ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ: রাজার ভাগে ২ মোবাইল ও ৩০০ টাকা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৩, ৭ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২১:২৭, ৭ আগস্ট ২০২২
বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ: রাজার ভাগে ২ মোবাইল ও ৩০০ টাকা

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার রাজা মিয়া এক শ্রমিকের প্রস্তাবে ডাকাতিতে অংশ নেয়। ওই শ্রমিক রাজাকে বলেন, ‘গাড়ি চালাইয়া তেমন টাকা পাওয়া যায় না। একটা ডাকাতি করলে ভালো টাকা পাবা।’ এমন প্রস্তাবে বাস ডাকাতিতে অংশ নিয়ে তিনি দুটি স্মার্ট ফোন ও ৩০০ টাকা ভাগে পান।

রাজা মিয়া শনিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাজা মিয়া জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।

টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম রাজা মিয়ার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রাজা মিয়া বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছে। 

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে রাজা মিয়া টাঙ্গাইল চন্দ্রা সড়কে ঝটিকা পরিবহনের বাস চালাতেন। কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে রাজা মিয়ার জবানবন্দির এ তথ্য জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি খাবার হোটেলে যাত্রাবিরতি নেয়। সেখান থেকে যাত্রা শুরুর পর তিন দফায় যাত্রীবেশী ১০-১২ জন ডাকাত বাসে ওঠে। বাসটি টাঙ্গাইল অতিক্রম করার সময় ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাস তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর তারা যাত্রীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে তাদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও অলংকার লুট করে নেয়। এ সময় বাসে থাকা এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।

জবানবন্দিতে রাজা মিয়া আরও জানান, মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই শ্রমিক গ্রেপ্তার হওয়া আওয়াল, নুরনবী, আরও এক জনকে নিয়ে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। সেখানে তাদের সঙ্গে রাজা মিয়ার সাক্ষাত হয়। তারা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে এলেঙ্গা পর্যন্ত যান। এলেঙ্গা বাজার থেকে চার পাঁচটি চাকু ও কাঁচি কিনে ব্যাগের মধ্যে রাখেন। এরমধ্যে খবর আসে সিরাজগঞ্জের তাদের দলের অন্যরা পৌঁছে গেছে। রাত ১১টার দিকে তারা সিরাজগঞ্জে যায়। সেখানে আরও পাঁচজনকে দেখতে পান রাজা মিয়া। গাড়িতে উঠার আগে তারা তিন ভাগে ভাগ হন। রাজা মিয়া সামনের দিকে চালকের পাশে বসেন। সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি ছাড়ার পর তাদের অন্য সহযোগীরাও গাড়িতে উঠেন। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নেন। রাজা মিয়া গাড়ির চালাতে থাকেন। পরে অন্য একজন এসে গাড়ির চালকের আসনে বসেন। এ সময় রাজা মিয়া পেছনের আসনে গিয়ে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। মধুপুরের রক্তিপাড়ায় গাড়ি সড়কের খাদে পড়ে যায়। তারা সবাই জানালা দিয়ে বের হয়ে মধুপুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। একটি বাস এলে সেই বাসে উঠে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখান থেকে অটোরিকশা করে তাদের দলের একজনের নানীর বাড়ি যান। সেখানে লুন্ঠিত টাকা পয়সা ও মোবাইল ভাগবাটোয়ারা করেন। রাজা মিয়া ভাগে দুটি স্মার্ট ফোন এবং নগদ ৩০০ টাকা পান।

জবানবন্দিতে রাজা মিয়া জানান, বুধবার (৩ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে তিনি মধুপুর থেকে টাঙ্গাইল শহরের বাসায় চলে আসেন। পরদিন ভোরে গোয়েন্দা পুলিশের দল তার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় লুন্ঠিত মোবাইল ফোন সেট ও তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। 

রাজা মিয়া ছাড়াও গ্রেপ্তার অন্য দুই আসামি মো. আওয়াল ও নুরনবী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারাও বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তারা ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বাসে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সক্ষম হবে।

কাওছার/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়