ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চলাচলের পথ নেই, অবরুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:২৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
চলাচলের পথ নেই, অবরুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

অন্যের জমির গেট দিয়ে চলাচল করতে হয় অবরুদ্ধ পরিবারটিকে

পঞ্চগড়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীর নিবাস পেয়েছেন এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। তবে বাড়ির চারপাশে রাস্তা বন্ধ হওয়ার কারণে চলাফেরার সমস্যায় রয়েছে পরিবারটি। 

পরিবারটির অভিযোগ- তারা অবরুদ্ধ হয়ে আছে। বীর নিবাসের সামনে আকতার হোসেন নামে এক ব্যক্তি এবং তার জামাতা আরিফ হোসেন নিজেদের জায়গা দাবি করে বালুর স্তুপ করে রেখেছেন, গড়ে তুলেছেন দেয়াল।

ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহা নূর আহম্মদ বীর নিবাসে। এ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পরিবারটি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহার বড় ছেলে সালাউদ্দিন বাবু তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন ওই বীর নিবাসে। কিন্তু তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। বীর নিবাসের সামনে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইটের দেওয়াল তুলেছেন আকতার হোসেন। এরপর বালু ভরাট করে জায়গাটি উচু করা হয়। ফলে দেয়ালের ছোট দরজা দিয়ে বের হতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

বীর নিবাসে বসবাসরত সালাউদ্দিন বাবু বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমরা পাঁচ শতক জমির উপর এই বাড়িতে বসবাস করছি। কোনো কারণ ছাড়াই আমার পরিবারের উপর পূর্ব থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছে একটি চক্র। চলতি বছরে আমার বাবার নামে বীর নিবাস হওয়ার পর থেকে তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।’  

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা এ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। সরকার আমার বাবাকে বীর নিবাস করে দিয়েছেন। কিন্ত আমাদের মনে হয় বীর নিবাসে থাকা হবে না। বীর নিবাস থেকে বের হতে পারছি না। বাড়ির সামনে বালুর স্তুপ। বার বার অঙ্গীকার সত্বেও চলাচলের রাস্তা পাচ্ছি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০০৩ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহা কালিয়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন তখন থেকে। গত ২০১৮ সালে আবু জোহা মারা যায়। মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে সালাউদ্দিন বাবু সেই বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছিল। 

এদিকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, সালাউদ্দিন বাবু বীর নিবাসের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরে আবেদন করলে সরকার মুক্তিযোদ্ধার ওই বাড়িটি বীর নিবাসের জন্য মঞ্জুর করেন। প্রথমে হুমকি, এরপর বাড়ির সামনে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা।

এ নিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে চলতি বছরের মার্চ মাসে লিখিত অভিযোগ করা হয়। গত ১০ মার্চ দুই পক্ষকে উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে আকতার হোসেন ও তার পরিবার বীর নিবাসের সামনে রাস্তার জন্য জায়গা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু পরে বীর নিবাসের সামনে আর জায়গা ছেড়ে দেননি।

অভিযুক্ত আরিফ হোসেন বলেন, ‘চার/পাঁচ বছর পূর্বে আমার শ্বশুর আমাকে ১৬ শতক জমি লিখে দিয়েছেন। আমাদের জমিতে আমরা দেয়াল তুলেছি। আমরা গলির মতো রাস্তা করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত তারা উল্টো আমাদের হুমকি দেয়। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে আমাদের জায়গা দখল করে রাস্তা বানাতে চায়।’ 

অভিযুক্ত আকতার হোসেন বলেন, ‘সালাউদ্দিন বাবু আমাদের আত্মীয়। বীর নিবাস থেকে তাদের চলাফেরায় অসুবিধার কথা আমাদের না জানিয়ে উল্টো বার বার হুমকি দেয়। এ কারণে এই সমস্যা সমাধান হয়নি।’ 

কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মোমিন বলেন, আসলে মুক্তিযোদ্ধার ওই পরিবারের চলাচল সমস্যার দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। তাছাড়াও দেশের প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা দেওয়া বেআইনি। যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাস, সেজন্য তাদের চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতেই হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও আকতার হোসেনের পরিবার জেদাজেদি পর্যায়ে গেছে। কোনো পক্ষই ছাড় দিতে নারাজ। যদি দুই পক্ষই আমার কাছে সমাধানের জন্য আসে তাহলে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেবো।
 

নাঈম/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়