পেঁয়াজের ঝাঁজে কৃষকের হাসি
শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী || রাইজিংবিডি.কম
রাজবাড়ীতে মুড়িকাঁটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভাল থাকায় পেঁয়াজ—চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। পেঁয়াজের এমন দাম থাকলে জেলার চাষিরা খরচ উঠিয়ে অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তারা।
রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে হাজারো একর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন চাষিরা। এসব পেঁয়াজের উৎপাদনও বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। জমির উর্বরতা এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে সার, কীটনাশক—বিহীন উৎপাদিত পেঁয়াজ বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৭৫ মণ হয়েছে।
গোয়ালন্দ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করতে ৪০/৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তবে বর্ষার পানি পেলে সেই জমিতে উর্বরতা থাকে। তাই পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করতে ৩০/৩৫ হাজার টাকায় এক বিঘা জমিতে খরচ হয়। ফলনও অনেক ভাল হয়।
জেলার কৃষক হুমায়ুন আহম্মেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, পাঁচ একর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেছি। এর মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে লাগানোর পর ৩ একর পেঁয়াজ ডুবে যায়। পরবর্তীতে সেই জায়গায়ও আবার পেঁয়াজ লাগাতে হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক ভাল ফলন হয়েছে। প্রথমে পেঁয়াজের দাম ৭০০-৮০০ টাকা ছিল। এখন বাজারে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ। এভাবে দাম থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়া পেঁয়াজের লোকসান উঠিয়ে লাভবান হবো। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, কৃষক বাঁচাতে হলে অবশ্যই পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যের দাম বাড়াতে হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলার পেঁয়াজ—চাষি তৌফিক ও কৌশিক বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়েছি। ফলন বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৮০ মণ হচ্ছে। আবার বাজারে দাম ভাল। এভাবে দাম থাকলে আমাদের মত কৃষক আরও উৎসাহ পাবে। কিন্তু দাম কমে গেলে কৃষকের লোকসান গুনতে হবে।
পেঁয়াজ—চাষি মালেক বেপারী বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ অনেক ভাল হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৭০-৮০ মণ পেঁয়াজ হয়েছে। বাজারে এমন দাম থাকলে কৃষক অনেক লাভবান হবে। সরকারের কাছে দাবি, কৃষক বাঁচাতে কিছু দিনের জন্যে হলেও ভারতের পেঁয়াজের এলসি বন্ধ রাখতে হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান জানান, জমির উর্বরতা ভাল এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গোয়ালন্দ উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ অনেক ভাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত মুড়িকাটার দামও অনেক ভাল। এভাবে দাম থাকলে কৃষকের মুখে হাসি থাকবে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার একর। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার একর। তবে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে, সঠিক বলা যাবে না। কারণ এখনও পর্যন্ত অনেক চাষি আবাদ করছেন।
তিনি বলেন, জেলার গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দি উপজেলায় বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং বালিয়াকান্দি উপজেলায় হালি পেঁয়াজ বেশি হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন অনেক ভাল হয়েছে। কৃষক বাজারে দামও বেশি পাচ্ছেন।
ঢাকা/এনএইচ