ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আভিজাত্যের গোলাঘর আজও দাঁড়িয়ে ঘোড়াঘাটে

দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২২ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১০:৩১, ২২ আগস্ট ২০২২
আভিজাত্যের গোলাঘর আজও দাঁড়িয়ে ঘোড়াঘাটে

গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ, সবই যেন আজ রুপকথা। কালের স্রোতে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির প্রতীক ধান রাখার গোলাঘর। তবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার পালশা ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়িতে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি গোলাঘর।

উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে রয়েছে ধান সংরক্ষণের প্রাচীন এই ব্যবস্থাটি। 

শামীম হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে দুটি গোলাঘর রয়েছে। গোলাঘর দুইটি তার দাদা তৈরি করেছিলেন। বাবার আমলেও সেই গোলায় ধান রাখা হতো। তবে ২০০৭ সাল থেকে ঘর দুটি আর ব্যবহৃত হয় না। ধানের জায়গায় গোলাঘর দুটিতে জায়গা পেয়েছে বাড়ির বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। 

এক সময় মানুষের ধান রাখার স্থান বলতে গোলাঘরকেই বোঝানো হতো। প্রায় কম-বেশি সবার বাড়িতে গোলা ঘর ছিলো। বিশেষ করে গ্রামের বড় গৃহস্থদের বিশাল আকারের ধানের গোলা ঘর থাকতো। ধানের গোলাকে সে সময়ের মানুষরা আভিজাত্যেক প্রতীক হিসেবে মনে করতেন।

বর্তমান গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য চোখে পড়ে না। আধুনিক যুগে হাটে-বাজারে আর রাস্তার পাশে তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের ধান রাখার গুদাম। মাঠ থেকে গৃহস্থ ধান কাটা-মাড়াই করলেই ব্যবসায়ীরা যান্ত্রিক যানবাহন যোগে ওই ধান নিজদের গুদামে গুদামজাত করছেন। 

৮২ বছর বয়সী ঘোড়াঘাটের ডুগডুগি গ্রামের তমিজ উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের সময় গরুর গাড়ি, পুকুর ভরা মাছ আর গোলা ভরা ধান নিয়েই মানুষের বড়লোকি। আমরা কৃষাণ নিয়ে মাঠে ধান কাটা-মাড়াই করে গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে গোলা ঘরে ধান রাখতাম। এখন তো আর গোলা ঘর দেখতে পাওয়া যায় না।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছোট ছিলাম, নানা বাড়িতে বেশি বেড়াইতে যেতাম। নানার বাড়িতে ছিলো ধানের গোলাঘর। আমি আর মামা গোলা ঘরের ছোট দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ধান চুরি করতাম। সেই ধান আবার হাটে বিক্রি করতো মামা। আজ পুরনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।’

শাহ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাপ-দাদার স্মৃতি হিসেবে আজও আমি ধানের গোলাঘর দুইটি ধরে রেখেছি। গোলা ঘরগুলো দাদা ব্যবহার করেছেন তারপর বাবাও ব্যবহার করেছেন। আমি ২০০৭ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করেছি। কালের বিবর্তনে এখন আর এসবের প্রয়োজন হয় না। শুধু মাত্র পুরনো ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে আছি।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়