ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদের অভিযোগ 

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২  
নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদের অভিযোগ 

আদালতে মামলা চলমান থাকাবস্থায় কোনো প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই একটি পরিবারকে তাদের ভিটাজমি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে। বাড়িঘর গুড়িয়ে দেওয়ায় এখন খোলা আকাশের নিচে এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাবন করছে পরিবারটি।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের আরপি বাজারের কচুয়ারামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উচ্ছেদকৃত ভিটার ওপর সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী পরিবারটি।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, ‘১৯৪৩ সালে জে.এল নম্বর-৪ খতিয়ান, আর.এস নম্বর-৩৫, আরএস দাগ নম্বর-১১০২ এর ০.১৮ শতাংশ জমি কেনার পর উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা এই জমির ওপর বসবাস করছি। প্রায় ৮০ বছর ধরে কেউ কোনো দিন এই জমি নিয়ে মামলা বা ঝামেলা করেনি। গত ২০ জুলাই উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি, একই এলাকার এই জমির আরেক উত্তরাধিকার কায়েম উদ্দিনের ছেল গাজীউর রহমানের লোকজন একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেছেনে। পরবর্তীতে আমরা আইনজীবীর শরনাপন্ন হই। তার আগেই দ্রুত ওই মামলার একপক্ষীয় ডিগ্রি পায় গাজীউরের লোকজন। এর বিরুদ্ধে আমরা গত ২৩ আগস্ট আপিল করি এবং গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপিল শুনানির আগেই গত ১২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে দুই গাড়ি পুলিশ, পাবনা কোর্টের লোকজন ও গাজীউর রহমানের ছেলে মাসুম, মাসদুল, তাদের আত্মীয়সহ শতাধিক লোকজন এসে আমার ঘরবাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এসময় তাদেরকে বাধা দিলে পরিবারের লোকজনকে আটকিয়ে রাখে। তাদের কাছে বাড়ি ভাংচুরের নোটিশ আছে কিনা জানতে চাইলে তা দেখাতেও ব্যর্থ হয় তারা। কিন্তু তারা আমার তিনটি থাকার ঘর, গোয়ালঘর, রান্না ঘরসহ ৬টি ঘর গুড়িয়ে দেয়। এসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা আমার ১০টা ছাগল ও বাড়িতে থাকা স্বর্ণলংকার ও নগদ ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এমনকি দু’টি পুকুরের মাছও তারা লুট করে নিয়ে যায়।’

আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার মাথা গোজার মতো ঠাঁইও নেই। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবো? কোথায় কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার সম্পূর্ণ কাগজপত্র ঠিক আছে, শুধু বাটোয়ারা ডিগ্রি নিয়ে এসে আপিল শুনানির আগেই নোটিশ ছাড়া কেন আমাকে এভাবে পথে বসানো হলো তার বিচার চাই।’

অভিযুক্ত গাজীউর রহমানের ছেলে মাসুম হোসেন বলেন, ‘আমরা আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করেছি। আমার পুকুরের মাছ আমরা নিয়ে এসেছি, তাতে কি হয়েছে। আমরা কোনো ছাগল লুট করিনি। আমরা হাট থেকে ছাগল কিনে এনে জবাই করে খেয়েছি। যা করেছে সব কোর্ট করেছে, আপনারা কোর্টের কাছে যান।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা কোর্ট থেকে করেছে এবং ডিসি অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলেন। তারা যা করেছে অবশ্যই নোটিশ দিয়ে করেছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীর বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সুরাহা করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আর মাছ ও ছাগল লুটের বিষয়টি ব্যক্তিগত। যাদের মাছ ও ছাগল লুট হয়েছে তাদের এ বিষয়ে মামলা করতে হবে।’

আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা কোর্ট থেকে করেছে। পুলিশ শুধু সহযোগিতা করেছে। নোটিশের মাধ্যমেই উচ্ছেদ হয়েছে। মাছ ও ছাগল লুটের বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়