ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আমদানি-রপ্তানি কমছে বিবির বাজার স্থলবন্দরে 

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৬ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১২:৫৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৩
আমদানি-রপ্তানি কমছে বিবির বাজার স্থলবন্দরে 

বিবির বাজার স্থলবন্দর

কুমিল্লার বিবির বাজার স্থলবন্দরে করোনার পর থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি নেই বললেই চলে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ায় বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে নামমাত্র গুটি কয়েক পণ্য আমদানি হচ্ছে ভারত থেকে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

বিবির বাজারের এই বন্দরটি দেশের ১৩তম স্থলবন্দর। ১৯৯৫ সালে কার্যক্রম শুরু হওয়া এ বন্দরটি এখন পর্যন্ত পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে মাইলফলক স্পর্শ করতে পারছে না। 

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বন্দর দিয়ে সামান্য কিছু নির্মাণ সামগ্রী ভারতে রপ্তানি করা হলেও আমদানি একেবারে নেই বললেই চলে। শীতের মৌসুমে মশলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে শুধু জিরা আমদানি হচ্ছে এই বন্দর দিয়ে। যার রাজস্ব খুবই সামান্য। এছাড়া কয়েকটি চক্র উন্নতমানের অনেক পণ্য চোরাই পথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৯ টাকার পণ্য। রপ্তানি হয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৪ টাকার পণ্য। বাংলাদেশ থেকে এই বন্দর দিয়ে অনেক পণ্য রপ্তানি করা হলেও ভারত থেকে আমদানির জন্য মাত্র ২৪টি পণ্যের বিধান রয়েছে। 

বিবি বাজার বন্দর দিয়ে সিমেন্ট, কয়লা, ঢেউটিন, সিমেন্ট শিট, গুঁড়া পাথর, পিভিসি কম্পাউন্ড, প্লাস্টিকের দরজা, ইট ভাঙার মেশিন, ধান মাড়াই কল ও কোমল পানীয়সহ কেবলসহ ১৫-২০টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ডলার সংকটের কারণে বিদেশে আমদানি রপ্তানি কমে গেছে অনেকটাই। তাই বন্দর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ভারত সরকারের সহযোগিতাসহ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে বন্দরটির উন্নতি সম্ভব হবে। 

বিবির বাজারের স্থল বন্দরের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগতলার শ্রীমন্তপুর। যা রপ্তানি ও আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এখান দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে আন্তঃদেশিয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। 

বিবির বাজার স্থলবন্দর সূত্র মতে, সিমেন্ট, কয়লা, ঢেউটিন, সিমেন্ট শিট, গুঁড়া পাথর, পিভিসি কম্পাউন্ড, প্লাস্টিকের দরজাসহ ১৫-২০টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে এই বন্দর দিয়ে। দেশের বড় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে বন্দরটি চাঙা হয়ে উঠবে। 

কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, ‘বন্দরটি সঠিকভাবে পরিচালনা না করার কারণে আজ এই অবস্থা ।এক সময় এই বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে ৬-৮ হাজার টন পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি করা হতো। এই বন্দর দিয়ে যদি ভারতে ইট রপ্তানি করা যেতো তাহলে অনেকটাই সংকট কেটে যেতো।'

কুমিল্লা নগরীর চকবাজার এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুকতা ট্রেডার্সের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এলসি করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। গত ছয় মাসের ভারত থেকে আমরা কোনো ধরনের পণ্য আমদানি করতে পারিনি।’

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্রেস সিমেন্ট কোম্পানি কুমিল্লা ডিলার মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিবির বাজার দিয়ে মূলত আমরা  সিমেন্ট, বালু ও কয়লা রপ্তানি করি। স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ২ হাজার টন পণ্য এ বন্দর দিয়ে ভারতে যেতো। বৈশ্বিক বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিমেট ও কয়লা তাদের দেশে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।’

বিবির বাজার স্থলবন্দর ইনচার্জ ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘করোনার সময় থেকে আগের মতো বাণিজ্যের হার তেমন বাড়েনি। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ফলে এই স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি অনেকটাই কমে গেছে।’

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়