ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

লবণের দাম বাড়ায় বিপাকে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

এম এম আরিফুল ইসলাম, নাটোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ৫ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ১৯:১১, ৫ জুলাই ২০২৩
লবণের দাম বাড়ায় বিপাকে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

ঈদুল আজহার দিন থেকে নাটোরের আড়তগুলোতে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া আসতে শুরু করেছে। তবে, এ বছর চামড়ার দাম কম হলেও লবণের দাম দ্বিগুণ। ফলে চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেশি পড়ায় আর্থিকভাবে লোকসানের শঙ্কায় আছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে নাটোর স্টেশন বাজার সংলগ্ন কাঁচা চামড়ার মোকাম হিসেবে খ্যাত চকবৈদ্যনাথ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মোকামে চামড়া আসতে শুরু করেছে। চামড়ার সংরক্ষণের জন্য লবণজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। এছাড়া, রাজশাহী এবং আশেপাশের জেলা থেকে নাটোরের এই মোকামে লবণযুক্ত কিছু চামড়াও আসতে দেখা গেছে।

নাটোরের এই মোকামে প্রায় দেড় শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে। এসব আড়তের মালিকেরা সাড়ে ৫০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত দামে কোরবানি পশুর চামড়া ক্রয় করছেন। এছাড়া ছাগল-বকরির চামড়া বিক্রি হয়েছে আড়তে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। আর লবণযুক্ত চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। 

চামড়া ক্রেতাদের দাম নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও বিক্রেতারা বলেছেন, অল্প দামে কেনা-বেচা হয়েছে কোরবারির পশুর চামড়া।

রাজশাহী মোহানপুর এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন বলেন, সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই বেশি দামে কিনেও চামড়া বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব না। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের উপরে টার্গেট করে পশুর চামড়া কিনতে হচ্ছে।

এই ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ গরুর চামড়া কিনেছেন ১ হাজার টাকায়। আর সর্বনিম্ন ৫০০ টাকায়। এছাড়া ছাগলের চামড়া কিনেছেন ৩০ টাকায়। বকরির চামড়া কিনেছেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ ও আড়তদারেরা জানান, গত দুই মৌসুমে নগদে বেচাকেনা হলেও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনো বকেয়া প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। তারপরও ধারদেনা করে চামড়া কিনতে প্রস্তুত পুঁজি হারানো অনেকেই। তবে শেষ সময়ে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান অনুষঙ্গ লবণের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা।

নাটোর শহরের মো. আতিকুর রহমান বলেন, ৫ থেকে ৭ বছর আগেও ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনে তারা ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করতেন। চামড়ার সেই সুদিন এখন আর নেই। এখন চামড়া কিনতে হয় ভয়ে ভয়ে, যদি বিক্রি না করতে পারি। 

চামড়ার আড়তদার রকিব হাসান কমল বলেন, আশপাশের জেলা থেকে চামড়া আসতে শুরু করেছে ।ঢাকার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। চামড়া বেচাকেনা শুরু হবে আগামী শুক্রবার হাট থেকে।

স্থানীয় আড়তদার নরুল ইসলাম নরু বলেন, শ্রমিকের মজুরি ও লবণের দাম বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তাদের চামড়ার দাম অনেক বেশি পড়েছে। চামড়া থেকে লবণের দাম বেশি। ছোট চামড়ায় ৫ কেজি ও বড় চামড়ায় ১০ কেজি লবণ লাগে। লবণের এতো দাম হয়েছে যে চামড়া বাঁচানো দায় হয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী নবী উল্লা বলেন, লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে এ বছর চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। গত বছর লবনের দর ছিল ৭০০-৭৫০, এবার চলছে ১২০০-১২৫০ টাকা।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হবে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি জন্য। গত দুই বছর ট্যানারি মালিকরা নাটোর থেকে নগদ টাকায় চামড়া কেনায় চলতি বছর ৮ লাখ পিস গরু ও ১০ লাখ পিস ছাগলের চামড়া নাটোরে সরবরাহ হবে। 

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান মকসেদ আলী বলেন, এবার আশা করছি ৫ থেকে ৬ লাখ গরুর চামড়া এবং ৮-১০ লাখ ছাগলের চামড়া আমদানি হবে। লবণ দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের।

এদিকে, চামড়া পাচার রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে প্রশাসন। 

নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁইয়া বলেন, চামড়া পাচারের বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়