ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অদম্য ইচ্ছায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন রহিমা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৩০ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ১৬:৪৬, ৩০ জুলাই ২০২৩
অদম্য ইচ্ছায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন রহিমা

রহিমা বেগম কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্মরত আছেন

পেশায় একজন ভাতাপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মোছা. রহিমা বেগম। গত কয়েক বছর ধরে মেয়ের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে আসা যাওয়ার সময় আবারো পড়াশোনার প্রতি উজ্জীবিত হন স্কুল জীবনে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা এই নারী। পরে লোক লজ্জা আর বয়সকে ভয় না করে শুরু করেন পড়ালেখা। অবশেষে অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন রহিমা।

কুড়িগ্রাম কাঁঠাল বাড়ি মহিউস সুন্না মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রহিমা বেগম।

আরো পড়ুন:

রহিমা বেগম কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্মরত আছেন। তার বাবার নাম মো. আছর উদ্দিন। স্বামী মো. আব্দুল জলিল সরকার মজনু। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খলিলগঞ্জ নাজিরা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে রহিমা বেগম জিপিএ-৩.৬০ পেয়ে দাখিল পাস করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রহিমা বেগম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর আর তিনি পড়ালেখা করতে পারেননি। তার সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে আছেন। রহিমা বেগমের ছেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের ঘরে এক ছেলে আছে। কয়েক বছর ধরে মেয়ের ছেলেকে নিয়ে স্কুল যাওয়া আসা করার সময় রহিমা বেগম আবারো পড়ালেখার প্রতি উজ্জীবিত হন। সবশেষে কুড়িগ্রাম কাঁঠাল বাড়ি মহিউস সুন্না মহিলা মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিলে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এ বয়সে পড়ালেখা করে দাখিল পাস করায় রহিমা বেগমের পরিবার-আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন তিনি।

রহিমা বেগম বলেন, ‘লোক লজ্জা আর বয়সের ভয় না করে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়তে পারিনি। দীর্ঘ বছর পর আবার পড়ালেখা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ এ বছর এসএসসি পাস করলাম। আমার পড়াশোনা করার ব্যাপারে আমার মেয়ে-ছেলে ও সহকর্মীরা উৎসাহ দিত। আমার ইচ্ছে আছে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার।’

রহিমা বেগমের মেয়ে মোছা. মজিদা আক্তার পপি বলেন, ‘মা এই বয়সে এসে সংসার ও চাকরি করে পরীক্ষায় পাস করবেন তা বুঝতে পারিনি। আমার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন কর্মচারী। তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে  মাদরাসায় পড়ালেখা করে দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। এবছর তিনি এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় অংশ নেন। রহিমা বেগম জিপিএ-৩.৬০ পেয়ে পরীক্ষায় ‍উন্নীত হয়েছেন। বয়স বা কোনো বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়ালেখা মধ্যপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া এমন নারী-পুরুষদের জন্য রহিমা একটি প্রেরণার উৎস। যে কোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

তিনি আরো বলেন, ‘কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন জানাই। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।’

বাদশাহ/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়