ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বধ্যভূমিতে হচ্ছে বহুতল ভবন, উদ্ধারে উদ্যোগ নেই

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২৭ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১২:১০, ২৭ মার্চ ২০২৩
বধ্যভূমিতে হচ্ছে বহুতল ভবন, উদ্ধারে উদ্যোগ নেই

বধ্যভূমির জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ভবন

লক্ষ্মীপুরে দখল হয়ে যাচ্ছে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে গড়ে উঠছে বহুতল ভবনসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এনিয়ে ক্ষুব্ধ মুক্তিযুদ্ধাসহ স্থানীয়রা। 

বধ্যভূমি দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দখলদাররাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে দ্রুত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতনমহল। 

আরো পড়ুন:

এদিকে, পর্যায়ক্রমে জেলার সবগুলো বধ্যভূমি সংস্কার করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার এমইউ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের জায়গায়তে হত্যার পর গণকবর দেওয়া হয়েছিল অন্তত ১০০ জন মানুষকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের গাফিলতিতে এই বধ্যভূমিতে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। নতুন করে স্থাপনা নির্মাণেরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। 

এদিকে যারা ভবন নির্মাণ করছেন তাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জমির মালিক তাদের কাছে বধ্যভূমির জমিটি বিক্রি করে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা। সদর উপজেলার বাগবাড়ীর আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের কয়েক হাজার নিরীহ মানুষকে সারের গুদামে টর্চার সেলে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। পরে মারা যাওয়াদের লাশ ফেলে দেওয়া হতো মাদাম ব্রিজের পাশের একটি কূপে। শহরের সেই বধ্যভূমি এখন গো আর ঘোড়ার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। 

এছাড়া রামগতি ও রায়পুরের বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় গণহত্যা। এরকম অনেক বধ্যভূমি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অনেকগুলো চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মফিজুল ইসলাম মামুন ও হুমায়ূন কবির বিপ্লব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার এতো বছরেও বীর শহিদদের সম্মান জানানো হচ্ছে না। জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বধ্যভূমির জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। জমিও অধিগ্রহণ করছে না তারা।

রামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সালেহ আহম্মেদ পাটওয়ারী ও মুক্তিযোদ্ধা মানিক মাল জানান, রামগঞ্জের এমইউ হাইস্কুলের উত্তর পাশে সেনের বাড়ি পুকুরে শহিদ কালামিয়াসহ অন্তত শতাধিক মানুষকে হত্যার পর ফেলে রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। ওই স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য বলা হলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে তা আর হয়নি। অথচ ৭১ সালে রামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষকে হত্যার পর লাশ সেনের বাড়ির পুকুরে ফেলে রেখেছিল পাকিস্তানিরা। এছাড়া ওয়াবদা চোরাস্তা মোড়েও বধ্যভূমি রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখনো পর্যন্ত তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দ্রুত সেনের বাড়িসহ ব্যক্তিমালিকানা বধ্যভূমিগুলো অধিগ্রহণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থাপনা নির্মাণকারীরা জানান, সরকার স্বাধীনতার পর থেকে জমি অধিগ্রহণ করবে বলে আর করেনি। তাই জমির মালিক বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন বসবাসের এমইউ হাইস্কুলের পাশের বধ্যভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই জমিতে তিনতলা বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে। 

এদিকে বধ্যভূমির জায়গাতে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা মীরার কার্যালয়ে যান সাংবাদিকরা। এসময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই কার্যালয় ত্যাগ করেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলা শহরের বাগবাড়ী গণকবর, বাসুবাজার বধ্যভূমি, পিয়ারাপুর ব্রিজ বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে ৯ মাসে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ২১টি সম্মুখযুদ্ধ হয় লক্ষ্মীপুরে। এছাড়া প্রায় ৯০টি অভিযানে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়