ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পাকিস্তানের নাগরিক ভাবি-ভ্রাতুষ্পুত্রদের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
পাকিস্তানের নাগরিক ভাবি-ভ্রাতুষ্পুত্রদের বিরুদ্ধে মামলা

খুলনায় বড় ভাই খান মোশাররফ হোসেনকে ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন ইটালি প্রবাসী ছোট (সেজ) ভাই আইনুল খান। করোনায় বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর এখন মোটা অংকের ওই ঋণের অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করছেন মৃত ভাইয়ের পাকিস্তানের নাগরিক স্ত্রী ও পুত্ররা। আলোচিত এ ঘটনা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া দক্ষিণ পাড়া এলাকার। তারা ওই এলাকার মৃত খান আব্বাস আলীর পুত্র।

এ ঘটনায় ইটালি থেকে ফিরে এসে বড় ভাইয়ের কাছে তার সঞ্চিত অর্থ তার ওয়ারিশদের কাছ থেকে না পেয়ে তিনি নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের নাগরিক ভাবি ও দুই ভ্রাতুষ্পুত্রের বিরুদ্ধে খুলনার আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন। আগামী ২১ মার্চ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। বিষয়টি রোববার (০৫ ফেব্রুয়ারি) নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোকাররম হোসেন। 

আরো পড়ুন:

বড় ভাই খান মোশাররফ হোসেন মৃত্যুর আগে চাকরিসূত্রে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থানকালীন সেখানে বিবাহ করলে তার দুই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যারা বর্তমানে বাংলাদেশে এসে খুলনায় অবস্থান করছেন। আর ইটালি প্রবাসী ভাই আইনুল খানও খুলনায় অবস্থান করছেন। তারা পাকিস্তানি নাগরিক হলেও স্থানীয় ৩নং দিঘলিয়া ইউনিয়ন থেকে ওয়ারেশ কায়েম সনদ গ্রহণ এবং জন্ম নিবন্ধন তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনুল খান।

মামলায় বড় ভাই মৃত খান মোশাররফ হোসেনের দুই ছেলে পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুস সবুর খান ও ওজেফা আব্বাস খান এবং তার প্রথম স্ত্রী ফারহাদ মোশাররফকে বিবাদী করা হয়েছে। যাদের বাড়ি পাকিস্তানের করাচিতে।  

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, বাদী এবং তার বড় ভাই খান মোশাররফ হোসেন জীবিকার তাগিদে পাকিস্তানে গমন করেন। খান মোশাররফ হোসেন ১৯৮০ সালে পাকিস্তানে গমন করেন এবং বাদী ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানে গমন করেন। সেখানে বাদী এবং তার ভাই চাকরি করতেন। খান মোশাররফ হোসেন চাকরি ছেড়ে লন্ডনে যাওয়ার জন্য ভিসাপ্রাপ্ত হন। তারপর তিনি বাদীর নিকট আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন। তখন বাদী প্রথমে পাকিস্তানে বসে ২০০১ সালে তার ছোট বোনের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯০ হাজার রুপি প্রদান করেন। এরপর খান মোশাররফ হোসেন ইংল্যান্ডে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় লোকসান হলে পুনরায় বাদীর কাছে আর্থিক সহযোগিতর জন্য বলেন। বাদী তখন ইটালিতে অবস্থান করতেন।  বাদী ব্যাংকের মাধ্যমে বোন নিলুফা ইয়াসমিনের নামে পর্যায়ক্রমে ৬৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। উক্ত টাকা খান মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশে এসে বোন নিলুফা ইয়াসমিনের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বড় ভাই খান মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালে গোপনে বাংলাদেশে এসে ৭০ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করেন। বাদী এ খবর পেয়ে তার পাওনা টাকা দাবি করেন। তখন টাকার বিনিময়ে তিনি বাদীকে তার জমি বাদীর নামে হস্তান্তর করার অঙ্গীকার করে লন্ডনে চলে যান।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে ২০২০ সালে তার বড় ভাই বাংলাদেশে আসলে তিনি পাওনা টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তার জমি লিখে দেবেন বলে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার চুক্তি করেন। এমতাবস্থায় ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুলনা নগরীর আড়ংঘাটায় বোন নিলুফা ইয়াসমিনের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। এ খবর পেয়ে পাকিস্তান থেকে তার দুই পুত্র খুলনায় আসেন।

পরবর্তীতে বাদী বিবাদীদের নিকট খান মোশাররফ হোসেনের লিখিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী তফসিল বর্ণিত জমি দলিল করে দিতে বললে বিবাদীরা বাদীকে জানান, তারা পিতার ঋণের কোন দায় নিবেন না এবং বাদীকে কোনো টাকা বা জমি রেজিস্ট্রি করে দেবেন না।

বাদী আইনুল খান অভিযোগ করেন, তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই পুত্র বাংলাদেশি না, এরা পাকিস্তানি। এরা সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন কার্ড বানিয়েছে। বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ড বানানোর জন্যও আবেদন করেছে।

তিনি আরও বলেন, তার বড় ভাই বাংলাদেশি ছিলেন। তিনি পাকিস্তানে বিবাহ করেছিলেন। তারপর তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডনে চলে যান এবং সেখানে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হন। তখন তিনি ছোট বোনের মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা ধার নেন। পরবর্তীতে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তিনি তাকে স্টাম্পে লিখিত দেন যে, আমি যদি এই টাকা পরিশোধ করতে না পারি তাহলে জমি লিখে দেওয়া হবে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর স্ত্রী-সন্তানরা অস্বীকার করছেন। এ কারণে তিনি আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার ন্যায়বিচার আশা করছেন।
 

নুরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়