ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বগুড়ার বিপ্লব জেলে

বগুড়া প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ১২ জানুয়ারি ২০২২  
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বগুড়ার বিপ্লব জেলে

ছবি: সংগৃহীত

ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে জালিয়াতির আশ্রয় এবং দায়বদ্ধ পণ্য ব্যাংককে না জানিয়ে বিক্রি করার অভিযোগে বগুড়ার ব্যবসায়ী ও ফটোগ্রাফার তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে সাউথ ইস্ট ব্যাংক।

অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণা মামলায় গত ১ মাসের বেশি সময় বগুড়া কারাগারে রয়েছেন তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব। তার সঙ্গে তার পিতা তোফাজ্জল হোসেনও কারাগারে ছিলেন। তবে গত ২৭ ডিসেম্বর আদালত থেকে তিনি জামিন নিয়ে বের হয়েছেন। এছাড়া তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব ও তার পরিবারের ঋণ দায়গ্রস্ত কেউ যাতে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য তাদের পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবের কাছে তাদের পাওনা ৩০ কোটি টাকার বেশি।  ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময় সে ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য তার ‘মেসার্স বিপ্লব ভাণ্ডার’, ‘মেসার্স অটো ফ্লাওয়ার মিলস’ ও ‘মেসার্স বগুড়া ভাণ্ডার অটো ফ্লাওয়ার মিল’র নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন।  কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধে নানা টালবাহানা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। যে কারণে তার ও তার পরিবারের আরো দুই সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।  

সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে ২৯ কোটি ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৭ টাকা’র অর্থঋণের মামলা করা হয়েছে। যার মামলা নং ১৩১/২০। এছাড়া ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করা হয়েছে। যার মামলা নং ১৪২৯সি/২০।  ১০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবকে প্রধান আসামি করে তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী আনিকার বিরুদ্ধে বগুড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কাহালুতে মামলা করা হয়েছে। যার মামলা নং ১৭সি/২১।

তিনি বলেন, এই ঋণের সময় বিপ্লবের বাবা তোফাজ্জল হোসেন ছিলেন গৃহীত ঋণের ব্যক্তিগত জামিনদার ও ঋণের বন্ধকদাতা এবং বিপ্লবের স্ত্রী আনিকা মেহজাবিন তিনি ঋণের ব্যক্তিগত জামিনদাতা। ১৭সি/২১- এই মামলাতেই তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব গত ২৯ নভেম্বর থেকে বগুড়ার কারাগারে রয়েছেন।

জানা গেছে, জামিনের আবেদন করলে বয়স বিবেচনায় তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবের পিতা তোফাজ্জল হোসেনকে গত ২৭ ডিসেম্বর আদালত তাকে জামিন দেন। এর আগে ব্যাংক থেকে তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব, তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী আনিকা মেহজাবিনের বিদেশগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত সে সময় তিন জনের পাসপোর্ট জব্দ করেন। পাসপোর্টগুলো এখনও আদালতের জিম্মায় রয়েছে।  

মামলা নথি থেকে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিপ্লবের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা। সে সময় ঐ পরিমাণ ঋণের জন্য প্রাথমিক জামানত হিসেবে তার কাহালুর দর্গাহাটায় অবস্থিত ‘মেসার্স বিপ্লব ভাণ্ডার’ ও মেসার্স বগুড়া ভাণ্ডার অটো ফ্লাওয়ার মিল’র গোডাউনে রক্ষিত মালামাল ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ করেন। এরপর সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি বন্ধক/দায়বদ্ধ পত্র সম্পাদন করেন। সে সময় হাইপোথিকেশনের অধীনে স্টকের বিবৃতি’র মাধ্যমে ব্যাংকে জানায় তার গোডাউনে কানাডা, ইউক্রেন, ইন্ডিয়ান, রাশিয়ান গম এবং ইন্ডিয়ান চাল মজুদ রয়েছে; যার মূল্য ১০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৫ টাকা। এরপর ঐ বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে তার গোডাউন সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য একটি টিম পাঠায়। ওই টিম তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবের কাহালুর গোডাউন দুটিতে গেলে তার দাখিলকৃত স্টক রিপোর্টে উল্লেখিত গম এবং চালের কোনো অস্তিত্ব পায়নি। এরপর সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের মালামাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। অথচ আসামিরা দায়বদ্ধকৃত মালামাল ব্যাংকের লিখিত অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করতে পারবে না- এমনটি হওয়ার কথা ছিলো।  যে কারণে লিখিত এবং মৌখিক অনুমোদন ছাড়া ব্যাংককে না জানিয়ে গোডাউনের মালামাল বিক্রি করায় তার বিরুদ্ধে ১৮৬০ এর ৪০৩/৪০৬/৪২০/৩৪ ধারায় বগুড়া সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কাহালুতে মামলা দায়ের করে ব্যাংকটি।

জানা গেছে, তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব তার ‘মেসার্স বগুড়া ভাণ্ডার অটো ফ্লাওয়ার মিল’র নামে ওভার ড্রাফট লিমিট, এলসি লিমিট ও এলটিআর লিমিট বাবদ ৩ কোটি টাকা এবং ‘মেসার্স বিপ্লব ভাণ্ডার’র নামে ওভার ড্রাফট লিমিট বাবদ ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদসহ ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখের মধ্যে পরিশোধের শর্তে বর্ধিতকরণসহ নবায়ন মঞ্জুরীমূলে গ্রহণ করে। কিন্তু তিনি ঋণটির সুদসহ যাবতীয় ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করলে তাকে তলব তাগাদা দেওয়া হয়। এরপর তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব ঋণ পরিশোধের জন্য তার ‘মেসার্স বিপ্লব ভাণ্ডার’র নামে শাহজালাল ব্যাংকের বগুড়া শাখার চলতি হিসাবে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ১৯০৯৮৮৯ নং চেক ৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে স্বাক্ষর করে ব্যাংকে দেয়। কিন্তু ঐ চেকটি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখায় নিয়ে গেলে সেটি ডিজঅনার হয়। এরপর ব্যাংক থেকে তাকে ৩০ দিনের সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। আসামি বিপ্লব লিগ্যাল নোটিশ গ্রহণ না করে নিজেকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ১৭ আগস্ট ২০২০ নোটিশ খাম এডিসহ ফেরত পাঠায়। সে ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাংকের ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ১৩৮ ধারায় তার বিরুদ্ধে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক।

এদিকে ১৪২৯সি/২০ মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৯ কোটি ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৭ টাকার অর্থঋণের মামলা দায়ের করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এবিষয়ে সাউথ ইস্ট ব্যাংক বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক মতিয়ার রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব প্রথমে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে আমাদের ব্যাংক থেকে ১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। এরপর তার সাথে ব্যাংকের লেনদেন ঠিক ছিলো। যে কারণে তার ব্যবসার প্রয়োজনে আরো ঋণের আবেদন করলে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তার ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব ২০১৭ সালের পর থেকে ব্যাংকের সাথে আর কোন লেনদেন করেনি। তার কাছ থেকে ব্যাংকের পাওনা ৩০ কোটি টাকারও বেশি। 

এনাম/এনএইচ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়