ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভাওয়াল রাজবাগান হারাচ্ছে জৌলুশ, জমেছে মাদকের আড্ডা

রেজাউল করিম, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২১, ৭ জুলাই ২০২৩  
ভাওয়াল রাজবাগান হারাচ্ছে জৌলুশ, জমেছে মাদকের আড্ডা

সঠিক তদারকি পেলে বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে ভাওয়াল রাজবাগান

গাজীপুর শহর থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে নোয়াগাঁও এলাকায় ১৯ দশমিক শূন্য ৭ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত রাজবাগান। ভাওয়াল জমিদার কালীনারায়ণ রায় বিনোদনের জন্য এই বাগানটি গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে শহরের মধ্যে বিশাল এই রাজবাগান জৌলুস হারিয়ে এখন নামেই টিকে আছে। এখানে এখন নিয়মিত চলে মাদকের আড্ডা। অথচ যথাযথ দেখভাল করলে এটিকে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হতো বলে মনে করেন স্থানীয়রা। 

বাগানটি দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এই তিন দিকে জলাশয় বেষ্টিত। এখানে বর্ষাকালে তৈরি হয় চমৎকার নৈসর্গিক পরিবেশ। কোলাহলমুক্ত শান্তি পরিবেশ থাকে শীতের সময়। কখনো কখনো বাগানটি মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কিচির-মিচির শব্দে। তখন মনে হয় তা পাখির বাগান। 

আরো পড়ুন:

রাজবাগানের এখন যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা যদি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা না হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মানুষরা। 

স্থানীয়দের দাবি, শহরের মধ্যেই বিশাল এই রাজবাগানটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ রাজবাগানটি ঘিরে জাদুঘর ও শিশু বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুললে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে একটি ধারণা পেতেন। পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের সুযোগ পেত এই রাজবাগান থেকে।

ভাওয়াল রাজ এস্টেট সূত্র জানায়, জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ ও কোনো উত্তরাধিকার না থাকায় ভাওয়াল রাজার সব সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব পায় ভূমি সংস্কার বোর্ড। একজন ম্যানেজার নিয়োগ করে এ জমির ব্যবস্থাপনা চলছে দীর্ঘকাল ধরে। নোয়াগাঁও মৌজার এ রাজবাগানের জমির পরিমাণ ১৯ দশমিক শূন্য ৭ একর। এর মধ্যে একটি পুকুরও রয়েছে। চারপাশে দেশি-বিদেশি ফল ও বিপন্ন ওষুধি গাছের সমাহার ছিল এই বাগানে। একসময় বাগানটি ছিল সবার কাছে অন্যতম বিনোদনের কেন্দ্র। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সঠিক তদারকির অভাবে বাগান থেকে মূল্যবান ও বিপন্ন বৃক্ষ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে বাগানের সৌন্দর্যও। ১৯৯৭ সালের দিকে ভূমি সংস্কার বোর্ড বাগানটি অবৈধ দখলমুক্ত করে নিজেদের আয়ত্তে আনে। ২০০৭ সালের দিকে সরকার এটি ভাওয়াল রাজবাগান কাম পিকনিক স্পট হিসেবে গড়ে তুললেও পরিকল্পনার অভাবে তা বেশিদূর এগোয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে রাজবাগানের চারপাশে কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। বাগানের বেশ কিছু জমি অবৈধ দখলে চলে যাওয়ার উপক্রম। রাত হলেই ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় বাগানে। এই বাগানের ভেতর বসে মাদকের আড্ডা। নিরাপত্তাহীনতায় এখন আর লোকজন এখানে পিকনিক করতেও আসেন না। চারটি কটেজ থাকলেও সেগুলো জরাজীর্ণ। কটেজগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত গার্ডরা। 

সিকিউরিটি গার্ড শুভ বলেন, আমরা ৪ জন এখানে থাকি একটি কোয়াটারে। ৮ ঘণ্টা করে পালাক্রমে ডিউটি করি। আমরা এলএফজি নামে একটি সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে এখানে কাজ করছি। এখানে অনেক ফলের গাছ আছে, এসব ফল মানুষ চুরি করে নেয়। 

তিনি আরও বলেন, এই বাগানটিতে যারা নেশা করেন তারা বসেন। দিনে-রাতে সবসময় মাদকসেবীরা আসেন৷ মদ ও গাঁজা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করেন তারা। কয়েকটা গ্রুপ রয়েছে তারা এসে নেশাপানি খায়। অনেকসময় এসব গ্রুপের লোকজন মারামারি করে। কয়েকদিন আগে ভেতরে প্রবেশ নিয়ে ঝামেলা হলে চাইনিজ কুড়াল নিয়ে কোপাকুপি করছে মাদকসেবীরা। 

রাজবাগানের কেয়ারটেকার শফিক বলেন, এখানে মাদকের আড্ডা বসে। গেটের গার্ডরা প্রবেশ নিষেধ করলেও কেউ তাদের কথা শোনেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কয়েকবার সহযোগিতা চেয়েছি কিন্তু পাইনি৷ এখানে আর আমরা কি করতে পারি। 

রাজবাগানের ম্যানেজার আবদুল মান্নান বলেন, সীমানা প্রচীর না থাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা। আগে আনসার ছিল কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের রাখা যায়নি। এখন ৪ জন গার্ড কাজ করে। মাদকসেবীরা প্রধান ফটক ছাড়াও বিভিন্ন পাশ দিয়ে প্রবেশ করে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। 

মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়