ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেরপুরে মাঠের পর মাঠ ছেয়ে আছে হলুদে

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৫:১০, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
শেরপুরে মাঠের পর মাঠ ছেয়ে আছে হলুদে

শেরপুরে মাঠের পর মাঠ এখন ছেয়ে আছে হলুদে। সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের তেলের চাহিদা মেটাতে শেরপুরে এবার সরিষার চাষ বেড়েছে। 

স্বল্প সময়ে চাষ, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় আমন ধান কাটার পর জমি পতিত না রেখে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকেরা। এতে করে কৃষকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। 

কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধিতে জেলার ৫টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার মোট ২৫০০০ হাজার প্রান্তিক কৃষককে সরিষার বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলায় প্রচুর আগাম সরিষার চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতেও দেখা মেলে একই চিত্রের। মাঠের পর মাঠ সরিষা খেতে হলুদ ফুল এসেছে। যেন হলুদ কাপড়ের চাঁদর বিছানো হয়েছে দিগন্তজুড়ে। 

সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং চর ও ৭ নং চর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে অন্য চিত্র। এখানের অনেক কৃষক শীতকালীন সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য আগাম সরিষা চাষ করেছেন। সেই শাক বিক্রি করে আবার সরিষা উৎপাদনের জন্য নতুন করে বীজ বপন করছেন। 

শেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ৮হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে আগাম সরিষা চাষ হয়েছে। যার মোট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২হাজার মেট্রিকটন। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৪ মেট্রিকটন। শেরপুরে গত বছর ৮হাজার মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। এবার প্রায় ৪হাজার মেট্রিকটন উৎপাদন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং চর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আমি দেড় বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এর মধ্যে অর্ধেক জমি থেকে সরিষার শাক হিসেবে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। বাকিটুকা রেখেছি তেল বানানোর জন্য। 

কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের ইন্দিলপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর সরিষার দাম বাড়বে খবর পেয়ে আমরা সবাই বেশি পরিমান জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি দামও ভালো পাবো। 

নকলা উপজেরার চন্দ্রকোনা এলাকার কৃষক রহিম মিয়া বলেন, ১ কেজি সরিষাতে মোট ৪০০ এমএল তেল তৈরি হয়। এছাড়াও আমাদের সরিষা ফুলের মধু দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে মধু চাষ করছে অনেকেই। আমাদের এলাকার প্রায় অর্ধেক লোক সরিষা চাষ করেছে। ফলন ভালো বলে আমরা একটু স্বস্তিতে আছি।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস বলেন, তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য দেশে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। তেল ফসলের মধ্যে সরিষা অন্যতম। সরকার আগামি দুই বছরের মধ্যে সয়াবিনের উপর ৪০% চাপ কমাতে এবং সয়াবিন তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে জন্য সরিষা চাষের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য স্বল্প মেয়াদি রোপা আমন ধানের চাষ করার পরামর্শ দিয়েছি। যার ফলে কৃষক দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে সরিষা আবাদ করতে পেরেছে। এবার শেরপুরে সরিষা চাষে একটা বিপ্লব হবে বলে আশা করছি। 

তারিকুল/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়