ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ: ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ৪ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৫:০২, ৪ আগস্ট ২০২২
বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ: ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা

ঈগল পরিবহনের এই বাসে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন যাত্রীরা।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস ঢাকা যাওয়ার পথে বুধবার (৩ আগস্ট) মধ‌্য রাতে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।

ওই বাসের যাত্রী ছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। 

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নাটোরের তরমুজ চত্বর থেকে বাসে উঠি। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য বিরতি দেয়। তখন বাস থেকে নেমে অনেকেই হোটেলে খাবার খান। কড্ডার মোড়ে আসার পর ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী বাসে ওঠেন। তাদের প্রত্যেকেরই পিঠে ব্যাগ ছিল। বাসে উঠে তারা খালি সিটগুলোতে বসেন। 

আরও পড়ুন: বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

তিনি জানান, বাসটি দ্রুতগতিতে চলছিল। অনেক যাত্রীই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দল ঘুমন্ত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। প্রথমে তারা ছুরি ঠেকিয়ে ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারকে বাসের পেছনের দিকে নিয়ে সিটের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। যাত্রীদের তারা ভীষণ নির্যাতনও করে। যাত্রীদেরও হাত, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলা হয়। শিশুদেরও একই কায়দায় বেঁধে রাখে তারা। পরে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা, গয়না লুট করে নেয়। তার পাশে বসা নারীকে ধর্ষণ করা হয়। হাত, মুখ, চোখ বাঁধা থাকায় অন‌্য যাত্রীরা কিছুই করতে পারেননি। 

অপর যাত্রী দৌলতপুর থানার তারাগুনিয়া গ্রামের শিল্পী বেগম বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের সবাইরে হাত, মুখ, চোখ বাইন্দা ডাকাতরা সব লুট কইরা নিছে। আমার স্বামী পিয়ার আলীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। আমার কাছ থিকা ৩০ হাজার টাকা নিয়া গেছে।’ বাসে থাকা অন্য নারী যাত্রীও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বেসরকারি চাকরিজীবী নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আবদুর রশিদ নাটোর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন অসুস্থ মাকে দেখার জন্য। তিনি বলেন, ‘বেতনের ২২ হাজার ৮০০ টাকা কাছে ছিল। ডাকাতরা সেই টাকা নিয়ে গেছে। দয়া কইরা ১০০ টাকা পকেটে রাইখা গেছে।'

আরও পড়ুন: চলন্ত বাসে ডাকাতি শেষে যাত্রীকে ধর্ষণ

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এ ঘটনার প্রধান আসামি রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ ভোরে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেছেন এবং এই ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিলেন তা জানিয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। 

রাজা মিয়ার বাড়ি কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামে। তার বাবার নাম হারুন অর রশিদ। তিনি টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ‌্যে রওনা দেয়। গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে একদল ডাকাত যাত্রীবেসে ওই বাসে ওঠে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণ দল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের বেঁধে ফেলে। কয়েক মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়। এরপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বাসটি রেখে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

কাওছার আহমেদ/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ