ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নারী ফুটবলারকে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৭ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ২২:৪৪, ২৭ এপ্রিল ২০২২
নারী ফুটবলারকে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলের এক নারী খেলোয়াড়কে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর পরিবার দাবি করেছেন, তারা নান্দাইল থানায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম ফকির ফয়সালের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণের’ মামলা করতে গেলে পুলিশ ‘ধর্ষণচেষ্টার’ মামলা নিয়েছেন। তবে এ মামলায় ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওই তরুণী রাইজিংবিডিকে বলেন, গত শুক্রবার (২২ এপ্রিল) উপবৃত্তির ফাইলে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলে তাকে নান্দাইলে সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল। পরে তাকে প্রশাসনিক ভবনের পেছনে নিয়ে মুখ চেপে গলায় চাকু ধরে ধর্ষণ ও ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করেন। এতে তাকে সহযোগিতা করেন আলামিন ও অজ্ঞাত এক সহযোগী। ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়াসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন। ঘটনার পর থেকে তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান ওই তরুণী।

নির্যাতনের শিকার ও একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ওই তরুণী বলেন, ‘ঘটনার পরদিন আমি বাবাকে নিয়ে থানায় গেলে ওসি স্যার আমাকে আলাদা কক্ষে নিয়ে সব কিছু খোলামেলা জিজ্ঞেস করেন। আমার খুব লজ্জা লাগছিল, তারপরও আমি সব বলেছি।’

গ্রেপ্তারকৃত প্রধান আসামি ওয়াহিদুল আলম ফকির ফয়সাল

ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা-মা বলেন, ‘আমাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকে খেলাধূলা করে। বড় হয়ে দেশ-বিদেশে খেলে অনেক মেডেল পেয়েছে। আমরা মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। কিন্তু হঠাৎ করে ফয়সাল আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে। পুলিশের কাছে গেলাম বিচারের আশায়। পুলিশ আমাদের অভিযোগ অনুযায়ী মামলা নেইনি। ধর্ষচেষ্টার মামলা নিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, আমরা ন্যায় বিচার পাবো না।’ 

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ওই তরুণী অভিযোগ দিলে শনিবার (২৩ এপ্রিল) ধর্ষণচেষ্টার মামলা নেয়া হয় ফয়সাল ও অজ্ঞাত দুইজনকে আসামি করে। আজকে বুধবার (২৭ এপ্রিল)  দুপুরে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওসি দাবি করেন, ‘ভিকটিমের বক্তব্য শুনেই ধর্ষণচেষ্টার মামলা নেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, নিয়ম হচ্ছে ভিকটিমের বক্তব্য অনুযায়ী মামলা নেয়া। সেক্ষেত্রে যদি পুলিশের গাফিলতি থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভিকটিম ওই তরুণী বলেন, বিভিন্ন স্থানে খেলতে গিয়ে ফয়সালের সঙ্গে তার পরিচয়। কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। কলেজে যাওয়ার আসার সময় খোঁজ খবর নিতেন। তিনি বিবাহিত, তার একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।

ওই তরুণীর অর্জিত মেডেলগুলো

ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরও বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা বেগম ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে খেলা শুরু করি। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ময়মনসিংহ বিভাগের হয়ে খেলি ও আমার দল রানার্সআপ হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও রুপার মেডেল তুলে দেন ক্রীড়া উপমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল। বর্তমানে আমি অনুর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল টিমের একজন সদস্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (ফুটবল) উত্তরা আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব ও ময়মনসিংহের কালিঝুলি স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলে মেডেল ও সনদ অর্জন করি।’  

ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা। এই অবস্থায় আমি আতংকিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই।’

নান্দাইলে সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম বলেন, ‘মেয়েটা কলেজে ঢোকার পর ফয়সাল তাকে জড়িয়ে ধরলে তিনি চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে আমি কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ফয়সাল আমাকে চাকু দেখালে আমি বাইরে বের হয়ে মোবাইলে টাকা ভরে অধ্যক্ষ স্যারকে কল দেই। পরে অধ্যক্ষ স্যার নিরাপত্তাকর্মীদের তাদের বাহিরে বের করে দিতে বলেন।’ 

ওই দিন ঘটনা শুনে তাদের কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেও পরে আর খোঁজ নেননি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফয়সাল মাঝে মধ্যে কলেজে আসতেন কোনো কাজ থাকলে। তার সঙ্গে কলেজের তেমন কারও সখ্যতা নেই। এমন কাজ করে থাকলে তার বিচার হওয়া উচিত।’ 

মিলন/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়