ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ট্রলারে এলো ১০২ মণ ইলিশ, ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০২, ২৭ জুলাই ২০২২  
ট্রলারে এলো ১০২ মণ ইলিশ, ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি

বিভিন্ন সাইজের ইলিশ নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাটে নিলামে বিক্রি করা হয় বুধবার

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্র থেকে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছে ফিশিং ট্রলার ‘এমভি আরাফ-৩।’ এ ট্রলারে মিললো ১০২ মণ ইলিশ। এই মাছ নিলামে বিক্রি হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। 

বুধবার (২৭ জুলাই) হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের মেঘনা ফিশিংয়ে এসব ইলিশ বিক্রি করা হয়। 

এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় ‘মা-বাবার দোয়া-৩’ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলারে ৯৯ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে আসে। সে সময় ওই মাছ নিলামে ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

মেঘনা ফিশিংয়ের ম্যানেজার মো. হাবিব ভূইয়া  বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে মাছগুলো ধরা হয়েছে। আজ (বুধবার) সকালে ট্রলারটি মাছ নিয়ে চেয়ারম্যান ঘাটে আসে। ট্রলারে সাইজের মাছ ছিল। তবে বড় সাইজের ইলিশ মাছ বেশি ছিল। নিলামে দাম তুলতে তুলতে শেষ পর্যন্ত ১০২ মণ ইলিশের দাম হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাতিয়ার জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় কিন্তু তাদের ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ব্লকের ব্যবস্থা করেন, তাহলে এই জেলেরা দেশের অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।’

হাবিব ভূইয়া বলেন, ‘জেলেদের জন্য এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী নিজ টাকায় চেয়ারম্যান ঘাট মৎস্য আড়ৎ নির্মাণ করেছিলেন।’

এমভি আরাফ-৩ ট্রলারের সারেং মো. জহির বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে গিয়েছি মাছ ধরতে। সেখান থেকে আসতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। মাছগুলো আকারে বড় হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি।’

চেয়ারম্যান ঘাটে ঘুরতে আসা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব আল আমিন বলেন, ‘পড়ালেখা করার জন্য নোয়াখালী  এসেছি। মেঘনার ইলিশ এখন প্রায় সবখানে পাওয়া যায়। একসঙ্গে ১০২ মণ তাজা ইলিশ দেখে ভালো লেগেছে।’

চেয়ারম্যান ঘাটে সমুদ্র থেকে আসা মাছ ট্রলার থেকে আড়তে আনার কাজ করেন মো. রাকিব। তিনি বলেন, ‘এতদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাই সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেনি জেলেরা। আমাদেরও কাজ ছিল না। আমরা এখানে ৬৫ জন লোক আছি, মাছ টানার কাজ করি। এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আয়ও করতে পারছি। আমরা এতেই খুশি।’

হাতিয়া মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল বলেন, হাতিয়া উপকূলের ৫০০ ফিশিং ট্রলার সাগরে মাছ আহরণ করে। এক সপ্তাহ ধরে নদীতে অনেক মাছ ধরা পড়ছে। আগে এই উপকূলে মাছ শিকারে গেলে ডাকাতের কবলে পড়ত জেলেরা। কিন্তু বর্তমানে ডাকাত নেই। জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারছে। আশা করি সামনে ভরা মৌসুমে অনেক মাছ পাওয়া যাবে।’

হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আখতার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ৯৯ মণ মাছ পেয়েছে একটি ট্রলার। আজ ১০২ মণ পেল আরেকটি ট্রলার। প্রতিনিয়ত সমুদ্রে যাওয়া বোটগুলো ঘাটে আসছে। নিষেধাজ্ঞার পর এতো মাছ একসঙ্গে পেয়ে জেলেরা যেমন খুশি, ব্যবসায়ীরাও খুশি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মেঘনার মোহনায় মাছ ধরতে জেলেরা আসেন। ইলিশ শিকার করে জেলেরা ফিরতে শুরু করেছেন। হাতিয়ার জেলেরা ভাগ্যবান, কারণ এই মোহনার পানি সুস্বাদু ও সামুদ্রিক পানি মিশ্রিত। যা ইলিশের জন্য খুবই ভালো।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমসহ সরকারি বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় স্থানীয় জেলেরা উপকৃত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় নদী ও সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার বেড়েছে। বর্তমানে সাগরের মোহনা থেকে  ইলিশ শিকার করে জেলেরা ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে। বোট- ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে ফিরছে জেলেরা। আশা করি সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি ইলিশ জেলেদের জালে আসবে।’

মওলা সুজন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়