ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জীবিকার উৎস ‘বরফগলা জলরাশি’

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২২  
জীবিকার উৎস ‘বরফগলা জলরাশি’

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে মাঘের হাড় কাঁপানো শীত। তাপমাত্রার পারদ উঠানামা করে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। রাত থেকে সকাল অবধি কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে পুরো জেলা। সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। শীতের এই দাপটে সব কিছুই স্থবির হয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে বসে থাকতে পারে না সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার পাথর শ্রমিকরা।

দু’মুঠো খাবার যোগাতে কাক ডাকা ভোরে কনকনে শীতের মধ্যেও ঘাড়ে ঢাকি-কোদাল আর ট্রাক্টরের হাওয়া ভর্তি টিউব নিয়ে ছুটে চলেন তারা নদী মহানন্দার বুকে। হিমালয় থেকে বয়ে আসা মহানন্দার বরফগলা ঠাণ্ডা জলরাশিই যে তাদের জীবিকার উৎস।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানন্দার এই বরফ শীতল পানির নিচ থেকে সংগ্রহ করেন নুড়ি পাথর। এরপর সেই পাথর বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালান উপজেলার কয়েক হাজার দরিদ্র পাথর শ্রমিক।

তেঁতুলিয়ায় মহানন্দার পাড় ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশে হিমালয় পর্বত থেকে বরফগলা পানি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশকে ভাগ করে মহানন্দায় প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে নদীপাড়ের কয়েকটি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নদী কেন্দ্রিক। শুধু নদীর পাড়ের বাসিন্দারাই নন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নদীর গভীর অংশ থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে পাড়ে স্তূপ করেন। সেই স্তূপ করা পাথর নারী ও শিশুরা আকার অনুযায়ী বাছাই করেন। সবশেষে সন্ধ্যায় মহাজনের কাছ থেকে মজুরি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। এতে করে একজন পুরুষ শ্রমিক দিনে আয় করেন সর্বোচ্চ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা। সারা বছরই চলে এ পাথর উত্তোলনের কাজ। প্রচণ্ড শীতেও অভাব ও ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে তাদের নামতে হয় বরফগলা পানিতে।

স্থানীয়রা জানান, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলে শীতের দাপট একটু বেশি। এ মৌসুমে প্রায় দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে এখানে। তীব্র শীতে পাথর শ্রমিকরা একটু বেশি বিপাকে থাকেন। অধিকাংশরাই কর্মহীন হয়ে পড়েন। আবার অনেকেই জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেন নুড়ি পাথরের সন্ধানে মহানন্দার বরফ গলা পানিতে।

পাথর শ্রমিক উসমান আলী বলেন, সংসার চালাতে সারা বছর মহানন্দা নদীর বুকে ছুটে যেতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেসব পাথর সংগ্রহ করি, সেসব সন্ধ্যায় বিক্রি করে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলে।  

একই কথা জানান শ্রমিক জব্বার আলীও। বলেন, মূলত এ অঞ্চলে তেমন কোনো আয় রোজগারের ব্যবস্থা না থাকায় এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্য হওয়ায় কাজ না পেয়ে নদীতে নামতে হচ্ছে। তবে শীত মৌসুমে বরফগলা পানিতে পাথর তুলতে অনেক কষ্ট হয়। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের জীবন জীবিকা পাথর কেন্দ্রিক। অনেকেই আগে ভূগর্ভস্থ পাথর তুলতেন। কিন্তু এখন ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব মানুষের একটা বড় অংশই বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ বর্তমানে কাজ করছেন সমতলের চা বাগানগুলোতে, কেউ স্থলবন্দরে। তবে বেশিরভাগই নদী থেকে পাথর তুলে সংসার চালাচ্ছেন। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় তেমন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে এ উপজেলায় বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি নানাভাবে সরকারি অনুদানের আওতায় আনা হচ্ছে তাদের। বন্দর ব্যবস্থাপনা জোরদার করে অনেক মানুষকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এসব মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে।

/এনএইচ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়