিয়ে পথচারীরা চলাচল করছে। কোথাও আবার সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশের সাকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। রামনগর বটতলা এলাকার দিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে সড়ক ডুবে আছে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে কিফাইত নগর পর্যন্ত একমাত্র পাকা সড়কটি খানাখন্দের কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। শহরের প্রবেশের অতুল মাঝির ঘাটটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পৌর নির্বাচনের আগে শুরু করা মীরবহর বাড়ি থেকে বারেক ফকিরের বাড়ি হয়ে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারের পাকা সড়কের নির্মাণ কাজ ফেলে রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।  

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফোরকান সিকদার বলেন, বাসন্ডা খালের ভাঙন রোধ করতে না পারলে আমাদের বসতবাড়ি এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। বাসন্ডা সেতু থেকে আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত টেকসই বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু পৌরসভার তাঁদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছেনা।  

এই ওয়ার্ডের অপর বাসিন্দা ডেইরী খামারী মানিক মিয়া বলেন, ‘জোয়ারের পানি ঢুকে আমাদের বসত ভিটাসহ চলচলের পথ তলিয়ে যায়। মূল শহরের বাসিন্দাদের মতো আমরাও পৌর ট্যাক্স দেই। তারপরও আমরা দৃশ্যমান উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।’ 

ঝালকাঠি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, ‘বাসন্ডা খালের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে কিস্তাকাঠি আবসন পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশে বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে কয়েকটি প্রকল্প দেওয়া আছে। কিন্তু দাতাসংস্থা এত বড় প্রকল্পে অর্থ দিতে নারাজ। তবে এখানে পানি উন্নয়ন বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রকল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি।’  

তিনি আরও বলেন, ‘উপ শহর প্রকল্পে বরাদ্দ না থাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে কিফাইত নগর পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কসহ অন্যান্য সড়কের নির্মাণ কাজ থেমে আছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের আবার কাজ শুরু হবে।’   

ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে পৌরসভার মূল শহরের ৭টি ওয়ার্ডের সড়ক, কালভার্ট ও নালা পাকা করাসহ সার্বিক উন্নয়ন করেছি। আগামীতে ঝালকাঠি পৌরসভায় প্রায় ২শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হবে। এই মেয়াদে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন্ডা খালের বাঁধ দেওয়াসহ সকল অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে।’ 
 

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ