ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

২০ বছর ধরে বরগুনার সব সিনেমা হল বন্ধ 

ইমরান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১০ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১২:১৯, ১০ জানুয়ারি ২০২২
২০ বছর ধরে বরগুনার সব সিনেমা হল বন্ধ 

২০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে বরগুনার ৭টি সিনেমা হল। হল মালিকরা বলছেন, দর্শক হারিয়ে লোকসানের ভার সহ্য করতে না পেরে অকশনে মালামাল বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেছেন তারা। 

১৯৮৪ সালে বরগুনায় কলেজ রোড এলাকার সিনেমা হল ‘শ্যামলী’ প্রথম দর্শকদের বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ করে দেয়। দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় দেখে ১৯৯০ সালে পশ্চিম বরগুনার কাঠপট্টী এলাকায় ‘সোনিয়া’ সিনেমা হল চালু করেন আরেকজন ব্যবসায়ী।

টানা ১০ বছর সিনেমা হল দু'টিতে প্রচুর দর্শক থাকলেও ভাটি পড়ে ২০০০ সালে। বছর তিনেক ধরে লোকসানের ঘানি টেনেও যখন কূল পাচ্ছিলেন না মালিকরা, তখন সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো এই হল দু'টো। এই যেন শেষ। এরপর আর আলো জ্বলেনি দু'টি হলেই।

একই কারণে আমতলী উপজেলার একমাত্র ‘লাভলু’ সিনে কমপ্লেক্স, পাথরঘাটা উপজেলার ‘টিটু’, ‘সনি’, ‘রুপা’ ও ‘মিতু’ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায় ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে।

‘শ্যামলী’ সিনেমা হলের মালিক মো. শাহিন বলেন, সিনেমা হল শুরু করার পর থেকে দর্শকরা মাতিয়ে রাখতো হল। প্রতি দিন-রাত মিলিয়ে ৬ বার শো চলতো। টিকিট কেনার হিড়িক পরে যেতো। কিন্তু বছর ১০ যেতে না যেতেই দর্শক হারাতে শুরু করলাম। ব্যবসাতো দূরের কথা কর্মচারীদের বেতনই দিতে পারতাম না ঠিকভাবে। প্রথমে বেশিরভাগ মানুষই পরিবারসহ আসলেও এটা কমে গেলো। ২০০১ সালের শেষের দিকে শেষ পর্যন্ত এমন হলো যে, একজন দর্শকও আসতো না। বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিলাম। 

‘সোনিয়া’ সিনেমা হলের তৎকালীন ম্যানেজার বাবুল মীর বলেন, প্রথমে আমি ‘সোনিয়া’ হলে ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলাম। ‘সোনিয়া’ চালু হবার পর এখানে আসলাম। ভরপুর দর্শক ছিলো। কিন্তু হঠাৎ দর্শক কমতে শুরু করলো। মালিক বেতন দিতে পারতো না। আমরা ভেবেছি এই মনে হয় দর্শকরা ফিরবে হলে, কিন্তু দুই বছর অপেক্ষা করেও দর্শক না পেয়ে মালিক হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। শেষের দিকে এমনও হতো, একটা শো'তে সর্বোচ্চ ৩/৪ জন টিকিট কাটতো। এ দিয়ে তো আর হল চলেনা।

পাথরঘাটার ‘সনি’ সিনেমা হলের তৎকালীন ম্যানোজার সাগর কর্মকার জানান, পাথরঘাটায় সব থেকে বেশি সিনেমা হল ছিলো। সব বন্ধ হয়ে গেছে দর্শকের অভাবে। তাই তারাও বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশা'। 

‘খেলাঘর’ বরগুনার সভাপতি চিত্ত রঞ্জন শীল বলেন, ২০০১-২০০৫ সালে ছায়াছবিতে নোংরামি বেড়ে গিয়েছিলো। এ কারণে মানুষ পরিবারসহ হলে যেতো পারতো না। এছাড়াও ভালো চলচ্চিত্র না থাকার কারণে দর্শকরা হল বিমুখ হয়। পরবর্তীতে ছায়াছবিতে দর্শকদের রুচি ফেরাতে কেউ উদ্যোগই নেয়নি। 

তিনি বলেন, আজ দেশের তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত। নতুন প্রজন্মতো জানেই না সিনেমা হল কি। পরিবার নিয়ে এক সময়ে ছুটি কাটাতে সিনেমা হলে যেতো অনেকেই। এখন ছুটির দিনের সে রেওয়াজ আর নেই। 

জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বির বলেন, একটি জেলা শহরে কোনো সিনেমা হল নেই। আমি বরগুনার সন্তান, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। টাউন হলটা পর্যন্ত চালু হয়নি। বরগুনায় দু'টি আসনে দুজন সংসদ সদস্য রয়েছে। এছাড়াও অনেক জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্তারা রয়েছে। কিন্তু কেউ সিনেমা হল চালুর উদ্যোগটা পর্যন্ত নেয়নি। এর দায় তারা এড়াতে পারেন না। আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হয়েও দায় এড়াতে পারিনা। 

বরগুনার শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে হল চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন তিনি।

বরগুনা/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়