ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

টমেটো চাষে লাভবান মামা-ভাগ্নে

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৫ মার্চ ২০২৩  
টমেটো চাষে লাভবান মামা-ভাগ্নে

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম সাজল (মামা) ও মো. এনামুল হক এনাম (ভাগ্নে)। তারা প্রতিবেশীর কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন প্রায় ১০০ শতক জমি। এরমধ্যে এ মৌসুমে প্রায় ৬০ শতক জমিতে নতুন জাতের টমেটো চাষ করেছেন তারা। বাম্পার ফলন হওয়া মামা-ভাগ্নে এবার দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রির আশা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার টমেটো চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাইফুল ও এনামুল। এজন্য তারা উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের মাধ্যমে বগুড়া থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বাহুবলী টমেটো গাছের চারা সংগ্রহ করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে টমেটো গাছের চারা রোপণের পরে তারা গাছগুলো কঠোরভাবে পরিচর্যার কাজ শুরু করেন। রোপণের প্রায় ৭০দিনে গাছে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। আর ৯০ দিন পর গাছের টমেটোগুলো খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে। সেই থেকে তারা প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ক্ষেত থেকে টমেটো উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি কছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেত থেকে সাইফুল ও এনামুল শ্রমিক নিয়ে টমেটো সংগ্রহ করছেন। গাছ থেকে টমেটো তুলে প্লাস্টিকের ক্যারেটে রাখা হচ্ছে। ক্ষেত থেকে তোলা টমেটো ১০টি প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভর্তি করা হয়। প্রতিটি ক্যারেটে ২০ কেজি করে টমেটো ছিলো। সে হিসেবে প্রায় ২০০ কেজি পর্যন্ত টমেটো পান তারা।

সাইফুল ইসলাম সাজল বলেন, ‘দুবাই ও ওমানে কয়েক বছর কাজ করেছি। তেমন আয় করতে পারেননি। করোনার আগে দেশে আসি। আর প্রবাসে যাওয়া হয়নি। মুদি মালের দোকান দিয়েছিলাম, কিন্তু সফলতা আসছিল না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করার। সঙ্গে ভাগ্নে এনামুলকেও যুক্ত করি। পরে প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্রায় ১ একর জমি লিজ করি এবং কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম থেকে পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করি টমেটোর।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাহুবলী টমেটো আবাদে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। আর পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে টমেটো ক্ষেত বাঁচাতে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেছি। ৬০ শতক জমিতে টমেটো চাষে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ক্ষেত থেকে চলতি মার্চ ও আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করতে পারবো। এতে প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মতো আয় হওয়ার আশা রয়েছে।’

মো. এনামুল হক এনাম বলেন, ‘মামা-ভাগ্নে একসঙ্গে থাকলে আপদ বিপদ থাকে না। একসঙ্গে মিলে টমেটোর চাষ করায় ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি দুইজনই আর্থিকভাবে লাভবান হবো। আমাদের সফলতা দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’

স্থানীয় কৃষক তৌহিদ মিয়া বলেন, ‘বিষমুক্ত টমেটো চাষে সাইফুল-এনামুল চমক দেখিয়েছেন। আমার জমিতেও বিভিন্ন ধরনের বারোমাসী ফসল চাষ করছি।’ 

দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, মনের ইচ্ছা আর শ্রম ও মেধা কাজে লাগালে সফলতা আসে। বাহুবলী জাতের টমেটো চাষ করে তার প্রমাণ দিলেন সাইফুল ও এনামুল। তারা কঠোর শ্রম দিচ্ছেন। আর আমি তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষেতে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বিক্রি চলছে তাদের উৎপাদিত টমেটোর। আশা করছি তারা আর্থিকভাবে ভালোই লাভবান হবেন।’  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করলে সফলতা আসে। এর প্রমাণ দিয়েছেন হাফিজপুর গ্রামের সাইফুল-এনামুল। মামা-ভাগ্নে মিলে জমি লিজ নিয়ে টমেটো চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। আমরা তাদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। শুধু তাদের নয়, উপজেলার অন্যান্য চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবজি ও ফসল চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। এতে টমেটোসহ নানা জাতের ফসলের ব্যাপক ফলন হচ্ছে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ