ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

২২ দিনের মধ্যে এক পরিবারে তিন মৃত্যু, গ্রামজুড়ে আতঙ্ক

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ২ জুলাই ২০২২  
২২ দিনের মধ্যে এক পরিবারে তিন মৃত্যু, গ্রামজুড়ে আতঙ্ক

পঞ্চগড়ে মাত্র ২২ দিনের মধ্যে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাদের একের পর এক মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে বইছে আতঙ্ক আর শোক। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটিও।

ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা সেনপাড়া এলাকার।

মৃত তিন জন হলেন- ওই এলাকার মৃত অন্যপ্রসাদ রায়ের বড় ছেলে বিমল চন্দ্র রায় (৩০), মেঝো ছেলে রতন চন্দ্র রায় (২৭) এবং বিমলের কাকাতো ভাই কৃষ্ণ চন্দ্রের ছেলে মিঠুন চন্দ্র রায় (১৬)। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জুন অসুস্থ অবস্থায় মারা যায় মিঠুন চন্দ্র রায়। তার শ্রাদ্ধের দিনক্ষণ ছিল ২০ জুন। কিন্তু ১৯ জুন রাতেই মারা যান মিঠুনের বাবার কাকাতো ভাই রতন। রতনও অসুস্থতা বোধ করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। রতনের শ্রাদ্ধ ছিল ১ জুলাই। কিন্তু ৩০ জুন রাতে আকস্মিক মারা যান বিমল। ফলে ছোট ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান না করেই সৎকার করা হয় বড় ভাইকে।

এদিকে, একে একে তিন জনের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন বিমলের নববধূ অষ্টমনি রানী। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন বলে বিলাপ করছেন রতনের স্ত্রী চিত্রা রানী। মাত্র ৮ মাস আগে স্বামীকে হারানোর পর এবার কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা জয়ন্তী রানীও। এ ছাড়া স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। 

মিঠুনের বাবা কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তার ছেলে এবার স্থানীয় বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়তো। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। পড়ালেখা করে ছেলে অভাবের সংসারে সহায়ক হবে- এমন প্রত্যাশা ছিল বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বিমল এবং রতনের ছোট ভাই জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার এখনও এক বছর হয়নি। এর মধ্যেই দুই ভাইকে হারাতে হলো। আমরা অভিভাবক শূন্য হয়ে গেলাম। সামনে কীভাবে পরিবার চালাবো, তাও ভেবে পাচ্ছি না। এক ভাই বিয়ে করেছে বছর হয়নি। আরেক ভাইয়ের ছোট দুটি সন্তান আছে। জানি না ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে আর কাউকে হারাতে চাই না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা। শুনেছিলাম রতনের কিডনিজনিত সমস্যা ছিল। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় সঠিক চিকিৎসা করতে পারেনি হয়তো। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিবারটির খোঁজখবর নিচ্ছি। পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও চান তিনি।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি যারা মারা গেছেন তারা রোগাক্রান্ত ছিলেন। কয়েকদিনের ব্যবধানে তিন জনের মৃত্যুতে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা যদি মনে করে, তাদের কোনও বংশানুক্রমিক রোগ রয়েছে; তাহলে প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।

আবু নাঈম/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়