ঢাকা     রোববার   ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ||  অগ্রহায়ণ ২৫ ১৪৩০

মামলার ঘানি টেনে ২ যুগ পার, ‘নতুন জীবন’ পেলেন বৃদ্ধ দরছ মিয়া

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৯:৪৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

কৃষক দরছ মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে। বয়স যখন ৬২ বছর, তখন প্রতিবেশী এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। শুরু হয় কষ্টের পথচলা। তবে, হাল ছাড়েননি দরছ মিয়া। ন্যায়বিচারের আশায় আইনি লড়াই চালিয়ে যান। দীর্ঘ দুই যুগ মামলা চালাতে প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। অবশেষে ওই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন দরছ মিয়া।

নিজ বাড়িতে বসে দরছ মিয়া রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলা চালাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গেছি। একসময় মনে হতো, মিথ্যা অপবাদ নিয়েই হয়ত আমাকে মরতে হবে। এতদিন পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে ছোট হয়ে ছিলাম। নাতি-নাতনিরা সব সময় জানতে চাইত, কী মামলায় হবিগঞ্জ আদালতে আসা-যাওয়া করছেন? এর উত্তর দিতে পারতাম না। এখন মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেয়েছি।

তিনি বলেন, মামলার বাদীর স্বামীর সঙ্গে আগে থেকে নানা বিষয়ে আমার বিরোধ ছিল। আমাকে ফাঁসানোর জন্যই সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞ বিচারকের সঠিক রায়ে আমি মুক্তি পেয়ে আনন্দিত।

দরছ মিয়ার ছেলে আব্দুর রব বলেন, মামলা চালাতে গিয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রায় নিঃস্ব। বাবার জীবন থেকে অনেকগুলো দিন হারিয়ে গেছে। এসব আর ফিরে পাওয়ার নয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ১৮ জুলাই হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী (তখন বয়স ছিল ২৭) আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় দরছ মিয়া, তার খালাতো ভাই একই উপজেলার মন্ডলকাঁপন গ্রামের বুলু মিয়া ও চকমন্ডল গ্রামের ইমান উল্লাহকে আসামি করা হয়।

মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, রাতে তিনি টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলে তিন আসামি তাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। মামলায় অপর দুই আসামি শুরু থেকে পলাতক থাকলেও দরছ মিয়া আইনি লড়াই করেন প্রায় ২৪ বছর ধরে। দরছ মিয়ার পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে। পরিবারে আরও আছে ২৫ জন নাতি-নাতনি।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক সুদীপ্ত দাস এ মামলা থেকে দরছ মিয়াকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন। বাকি দুই আসামিও খালাস পেয়েছেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাসুম মোল্লা বলেন, এ মামলায় শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বাদীপক্ষের ১২ সাক্ষীর কেউ সাক্ষ্য দেননি। দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত দরছ মিয়াসহ তিনজনকেই এ মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল হাসান বলেন, ২০০১ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। মামলা চলমান অবস্থায় দুই বছর আগে আসামি বুলু মিয়া মারা যান।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়